ক্লিম বার্ক: প্রয়াত, রক সঙ্গীতের এক উজ্জ্বল নক্ষত্র!

প্রখ্যাত ড্রামার ক্লিম বার্ক, যিনি গত ৬ এপ্রিল ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে ৭০ বছর বয়সে মারা গেছেন, সঙ্গীত জগতে এক উজ্জ্বল নক্ষত্র ছিলেন।

১৯৭০-এর দশকের মাঝামাঝি সময়ে ব্যান্ড ব্লন্ডি-র সঙ্গে তার যাত্রা শুরু হয়, যা ১৯৮২ সাল পর্যন্ত স্থায়ী ছিল। পরবর্তীতে ১৯৯৭ সালে ব্যান্ডটি পুনরায় গঠিত হলে তিনি আবার এর সঙ্গে যুক্ত হন এবং মৃত্যুর আগ পর্যন্ত ব্লন্ডির ড্রামার হিসেবে কাজ করেছেন।

ক্লিম বার্ক, বা আসল নামে ক্লিমেন্ট অ্যান্টনি বোজেউস্কি, ১৯৫৪ সালের ২৪শে নভেম্বর নিউ জার্সির বেয়োনেতে জন্মগ্রহণ করেন।

তার বাবাও ছিলেন একজন পেশাদার ড্রামার। ছোটবেলা থেকেই সঙ্গীতের প্রতি তার গভীর আগ্রহ ছিল। তিনি ছিলেন বাম-হাতি, কিন্তু ডান-হাতি ড্রাম কিট বাজাতেন, যা তার রোল মডেল রিঙ্গো স্টারের মতোই ছিল।

সেন্ট অ্যান্ড্রুস ব্রিজম্যান ড্রাম এবং বাগল কর্পসে প্রশিক্ষণ নেওয়ার পর তিনি স্থানীয় বিভিন্ন ব্যান্ডে ড্রাম বাজানো শুরু করেন।

ব্লন্ডির সঙ্গে তার পথচলা শুরু হওয়ার আগে, ১৯৭৫ সালে তিনি একটি ম্যাগাজিনে ডেবি হ্যারি এবং ক্রিস স্টাইনের একটি বিজ্ঞাপন দেখেন, যেখানে তারা তাদের ব্যান্ডের জন্য একজন “অদ্ভুত এনার্জি” সম্পন্ন ড্রামার খুঁজছিলেন।

সেই ডাকে সাড়া দিয়ে তিনি ব্লন্ডিতে যোগ দেন এবং ব্যান্ডের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সদস্য হয়ে ওঠেন।

ক্লিম বার্ক ব্লন্ডির কোনো গান লেখেননি, কিন্তু ডেবি হ্যারি এবং ক্রিস স্টাইনের সঙ্গে মিলে তিনি ব্যান্ডের মূল ভিত্তি গড়ে তুলেছিলেন। তার প্রাণবন্ত ড্রামিং-এর কারণে অভ্যন্তরীণ কলহ সত্ত্বেও ব্লন্ডি সাফল্যের পথে এগিয়ে যায়।

ব্লন্ডির হয়ে তিনি *প্লাস্টিক লেটার্স* (১৯৭৮), *প্যারালাল লাইনস* (১৯৭৮) এবং *ইট টু দ্য বিট* (১৯৭৯)-এর মতো জনপ্রিয় অ্যালবামগুলোতে ড্রাম বাজিয়েছেন।

এই অ্যালবামগুলোর ‘ডেনিস’, ‘পিকচার দিস’, ‘সানডে গার্ল’, ‘হার্ট অফ গ্লাস’, ‘হ্যাঙ্গিং অন দ্য টেলিফোন’, ‘অ্যাটমিক’, ‘কল মি’ এবং ‘দ্য টাইড ইজ হাই’-এর মতো গানগুলো বিশ্বজুড়ে জনপ্রিয়তা লাভ করে।

ব্লন্ডির বাইরেও ক্লিম বার্ক একজন দক্ষ সেশন ড্রামার হিসেবে খ্যাতি অর্জন করেন।

তিনি ইগি পপ, জনি থান্ডারস, রামোনস, সেক্স পিস্তলস-এর স্টিভ জোন্স, বব ডিলান, ইউরিদমিক্স, পিট টাউনশেন্ডের মতো কিংবদন্তি শিল্পীদের সঙ্গে কাজ করেছেন।

১৯৮০-এর দশকের শেষ থেকে ২০০০ সালের শুরুর দিকে তিনি ডেট্রয়েট-ভিত্তিক ব্যান্ড ‘দ্য রোমান্টিকস’-এর সঙ্গে নিয়মিত ড্রাম বাজাতেন।

সঙ্গীতের বাইরে, ক্লিম বার্ক ড্রামিং-এর শারীরিক ও মানসিক প্রভাব নিয়েও গবেষণা করেছেন।

২০০৮ সালে তিনি ‘ক্লিম বার্ক ড্রামিং প্রজেক্ট’ প্রতিষ্ঠা করেন, যেখানে ড্রামিং-এর স্বাস্থ্যগত দিকগুলো পরীক্ষা করা হতো।

ক্লিম বার্কের প্রয়াণে সঙ্গীতের জগতে এক অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে।

তার সৃষ্টিশীলতা এবং ড্রামিং-এর অসাধারণ ক্ষমতা সঙ্গীতপ্রেমীদের হৃদয়ে চিরকাল গেঁথে থাকবে। তিনি ২০০২ সালে প্রাক্তন নার্স, এলেন-কে বিয়ে করেন।

তথ্যসূত্র: দ্য গার্ডিয়ান

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *