রান্না জগতে ক্লডিয়া রডেন: মিশর থেকে কিভাবে এলো বিশ্বজুড়ে খ্যাতি?

ক্লাউডিয়া রডেন: খাদ্য, সংস্কৃতি আর ঐতিহ্যের এক উজ্জ্বল নক্ষত্র।

খাদ্যরসিক এবং সংস্কৃতি প্রেমীদের জন্য ক্লাউডিয়া রডেন একটি সুপরিচিত নাম। তিনি একজন স্বশিক্ষিত রাঁধুনি, খাদ্য বিষয়ক লেখক, ঐতিহাসিক এবং নৃতত্ত্ববিদ।

৮৮ বছর বয়সী এই অসাধারণ নারী খাদ্য এবং সংস্কৃতির মেলবন্ধনে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছেন। সম্প্রতি, লন্ডনের একটি রেস্তোরাঁয় বসে তাঁর সঙ্গে কথা বলার সুযোগ হয়েছিল, যেখানে উঠে আসে তাঁর জীবন, কাজ এবং খাদ্য বিষয়ক দর্শনের নানা দিক।

মিসরীয় ইহুদি পরিবারে জন্ম নেওয়া ক্লাউডিয়া রডেন-এর শৈশব কেটেছে কায়রোতে। তাঁর মায়ের রান্নার প্রতি ছিল অগাধ ভালোবাসা।

ছোটবেলা থেকেই তিনি ফরাসি, ইতালীয়, ইংরেজি এবং আরবি ভাষায় সাবলীল ছিলেন। ১৫ বছর বয়সে তিনি মিসরের ব্যাকস্ট্রোক সাঁতারে চ্যাম্পিয়ন হন।

এরপর তিনি প্যারিসে চলে যান এবং পরবর্তীতে লন্ডনে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন।

১৯৫০-এর দশকে লন্ডনে আসার পর তিনি এলিজাবেথ ডেভিডের লেখা ‘এ বুক অফ মেডিটেরিয়ান ফুড’ বইটি হাতে পান। এই বই থেকেই তিনি রেসিপি লেখার ধারণা পান।

কারণ, মিশরে তখন রেসিপির প্রচলন ছিল না। সবকিছু প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে মুখে মুখেই প্রচলিত ছিল।

১৯৬৮ সালে প্রকাশিত হয় তাঁর প্রথম বই ‘এ বুক অফ মিডল ইস্টার্ন ফুড’। বইটিতে মধ্যপ্রাচ্যের খাদ্য ও সংস্কৃতির এক চমৎকার চিত্র তুলে ধরা হয়েছে।

এই বইয়ের মাধ্যমে তিনি তাঁর শৈশবের স্মৃতি এবং কায়রোর খাদ্য ঐতিহ্যকে বিশ্ববাসীর কাছে তুলে ধরেন। পরবর্তীতে প্রকাশিত হয় ‘দ্য বুক অফ জিউইশ ফুড’।

এই বইগুলোতে রডেন মধ্যপ্রাচ্য এবং ইহুদি খাবারের ঐতিহ্যকে ধরে রেখেছেন, যা আজও খাদ্যপ্রেমীদের কাছে অত্যন্ত মূল্যবান।

তাঁর খাদ্য বিষয়ক কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ, ইয়োতাম অটোলেঙ্গি এবং সাইমন শামার মতো খ্যাতিমান ব্যক্তিরাও তাঁর কাজের প্রশংসা করেছেন।

রডেন মনে করেন, খাদ্য কেবল একটি প্রয়োজনীয় জিনিস নয়, বরং এটি সংস্কৃতি এবং ঐতিহ্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ।

খাদ্য সংস্কৃতির বিনিময় ঘটায় এবং মানুষের মধ্যে সম্পর্ক তৈরি করে।

পেশাগত জীবনের বাইরে, ক্লাউডিয়া রডেন-এর ব্যক্তিগত জীবনও বেশ বর্ণময়। ১৫ বছর পর তাঁর বিবাহ বিচ্ছেদ হয়।

তিনি একা হাতেই সন্তানদের মানুষ করেছেন। সন্তানদের সঙ্গে তাঁর গভীর সম্পর্ক আজও অটুট।

নিজের কাজের জন্য বিভিন্ন সময়ে ভ্রমণ করেছেন রডেন। টেলিভিশনের পর্দায় কাজ করার অভিজ্ঞতা খুব একটা সুখকর ছিল না তাঁর।

তবে, ভ্রমণের সময় বিভিন্ন সংস্কৃতি ও মানুষের সঙ্গে মিশে তিনি নতুন অভিজ্ঞতা অর্জন করেছেন।

বর্তমানে তিনি তাঁর ২২তম বইয়ের কাজ করছেন। এই বইটিতে তিনি মধ্যপ্রাচ্যের আঞ্চলিক রান্না এবং সেখানকার সাধারণ মানুষের খাদ্য নিয়ে লিখছেন।

রডেন মনে করেন, এই অঞ্চলের সাধারণ মানুষের খাবারের এখনো অনেক মূল্যায়ন বাকি আছে।

খাদ্য এবং সংস্কৃতি নিয়ে ক্লাউডিয়া রডেনের কাজ আমাদের জন্য এক বিশাল অনুপ্রেরণা। তাঁর জীবন, কাজ এবং খাদ্য বিষয়ক ধারণা আমাদের খাদ্য এবং সংস্কৃতিকে আরও ভালোভাবে বুঝতে সাহায্য করে।

তথ্যসূত্র: দ্য গার্ডিয়ান

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *