কৃষিতে বিপর্যয়! জলবায়ু পরিবর্তনে গবেষণা বন্ধ, বিজ্ঞানীরা দিশেহারা

যুক্তরাষ্ট্রে কৃষি গবেষণা খাতে অর্থায়ন কমানোর ফলে বিশ্বজুড়ে খাদ্য নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়ছে। জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব মোকাবিলায় উন্নত প্রযুক্তিনির্ভর কৃষিব্যবস্থা গড়ে তোলার প্রয়োজনীয়তা বাড়ছে, কিন্তু গবেষণায় বরাদ্দ কমতে থাকায় শঙ্কা প্রকাশ করেছেন বিশেষজ্ঞরা।

সম্প্রতি প্রকাশিত এক গবেষণা প্রবন্ধে এই বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরা হয়েছে।

ক্যালিফোর্নিয়া-ডেভিসের (University of California-Davis) বিজ্ঞানী এরিন ম্যাকগুইয়ারের নেতৃত্বে একদল গবেষক দীর্ঘদিন ধরে খরা প্রতিরোধী শস্য উৎপাদন, উন্নত পদ্ধতিতে ফসল সংরক্ষণ এবং ক্ষুদ্র কৃষকদের জন্য লাভের পথ খুঁজে বের করার চেষ্টা করছিলেন। কিন্তু ট্রাম্প প্রশাসনের নীতির কারণে আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা ইউএসএআইডি (USAID)-এর তহবিল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় তাঁদের গবেষণা মাঝপথে থেমে যায়।

ম্যাকগুইয়ারের গবেষণাগারের কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়, এমনকি অনেক সহযোগী কর্মীকেও চাকরি হারাতে হয়।

গবেষকরা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে কৃষিতে ক্ষতির পরিমাণ বাড়ছে। এমন পরিস্থিতিতে কৃষকদের জন্য নতুন উদ্ভাবন জরুরি।

উন্নত বীজ তৈরি, ফসলের রোগবালাই প্রতিরোধের উপায়, শ্রমিকদের সুরক্ষা এবং আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে উৎপাদন বাড়ানো সম্ভব। কিন্তু সরকারি অর্থায়ন কমে যাওয়ায় বিজ্ঞানীরা তাঁদের গবেষণা চালিয়ে যেতে পারছেন না।

কর্নেল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এবং গবেষণা প্রবন্ধের প্রধান লেখক অ্যারিয়েল অরটিজ-বোবেয়া (Ariel Ortiz-Bobea) এই পরিস্থিতিকে যুক্তরাষ্ট্রের কৃষি খাতের জন্য “ভয়াবহ” হিসেবে বর্ণনা করেছেন।

যুক্তরাষ্ট্রের কৃষি গবেষণা খাতে অর্থায়নের পরিমাণ উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পেয়েছে। সরকারি তথ্য অনুযায়ী, ২০১৯ সাল পর্যন্ত কৃষি গবেষণা খাতে বরাদ্দ ২০০২ সালের তুলনায় প্রায় এক-তৃতীয়াংশ কমেছে, যা প্রায় ২ বিলিয়ন ডলারের সমান।

জলবায়ু পরিবর্তন এবং আন্তর্জাতিক উন্নয়নের ওপর গবেষণা কার্যক্রম স্থগিত হওয়ায় এই সংকট আরও বেড়েছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অনেক দেশ কৃষি গবেষণায় অর্থ বিনিয়োগ করছে। চীন এই খাতে যুক্তরাষ্ট্রের চেয়ে প্রায় দ্বিগুণ অর্থ খরচ করে এবং ২০০০ সাল থেকে তাদের বিনিয়োগ পাঁচ গুণ বাড়িয়েছে।

বেসরকারি খাতেও কিছু বিনিয়োগ দেখা যায়, তবে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, সরকারের পক্ষ থেকে গবেষণা খাতে অর্থায়ন না বাড়ালে খাদ্য নিরাপত্তা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

মিশিগান স্টেট ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক ডেভিড টিরলি (David Tschirley) জানান, গবেষণা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় কোটি কোটি ডলারের কাজ এখন কোনো ফল দেবে না। কারণ, অনেক প্রকল্পের কাজ মাঝপথে বন্ধ হয়ে গেছে।

বর্তমানে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে তাপমাত্রা বাড়ছে, যা অনেক ফসলের জন্য ক্ষতিকর। বিজ্ঞানীরা বলছেন, এর ফলস্বরূপ খাদ্যপণ্যের দাম বেড়ে যেতে পারে।

বিশেষ করে, উন্নয়নশীল দেশগুলোতে এর প্রভাব আরও মারাত্মক হবে, যেখানে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ইতিমধ্যে খাদ্য উৎপাদন কমে গেছে।

ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ডেভিড জিলবারম্যান (David Zilberman) খাদ্য নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, “আমরা যদি বিশ্ব খাদ্য পরিস্থিতিকে গুরুত্ব না দিই, তবে একটি বিপর্যয় নেমে আসবে।”

বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য সরকারি এবং বেসরকারি উভয় খাতেই কৃষি গবেষণায় আরও বেশি বিনিয়োগ করা প্রয়োজন।

বিশেষ করে, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলায় টেকসই কৃষিব্যবস্থা গড়ে তুলতে উন্নত প্রযুক্তির উদ্ভাবন এবং প্রয়োগের ওপর জোর দেওয়া উচিত। এর ফলে একদিকে যেমন খাদ্য উৎপাদন বাড়বে, তেমনি কৃষকদের জীবনযাত্রার মানও উন্নত করা সম্ভব হবে।

তথ্য সূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *