স্বাস্থ্যোজ্জ্বল ত্বক, ঝলমলে চুল এবং মজবুত নখ—এগুলো আমাদের শরীরের সুস্থতার বহিঃপ্রকাশ। ত্বক, চুল ও নখের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে খাদ্যাভ্যাস, ঘুমের গুরুত্ব এবং কিছু ঘরোয়া ও চিকিৎসা-সংক্রান্ত উপায়ের বিষয়ে জানাচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা।
ত্বক শরীরের সবচেয়ে বড় অঙ্গ। আর ত্বক, চুল ও নখ—এগুলো সবই ইন্টিগুমেন্টারি সিস্টেমের অংশ। এদের মূল উপাদান হলো কেরাটিনোসাইট, যা এক ধরনের কোষ যা কেরাটিন তৈরি করে। কেরাটিন ত্বক, চুল ও নখকে শক্ত ও জলরোধী করে তোলে।
পুষ্টির অভাব হলে ত্বক, চুল ও নখের বিভিন্ন সমস্যা দেখা দিতে পারে। ভিটামিন ও খনিজ উপাদানের অভাব এক্ষেত্রে প্রধান কারণ। উদাহরণস্বরূপ, ভিটামিন এ, ভিটামিন সি, ভিটামিন ডি, বায়োটিন, আয়রন এবং জিঙ্কের অভাবে ত্বক, চুল ও নখের স্বাস্থ্যহানি হতে পারে। একটি গবেষণায় দেখা গেছে, বিভিন্ন ধরনের পুষ্টির অভাবে চুল পড়ার সমস্যা বাড়ে।
চিকিৎসক ও প্লাস্টিক সার্জন ড. আমির সাদরি ব্যাখ্যা করেন, “ত্বকের স্তরগুলি রক্তনালীর সাথে যুক্ত থাকে। চুলের ফলিকল ও শিকড়ও পুষ্টির জন্য রক্তের ওপর নির্ভরশীল। তাই শরীরে পুষ্টির অভাব হলে ত্বক ও চুলেই প্রথমে তার প্রভাব দেখা যায়।” চুল ও নখ উভয়ই কেরাটিন দিয়ে তৈরি হওয়ায় চুলের স্বাস্থ্যের ওপর প্রভাব পড়লে নখের স্বাস্থ্যও ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।
স্বাস্থ্যকর ত্বক, চুল ও নখের জন্য সঠিক খাদ্যাভ্যাস খুবই জরুরি। খাদ্যতালিকায় প্রচুর পরিমাণে রঙিন ফল ও সবজি রাখা উচিত। প্রোটিন ও আয়রন গ্রহণ করাটাও এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ। নতুন কোষ তৈরি করতে প্রোটিন সাহায্য করে। আয়রন আমাদের ইন্টিগুমেন্টারি সিস্টেমের জন্য প্রয়োজনীয় একটি উপাদান, যা মাংস, ডিম, এবং কলিজা জাতীয় খাবারে পাওয়া যায়। নিরামিষভোজীরা ডাল, যেমন—মসুর ডাল, মুগ ডাল, মটরশুঁটি, ছোলা ইত্যাদি খাদ্যতালিকায় যোগ করতে পারেন। তবে, আয়রন সাপ্লিমেন্ট গ্রহণ করার আগে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। কারণ, এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াও থাকতে পারে।
অতিরিক্ত চিনি ও ফ্যাটযুক্ত খাবার, সেইসাথে অ্যালকোহল সেবন ত্বকের জন্য ক্ষতিকর। অতিরিক্ত অ্যালকোহল সেবনে চুল শুষ্ক ও দুর্বল হয়ে যেতে পারে, এমনকি অতিরিক্ত চুল পড়ারও সম্ভাবনা থাকে। অতিরিক্ত চিনি কোলাজেন ও ইলাস্টিনের ক্ষতি করে, যার ফলে ত্বক তারুণ্য হারায় এবং বলিরেখা দেখা দেয়।
ঘুম আমাদের ত্বক, চুল ও নখের স্বাস্থ্যের ওপর সরাসরি প্রভাব ফেলে। ঘুমের সময় শরীর পুনরুদ্ধার হয়। ঘুমের প্রথম কয়েক ঘন্টায় কোলাজেন উৎপাদন বাড়ে। অপর্যাপ্ত ঘুম স্ট্রেস হরমোন কর্টিসলের মাত্রা বাড়ায়, যা শরীরের স্বাভাবিক মেরামত প্রক্রিয়াকে ব্যাহত করে। এর ফলে নখ ভঙ্গুর হয়ে যেতে পারে, ত্বকে প্রদাহ দেখা দিতে পারে এবং চুলের বৃদ্ধিতে সমস্যা হতে পারে। প্রাপ্তবয়স্কদের প্রতিদিন কমপক্ষে ৭ ঘণ্টা ঘুমানো উচিত।
ত্বক, চুল ও নখের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে কিছু ঘরোয়া চিকিৎসা ও বিউটি পার্লারে উপলব্ধ চিকিৎসা পদ্ধতিও বেশ কার্যকর।
ত্বকের যত্নে:
- ত্বকের জন্য উপযুক্ত ফেসওয়াশ দিয়ে দিনে দুবার মুখ পরিষ্কার করুন এবং হালকা গরম জল দিয়ে ধুয়ে নিন। এরপর নরম তোয়ালে দিয়ে আলতো করে ত্বক মুছে নিন।
- ত্বকের ধরন অনুযায়ী ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করুন।
- ত্বকের যত্নে সানস্ক্রিন ব্যবহার করা খুবই জরুরি। আবহাওয়া যাই হোক না কেন, প্রতিদিন একটি তেল-মুক্ত সানস্ক্রিন ব্যবহার করা উচিত।
- ত্বকের টেক্সচার উন্নত করতে এবং অসম স্কিন টোন কমাতে রেটিনল ব্যবহার করতে পারেন।
- ব্রণ প্রবণ ত্বকের জন্য তেলযুক্ত পণ্য ব্যবহার করা এড়িয়ে যাওয়া উচিত।
চুলের যত্নে:
- চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী অ্যান্টি-ফাঙ্গাল উপাদানযুক্ত শ্যাম্পু ব্যবহার করতে পারেন।
- চুলের ফলিকলকে স্বাস্থ্যকর রাখতে এবং চুলকে পুষ্টি যোগাতে প্রয়োজনীয় উপাদান আছে এমন পণ্য ব্যবহার করা উচিত।
- শ্যাম্পু করার সময় সালফেটযুক্ত শ্যাম্পু ব্যবহার করা এড়িয়ে চলুন।
নখের যত্নে:
- নখের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে নেইল পলিশ ব্যবহারের মাঝে বিরতি দিন।
- কিউটিকল তেল ব্যবহার করুন।
এছাড়াও, বিউটি পার্লারে কিছু চিকিৎসা রয়েছে, যা ত্বক, চুল ও নখের স্বাস্থ্য উন্নত করতে সাহায্য করে:
- চুলের জন্য কেরাটিন ট্রিটমেন্ট চুলের ভাঙন, তাপের ক্ষতি এবং ফ্রিজিনেস কমাতে সাহায্য করে।
- ত্বকের তারুণ্য ধরে রাখতে মাইক্রোনিডলিং একটি কার্যকরী পদ্ধতি।
- নখের জন্য নিয়মিত ম্যানিকিউর ও ভালো মানের পেডিকিউর করানো যেতে পারে।
ত্বক, চুল ও নখের বিভিন্ন সমস্যা হতে পারে। যেমন—ছত্রাক সংক্রমণ, ব্রণ, ত্বকের প্রদাহ ইত্যাদি। এই ধরনের কোনো সমস্যা হলে নতুন কোনো চিকিৎসা শুরু করার আগে অবশ্যই বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
সবশেষে, স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন, সুষম খাদ্য গ্রহণ এবং পর্যাপ্ত ঘুম ত্বক, চুল ও নখের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সহায়ক। ঝলমলে চুল, উজ্জ্বল ত্বক ও মজবুত নখ পেতে ঘরোয়া ও চিকিৎসা-সংক্রান্ত বিভিন্ন পদ্ধতি অনুসরণ করা যেতে পারে।
তথ্য সূত্র: হেলথলাইন