মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা সেন্ট্রাল ইন্টেলিজেন্স এজেন্সি (সিআইএ) মাদক পাচার চক্রগুলোর বিরুদ্ধে প্রাণঘাতী শক্তি ব্যবহারের ক্ষমতা পর্যালোচনা করছে। ট্রাম্প প্রশাসনের চাপে এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে, কারণ তারা মাদক চক্রগুলোকে দমনের জন্য সিআইএকে একটি প্রধান ভূমিকা দিতে চাইছে।
বিষয়টি সম্পর্কে অবগত একজন মার্কিন কর্মকর্তা এবং আরও তিনজন এই তথ্য জানিয়েছেন।
পর্যালোচনাটি এমন এক সময়ে হচ্ছে যখন মার্কিন সরকার মাদক পাচার চক্রগুলোর বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার কথা ভাবছে। তবে, এর অর্থ এই নয় যে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সরাসরি সিআইএকে মাদক চক্রগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন।
বরং, সংস্থাটি চাইছে তারা যেন বুঝতে পারে যে কোন ধরনের কার্যক্রম তারা আইনগতভাবে করতে পারে এবং এর সম্ভাব্য ঝুঁকিগুলো কী হতে পারে।
এই পর্যালোচনাটি মার্কিন কর্মকর্তাদের উদ্বেগের বিষয়টিও তুলে ধরেছে। তারা মনে করেন, সন্ত্রাস দমনের প্রচলিত কৌশলগুলো মাদক চক্রগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবহার করলে, মধ্যপ্রাচ্যের তুলনায় যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকদের হতাহত হওয়ার ঝুঁকি অনেক বেশি।
বিষয়টি নিয়ে সিআইএর আইনজীবীরা কাজ করছেন। তারা মূলত কোনো অভিযানে কোনো মার্কিন নাগরিকের অনিচ্ছাকৃতভাবে নিহত হওয়ার ঘটনা ঘটলে, সিআইএ এবং এর কর্মকর্তাদের দায়বদ্ধতা কতটুকু হবে, তা খতিয়ে দেখছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক মার্কিন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, সিআইএ কর্মকর্তারা “ঐতিহ্যগতভাবে সামরিক লক্ষ্যবস্তুর বিরুদ্ধে ব্যবহৃত হওয়া উপকরণগুলো মাদক চক্রের বিরুদ্ধে ব্যবহার করার ক্ষেত্রে সতর্ক”।
এই বছর, ট্রাম্প প্রশাসন বেশ কয়েকটি মাদক চক্রকে বিদেশি সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে তালিকাভুক্ত করেছে। কিছু মার্কিন কর্মকর্তা মনে করেন, প্রাণঘাতী ব্যবস্থা গ্রহণের প্রেক্ষাপট তৈরি করতেই এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
সিআইএ বর্তমানে মেক্সিকোর উপর নজরদারির জন্য সশস্ত্র ড্রোন ব্যবহার করছে।
সিআইএ বিষয়টি নিয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হয়নি।
হোয়াইট হাউস বা সিআইএ পরিচালক জন র্যাটক্লিফ এই পদক্ষেপের নির্দেশ দিয়েছেন কিনা, তা জানা যায়নি। তবে, ট্রাম্প প্রশাসনের পক্ষ থেকে মাদক চক্রগুলোর ওপর চাপ বাড়ানোর জন্য জাতীয় নিরাপত্তা সংস্থাগুলোকে যে সংকেত দেওয়া হয়েছে, তারই ফলস্বরূপ সিআইএ-র কর্মীরা আগে থেকেই একটি পরিকল্পনা তৈরি করে রাখছেন।
বিষয়টি নিয়ে পর্যালোচনা তৈরি করার অভিজ্ঞতাসম্পন্ন এক প্রাক্তন সিআইএ কর্মকর্তা বলেছেন, “যদি কোনো প্রশাসন আমাদের এমন কিছু করতে বাধ্য করে, যার সম্ভাব্য গুরুতর প্রতিকূল প্রভাব পড়তে পারে, তাহলে সিআইএ নিশ্চিত করতে চাইবে যে বিষয়টি ‘বৈধ’ এবং এই কাজটি করার জন্য তাদের কাছে ‘অত্যন্ত সুস্পষ্ট নীতিগত নির্দেশনা’ রয়েছে।”
তিনি আরও বলেন, “কেবল একটি বিষয় সশস্ত্র সংঘাতের আইনের অধীনে বৈধ হলেই যে সেটি করা উচিত, তা নয়। এখানে একটি নৈতিক দিক আছে, একটি ব্যবহারিক দিক আছে এবং একটি বাস্তবসম্মত দিকও রয়েছে।”
