বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে যুক্তরাজ্যের কৃষিখাতে দেখা দিয়েছে এক অভাবনীয় পরিস্থিতি। দেশটির উষ্ণ ও শুষ্ক আবহাওয়ার কারণে মৌসুমের অনেক আগেই ফল ও সবজির বাম্পার ফলন হয়েছে।
স্ট্রবেরি, বেগুন (যা বাংলাদেশে আমরা বেগুন/brinjal নামে চিনি) এবং টমেটোর মতো সবজিগুলো স্বাভাবিক সময়ের কয়েক সপ্তাহ আগেই বাজারে চলে এসেছে। আবহাওয়ার এই পরিবর্তন কৃষকদের যেমন একদিকে স্বস্তি এনে দিয়েছে, তেমনই ভবিষ্যতের জন্য তৈরি করেছে উদ্বেগের।
যুক্তরাজ্যের কৃষকরা সাধারণত একটি “ক্ষুধার ফাঁদ” -এর সম্মুখীন হন, যা শীতকালীন সবজির মৌসুম শেষ হওয়ার পর গ্রীষ্মকালীন সবজির ফলন আসার মধ্যবর্তী সময়কে বোঝায়। এই সময়ে বাজারে টাটকা সবজির অভাব দেখা যায়।
কিন্তু এবার উষ্ণ আবহাওয়ার কারণে সেই “ক্ষুধার ফাঁদ” অনেকটাই উধাও হয়ে গেছে। ব্রিস্টলের একটি কৃষি খামারের কৃষক নিক হাইগ বলেছেন, “মনে হচ্ছে যেন এখনই মে মাস।”
তিনি জানান, টমেটো, বেগুন, শসা, এবং ক্যাপসিকাম সহ তাদের ক্ষেতের অনেক সবজি এখন প্রস্তুত।
তবে, আবহাওয়ার এই পরিবর্তন কৃষকদের জন্য নতুন কিছু চ্যালেঞ্জও নিয়ে এসেছে। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে আবহাওয়ার পূর্বাভাস দেওয়া কঠিন হয়ে পড়েছে।
আগে যেখানে একটি নির্দিষ্ট সময়ে ফসল বোনা যেত, এখন আর সেই সময়সূচি অনুসরণ করা সম্ভব হচ্ছে না। অপ্রত্যাশিত বন্যা বা খরা—সবকিছুই এখন কৃষকদের জন্য উদ্বেগের কারণ।
যুক্তরাজ্যের অন্যতম বিখ্যাত উদ্যান কেউ গার্ডেনস-ও এই পরিবর্তনের সাক্ষী। সেখানকার কিচেন গার্ডেনের প্রধান, হেলেনা ডোভ বলেছেন, “বর্তমান উষ্ণ আবহাওয়া আমাদের ক্রমবর্ধমান ঋতু কতটা পরিবর্তিত হচ্ছে, তা দেখাচ্ছে।”
তিনি আরও জানান, ঐতিহ্যগতভাবে, একজন দক্ষ কিচেন গার্ডেনার উইম্বলডনের সময় পর্যন্ত পাকা স্ট্রবেরি ফলাতে পারলে গর্বিত হতেন, যা তাদের দক্ষতার প্রমাণ দিতো। কিন্তু এবার এপ্রিল মাসেই তাদের বাগানে স্ট্রবেরি পেকে গেছে।
এই পরিবর্তনের ফলে কিছু অপ্রত্যাশিত ফলও দেখা যাচ্ছে। সাধারণত যুক্তরাজ্যের আবহাওয়ায় যেসব ফল ভালো হয় না, যেমন – লেবু, কিউয়ি এবং গ্রীষ্মমন্ডলীয় উদ্ভিদ, সেগুলোও এখন ভালো ফলন দিচ্ছে।
এমনকি পীচ, এপ্রিকট এবং নেকটারিনের মতো ফলও বাইরে চাষ করা হচ্ছে, যা আগে ভাবা যেত না।
তবে, সব কৃষকই যে এই পরিস্থিতিকে ইতিবাচকভাবে দেখছেন, তা নয়। আবহাওয়ার এই পরিবর্তন ভবিষ্যতে কী ধরনের প্রভাব ফেলবে, তা নিয়ে তাদের মধ্যে শঙ্কা রয়েছে।
অপ্রত্যাশিত আবহাওয়ার কারণে অনেক সময় কৃষকদের কয়েক মাসের কঠোর পরিশ্রমও ব্যর্থ হয়ে যেতে পারে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে কৃষকদের আরও বেশি সতর্ক হতে হবে এবং পরিস্থিতির সঙ্গে মানিয়ে নিতে নতুন কৌশল অবলম্বন করতে হবে।
তারা মনে করেন, ভবিষ্যতে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হলে জলবায়ু পরিবর্তনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় এখনই পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি।
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান