**বিশ্বকাপের সূচি পরিবর্তনে বাধ্য হতে পারে ফিফা, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব**
বিশ্বজুড়ে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ফুটবল বিশ্বকাপ সহ অন্যান্য খেলাধুলার আসর আয়োজনে বড় ধরনের পরিবর্তন আসতে পারে। গ্রীষ্মকালে উত্তর গোলার্ধে তাপমাত্রা বৃদ্ধির কারণে খেলোয়াড় এবং দর্শকদের স্বাস্থ্য ঝুঁকির কথা বিবেচনা করে ফিফা (FIFA)-কে বিশ্বকাপের সূচি নতুন করে সাজানোর কথা ভাবতে হতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্র, মেক্সিকো ও কানাডায় অনুষ্ঠিতব্য পরবর্তী বিশ্বকাপ এবং ক্লাব বিশ্বকাপের সাম্প্রতিক অভিজ্ঞতা থেকে এমন ধারণাই করা হচ্ছে। জুন-জুলাই মাসে টুর্নামেন্ট আয়োজনের ঐতিহ্য থাকলেও, আবহাওয়ার পরিবর্তন এই সময়ে খেলা আয়োজনের জন্য ক্রমশ ঝুঁকিপূর্ণ করে তুলছে।
বিজ্ঞানীরা সতর্ক করে বলেছেন, গ্রীষ্মকালে এই সময়ে খেলা আয়োজন খেলোয়াড় এবং দর্শকদের জন্য স্বাস্থ্য ঝুঁকি তৈরি করতে পারে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, খেলাধুলার ইতিহাসে ১৯৩০ সাল থেকে জুন, জুলাই ও আগস্ট মাসগুলো উষ্ণতা বৃদ্ধি পেয়েছে ১.০৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। শুধু ইউরোপেই তাপমাত্রা বেড়েছে ১.৮১ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
পরিস্থিতি বিবেচনা করে খেলাধুলার সূচি পরিবর্তনের প্রয়োজনীয়তার কথা বলছেন তারা।
ইংল্যান্ডের লিডসের প্রিস্টলি সেন্টার ফর ক্লাইমেট ফিউচারের পরিচালক অধ্যাপক পিয়ার্স ফর্স্টার (Prof. Piers Forster) বলেন, “আমরা যদি দ্রুত ব্যবস্থা না নিই, তবে খেলাধুলার আসরে বড় ধরনের বিপর্যয় ঘটার আশঙ্কা রয়েছে। আমি মনে করি, খেলা পরিচালনাকারী সংস্থাগুলোর জলবায়ু এবং স্বাস্থ্য বিজ্ঞানকে গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা উচিত।”
গরম আবহাওয়ার কারণে খেলোয়াড়দের শারীরিক অবস্থার ওপর বিরূপ প্রভাব পড়তে পারে। অতিরিক্ত গরমে খেলোয়াড়দের হিটস্ট্রোক (heatstroke) বা অত্যাধিক তাপমাত্রা (hyperthermia, abnormally high body temperature -হাইপারথার্মিয়া) হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
ক্যানবেরা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক জুলিয়েন পেরিয়ার্ড (Julien Périard) বলেন, “খেলোয়াড়দের শরীরে তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেলে কার্ডিওভাসকুলার সমস্যাও বাড়ে।”
ফিফা পরিস্থিতি বিবেচনা করে কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে। খেলার মাঝে বিরতি, মাঠের পাশে পর্যাপ্ত জলের ব্যবস্থা এবং খেলোয়াড়দের জন্য ছায়াযুক্ত বেঞ্চের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
তবে, খেলোয়াড়দের অনেকেই দুপুরের পরিবর্তে দিনের অন্য সময়ে খেলা আয়োজনের জন্য ফিফার প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
আগামী ২০২৬ সালের বিশ্বকাপে অংশগ্রহণকারী দলের সংখ্যা বেড়ে ৪৮টি হওয়ায় সূচি তৈরি করা কঠিন হবে। ফিফা সাধারণত ইউরোপীয় টিভি দর্শকদের কথা মাথায় রেখে বিশ্বকাপের সময়সূচী তৈরি করে থাকে।
তবে, ২০৩০ সালের বিশ্বকাপ স্প্যান, পর্তুগাল ও মরক্কোতে অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। এই দেশগুলোতে গ্রীষ্মকালে তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি হতে দেখা যায়, যা খেলোয়াড়দের জন্য আরও বেশি উদ্বেগের কারণ।
জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে খেলাধুলার সূচি পরিবর্তনের বিষয়টি এখন সময়ের দাবি। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, বর্তমানে যারা খেলাধুলায় সক্রিয়, তাদের মধ্যে প্রায় ২৮ শতাংশ মানুষ অতিরিক্ত গরমের ঝুঁকিতে রয়েছেন।
তথ্য সূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস