ভূপৃষ্ঠের তাপমাত্রা বৃদ্ধিতে খাদ্যশস্য উৎপাদনে বড় ধরনের ক্ষতির আশঙ্কা দেখা দিয়েছে, এমনটাই জানাচ্ছে সম্প্রতি প্রকাশিত একটি গবেষণা।
‘নেচার’ জার্নালে প্রকাশিত এই গবেষণা অনুযায়ী, শতাব্দীর শেষে যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান খাদ্যশস্য উৎপাদন অর্ধেকে নেমে আসতে পারে।
এর পাশাপাশি, বিশ্বের অন্যান্য অঞ্চলের কৃষিখাতেও মারাত্মক প্রভাব পড়তে পারে বলে সতর্ক করা হয়েছে।
গবেষণায় বিজ্ঞানীরা ভুট্টা, সয়াবিন, ধান, গম, কাসাভা এবং জোয়ার সহ মোট ছয়টি প্রধান খাদ্যশস্যের উৎপাদন পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করেছেন।
বিশ্বের ৫৪টি দেশের ১২,০০০ এর বেশি অঞ্চলের তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে বিজ্ঞানীরা দেখেছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে খাদ্যশস্য উৎপাদনে ব্যাপক পরিবর্তন আসছে।
বিশেষ করে, তাপমাত্রা ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস বাড়লে বিশ্বজুড়ে জনপ্রতি দৈনিক খাদ্য উৎপাদন ১২০ ক্যালোরি পর্যন্ত হ্রাস পেতে পারে।
গবেষণায় নেতৃত্বদানকারী স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সলোমন সিয়াং-এর মতে, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে খাদ্যশস্যের উৎপাদন হ্রাস পেলে খাদ্যপণ্যের দাম বাড়বে, যা মানুষের খাদ্য নিরাপত্তা আরও কঠিন করে তুলবে।
তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, তাপমাত্রা যদি ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত বৃদ্ধি পায়, তাহলে এটি হবে অনেকটা “পৃথিবীর সকলে তাদের সকালের নাস্তা ত্যাগ করার মতো”।
গবেষণায় দেখা গেছে, ভুট্টা, সয়াবিন এবং গমের মতো গুরুত্বপূর্ণ খাদ্যশস্যের উৎপাদনে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হতে পারে।
উদাহরণস্বরূপ, যুক্তরাষ্ট্রের শস্য উৎপাদন অঞ্চলে ভুট্টা উৎপাদনের পরিমাণ ৪০ শতাংশ পর্যন্ত হ্রাস পেতে পারে।
একইসাথে, গম উৎপাদনও যুক্তরাষ্ট্র, চীন, রাশিয়া এবং কানাডার মত দেশগুলোতে উল্লেখযোগ্য হারে কমতে পারে।
যদিও ধান চাষের ক্ষেত্রে তেমন কোনো বড় পরিবর্তনের সম্ভাবনা নেই, কারণ উষ্ণ রাতের তাপমাত্রা ধানের জন্য সহায়ক হতে পারে।
এই গবেষণায় আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় উঠে এসেছে, আর তা হলো ধনী দেশগুলোও জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ক্ষতির শিকার হতে পারে।
গবেষকদের মতে, যুক্তরাষ্ট্রের মতো উন্নত দেশগুলোর কৃষি ব্যবস্থা বর্তমান আবহাওয়ার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ, তাই তাপমাত্রা বৃদ্ধি তাদের জন্য মারাত্মক হতে পারে।
গবেষণায় অন্তর্ভুক্ত না হলেও, বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কৃষকরা পরিস্থিতির সঙ্গে মানিয়ে নিতে চেষ্টা করছেন।
তারা বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করছেন, যেমন – ফসলের জাত পরিবর্তন করা বা সেচের ধরনে পরিবর্তন আনা।
তবে, এই অভিযোজনগুলোও জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব মোকাবেলা করার জন্য যথেষ্ট নাও হতে পারে।
এই গবেষণা জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে খাদ্য নিরাপত্তা ঝুঁকির বিষয়টি আরও একবার সামনে নিয়ে এসেছে।
বিজ্ঞানীরা বলছেন, দ্রুত পদক্ষেপ না নিলে খাদ্য উৎপাদন কমে যাওয়া এবং খাদ্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধির কারণে দরিদ্র ও উন্নয়নশীল দেশগুলোতে খাদ্য সংকট আরও বাড়তে পারে।
গবেষণাটি খাদ্য নিরাপত্তা এবং জলবায়ু পরিবর্তনের মধ্যেকার সম্পর্ককে নতুন করে ভাবতে উৎসাহিত করে।
একইসাথে, এটি জরুরি ভিত্তিতে শক্তি ব্যবস্থার পরিবর্তন এবং জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলায় পদক্ষেপ নেওয়ার প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেয়।
তথ্য সূত্র: CNN