আইন অনুযায়ী, সিআইএ সরাসরি প্রাণঘাতী হামলা চালাতে পারে অথবা অন্য কোনো দেশকে লক্ষ্যবস্তু চিহ্নিতকরণ বা অন্যান্য সহায়তা দিতে পারে। তবে, প্রেসিডেন্ট কর্তৃক যথাযথভাবে অনুমোদিত হতে হবে এবং সশস্ত্র সংঘাতের ক্ষেত্রে মার্কিন আইন ও বিধি-নিষেধগুলো মেনে চলতে হবে।
তবে, মেক্সিকোর মতো এমন একটি অঞ্চলে, যেখানে তুলনামূলকভাবে বেশি সংখ্যক মার্কিন নাগরিক এবং গ্রিন কার্ড ধারক বসবাস করেন, তাদের ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকলে যুক্তরাষ্ট্রের জন্য বিষয়টি নতুন। এমন পরিস্থিতিতে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিরা যুক্তরাষ্ট্রের সরকারের বিরুদ্ধে মামলা করারও সুযোগ পেতে পারেন।
পর্যালোচনা সম্পর্কে অবগত একজন ব্যক্তি বলেছেন, “প্রাণঘাতী শক্তি ব্যবহারের বিষয়টি তাদের পক্ষে সম্ভব কিনা, সেই প্রশ্ন নয়। তারা তা পারে। বরং, এর মাধ্যমে কোনো মার্কিন নাগরিক আহত বা নিহত হলে তার প্রভাব কী হবে, সেটিই মূল বিষয়।”
মার্কিন কর্মকর্তারা উল্লেখ করেছেন, এই ধরনের হামলায় অংশীদার দেশও ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, মেক্সিকো যদি সিআইএকে তাদের সীমানার মধ্যে সরাসরি অভিযান চালানোর অনুমতি দেয় অথবা গোয়েন্দা তথ্য দিয়ে সহায়তা করে, তাহলে এর ফলে যদি মেক্সিকোর রাজনৈতিক সমস্যা হয়, তবে দেশটির সরকার ভবিষ্যতে সিআইএকে সেখানে কাজ করতে নাও দিতে পারে।
সাবেক কর্মকর্তারা মাদক চক্রগুলোর প্রতিশোধের ঝুঁকি সম্পর্কেও সতর্ক করেছেন। কারণ, এদের মধ্যে কিছু চক্রের সদস্য যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরেও সক্রিয় রয়েছে।
আর্ন্তজাতিক সম্পর্ক বিষয়ক থিংক ট্যাংক আটলান্টিক কাউন্সিলের এক সাম্প্রতিক গবেষণায়, অনিয়মিত যুদ্ধ বিষয়ক বিশেষজ্ঞ এবং সাবেক প্রতিরক্ষা বিভাগের এক কর্মকর্তা ডগ লিভারমোর লিখেছেন, “মেক্সিকান মাদক চক্রগুলো কেবল অপরাধী সংগঠন নয়, তারা গভীর আর্থিক সম্পদ, বিশ্বব্যাপী সরবরাহ ব্যবস্থা এবং যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরে বিস্তৃত অত্যাধুনিক লজিস্টিক্যাল নেটওয়ার্কসহ আধা-সামরিক সত্তা হিসেবে কাজ করে।
মাদক চক্রগুলো প্রতিশোধ নিতে পারে এবং তাদের সন্ত্রাসী কার্যক্রম চালানোরও যথেষ্ট ক্ষমতা রয়েছে।
পর্যালোচনা সম্পর্কে অবগত একজন ব্যক্তি জানিয়েছেন, এটি জর্জ ডব্লিউ বুশ প্রশাসনের ‘উন্নত জিজ্ঞাসাবাদ’ কর্মসূচির একটি গভীর প্রাতিষ্ঠানিক স্মৃতির প্রতিফলন। আইনপ্রণেতা এবং ওবামা প্রশাসন পরবর্তীতে এই প্রোগ্রামকে নির্যাতনের শামিল বলে মনে করেছিল।
প্রাক্তন কর্মকর্তারা বলছেন, সেই সময়ে সংস্থাটি আইনের সীমা পর্যন্ত তাদের কার্যক্রম চালিয়েছিল। সমালোচকরা অবশ্য বলছেন, সংস্থা এবং প্রশাসন তাদের কাজের ক্ষেত্রে অনেক সময় বৈধ সীমা অতিক্রম করেছে।
পর্যালোচনা থেকে বোঝা যায়, মাদক চক্রগুলোর বিরুদ্ধে কোনো পদক্ষেপ নিলে, বিশেষ করে যদি এর প্রতিকূল ফল আসে, তাহলে সংস্থার জবাবদিহিতা করতে হতে পারে। এছাড়াও, যদি এমন কোনো অভিযান পরিচালনা করা হয় যা মাদক চক্রগুলোর হুমকিকে বিবেচনা না করে অতিরিক্ত মনে হয়, তবে সেক্ষেত্রেও সমস্যা হতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সম্প্রদায়ের প্রকাশিত বার্ষিক হুমকি মূল্যায়নে, সম্ভবত এই প্রথম মাদক চক্রগুলোকে প্রধান হুমকি হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। তবে, অনেক বর্তমান ও প্রাক্তন জাতীয় নিরাপত্তা কর্মকর্তা বারবার যুক্তি দিয়েছেন যে, মাদক চক্রগুলো একটি গুরুতর সমস্যা হলেও, তারা দেশের জন্য সরাসরি কোনো অস্তিত্বের সংকট তৈরি করে না।
তথ্য সূত্র: সিএনএন