ক্ষমতার অপব্যবহার? ক্ষমা ঘোষণার নামে কি হচ্ছেটা!

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষমা প্রদর্শনের ক্ষমতা : ক্ষমতার অপব্যবহার?

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টদের ক্ষমা প্রদর্শনের ক্ষমতা নিয়ে সম্প্রতি বিতর্ক বাড়ছে। দেশটির সংবিধানে দ্বিতীয় অনুচ্ছেদের ২য় ধারায় প্রেসিডেন্টের এই ক্ষমতা সম্পর্কে বলা হয়েছে, গুরুতর অপরাধে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের তিনি ক্ষমা করতে পারেন।

তবে এই ক্ষমতা প্রয়োগের ক্ষেত্রে কিছু বিষয় নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে, যা বিশেষভাবে আলোচনা করা দরকার।

সাধারণত, কোনো প্রেসিডেন্টের মেয়াদ শেষের দিকে, অর্থাৎ নতুন প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পর ক্ষমতা হস্তান্তরের সময়কালে এই ধরনের ক্ষমা প্রদর্শনের ঘটনা বেশি দেখা যায়। এর কারণ হিসেবে মনে করা হয়, বিদায়ী প্রেসিডেন্ট সাধারণত বিতর্ক এড়িয়ে যেতে চান।

কারণ, নির্বাচনে তিনি আর প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন না। ফলে তাঁর এই ধরনের সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে কোনো রাজনৈতিক চাপ থাকে না।

কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে দেখা যাচ্ছে, এই ক্ষমতা প্রয়োগের ক্ষেত্রে কিছু ব্যতিক্রমী ঘটনা ঘটছে, যা বিতর্কের জন্ম দিয়েছে।

সাবেক প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন তাঁর মেয়াদের শেষ দিকে বেশ কয়েকজন সাজাপ্রাপ্ত আসামির সাজা মওকুফ করেন। তাঁর এই পদক্ষেপ বিশেষভাবে সমালোচিত হয় যখন তিনি তাঁর ছেলে হান্টার বাইডেনকে ক্ষমা করেন।

শুধু তাই নয়, পরিবারের অন্যান্য সদস্যদেরও তিনি ভবিষ্যতের সম্ভাব্য অভিযোগ থেকে মুক্তি দেন। অনেকের মতে, ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে তিনি স্বজনপ্রীতি করেছেন।

অন্যদিকে, সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পও ক্ষমতায় থাকাকালীন সময়ে বেশ কিছু বিতর্কিত সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। বিশেষ করে, ২০২১ সালের ৬ই জানুয়ারির ক্যাপিটল হিলে হামলার ঘটনায় অভিযুক্ত অনেককে তিনি ক্ষমা করে দেন।

এই ঘটনা কর্মকর্তাদের মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে এবং অনেকে এটিকে ‘উপহাস’ হিসেবেও উল্লেখ করেন।

ট্রাম্পের ক্ষমা প্রদর্শনের তালিকায় আরও কিছু নাম রয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো ‘ফেইস অ্যাক্ট’-এর অধীনে অভিযুক্ত ব্যক্তিরা।

এই আইন গর্ভপাত ক্লিনিকগুলোর সামনে বিক্ষোভ প্রদর্শনের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে প্রয়োগ করা হয়। ট্রাম্প এক্ষেত্রে তাঁর সমর্থক গোষ্ঠীর সমর্থন আদায়ের চেষ্টা করেছেন বলে মনে করা হয়।

তবে, প্রশ্ন উঠেছে, ক্ষমা প্রদর্শনের ক্ষেত্রে কতটুকু স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা থাকা উচিত? অনেক ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে, ক্ষমা পাওয়ার যোগ্য নন এমন ব্যক্তিদেরও বিশেষ সুবিধা দেওয়া হচ্ছে।

উদাহরণস্বরূপ, স্কট জেনকিন্স নামের এক ব্যক্তিকে ঘুষ নেওয়ার অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত হওয়ার পরও ক্ষমা করা হয়েছে। আবার, টড এবং জুলি ক্রিসলি নামের এক দম্পতি, যারা ব্যাংককে প্রতারণা করে বিপুল পরিমাণ অর্থ আত্মসাৎ করেছিলেন, তাঁদেরও বিশেষ সুবিধা দেওয়া হয়েছে।

সবচেয়ে আলোচিত ঘটনা হলো, গ্যাংস্টার ডিসাইপলস-এর কুখ্যাত প্রতিষ্ঠাতা ল্যারি হুভারকে ক্ষমা করার বিষয়টি। হত্যার অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত হওয়া হুভারকে ক্ষমা করার কারণ নিয়ে এখনো ধোঁয়াশা রয়েছে।

এছাড়া, মিশিগানের গভর্নর গ্রেচেন হুইটমারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের অভিযোগে অভিযুক্তদের বিষয়েও ট্রাম্প সহানুভূতি দেখিয়েছেন।

এখানে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, অনেক ক্ষেত্রে ক্ষমা পাওয়ার জন্য অভিযুক্তরা কোনো আবেদন করেননি। ট্রাম্প নিজে থেকেই তাঁদের প্রতি সহানুভূতি দেখিয়েছেন।

যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষমা প্রদর্শনের ক্ষমতা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, তবে এর অপব্যবহার হলে তা বিচারব্যবস্থার প্রতি মানুষের আস্থা কমিয়ে দিতে পারে।

স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা না গেলে, এই ক্ষমতা ক্ষমতার অপব্যবহারের হাতিয়ারে পরিণত হতে পারে। তাই, এই ক্ষমতা প্রয়োগের ক্ষেত্রে আরও বেশি সতর্কতা অবলম্বন করা প্রয়োজন।

তথ্য সূত্র: আল জাজিরা

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *