দ্বীপরাষ্ট্রগুলোর হুঁশিয়ারি! জলবায়ু পরিবর্তনে ধনী দেশগুলোর জরুরি পদক্ষেপের দাবি

**উষ্ণায়নের বিপদ: কার্বন নিঃসরণ কমাতে উন্নত দেশগুলোর প্রতি দ্বীপরাষ্ট্রগুলোর জোরালো আহ্বান**

বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনের মারাত্মক প্রভাব মোকাবিলায় উন্নত দেশগুলোকে কার্বন নিঃসরণ হ্রাসের পরিকল্পনা দ্রুত বাস্তবায়নের আহ্বান জানিয়েছে প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপরাষ্ট্রগুলো। একইসঙ্গে, জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় উন্নয়নশীল দেশগুলোকে অর্থ সহায়তা দেওয়ার ক্ষেত্রেও উন্নত দেশগুলোকে তাদের প্রতিশ্রুতি রক্ষা করতে বলেছে তারা।

বিশ্বের দরিদ্র এবং জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকিতে থাকা দেশগুলোর উদ্বেগের বিষয়টি তুলে ধরে দ্বীপরাষ্ট্রগুলো জানিয়েছে, কার্বন নিঃসরণ হ্রাসের ক্ষেত্রে ধনী দেশগুলোর ধীরগতি তাদের জন্য গভীর উদ্বেগের কারণ। তাদের মতে, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে দ্বীপগুলোর নিরাপত্তা চরম হুমকির মুখে পড়েছে। উন্নত দেশগুলোর জরুরি পদক্ষেপ নেওয়ার ওপরই তাদের ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে।

জাতিসংঘের জলবায়ু বিষয়ক সম্মেলন কপ-২৯-এ (COP29) ক্ষুদ্র দ্বীপরাষ্ট্র এবং স্বল্পোন্নত দেশগুলোর জোট আলোচনা থেকে বেরিয়ে গিয়েছিল। তারা আসন্ন কপ-৩০ সম্মেলনের (COP30) আগেই উন্নত বিশ্ব থেকে সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ আশা করছে। আগামী নভেম্বরে ব্রাজিলে এই সম্মেলন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে।

জানা গেছে, উন্নত দেশগুলো এখনো তাদের কার্বন নিঃসরণ হ্রাসের নতুন পরিকল্পনা জমা দেয়নি। যদিও সব দেশকে গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসরণ কমানোর পরিকল্পনা জমা দিতে বলা হয়েছে। এর অংশ হিসেবে, দেশগুলোকে তাদের জাতীয়ভাবে নির্ধারিত অবদান (এনডিসি) জমা দিতে বলা হয়েছে। এনডিসি হলো একটি দেশের কার্বন নিঃসরণ কমাতে নেওয়া পদক্ষেপের তালিকা। উন্নত দেশগুলোকে আগামী সেপ্টেম্বরের মধ্যে এই পরিকল্পনা জমা দিতে বলেছে জাতিসংঘ।

দ্বীপরাষ্ট্রগুলো মনে করে, উন্নত দেশগুলোর এখন দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া উচিত। বিশেষ করে জি-২০ ভুক্ত দেশগুলোর প্রতি তারা ২০৩০ সালের মধ্যে কার্বন নিঃসরণ কমানোর উচ্চাভিলাষী পরিকল্পনা জমা দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে। তাদের মতে, এই পরিকল্পনাগুলোতে কার্বন অফসেটের পরিবর্তে অভ্যন্তরীণ কার্বন হ্রাসের ওপর জোর দিতে হবে। জলবায়ু বিষয়ক তহবিল থেকে উন্নয়নশীল দেশগুলোকে ২০৩৫ সালের মধ্যে ১.৩ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার দেওয়ার যে প্রতিশ্রুতি উন্নত দেশগুলো দিয়েছে, সেটিও দ্রুত বাস্তবায়নের কথা বলা হয়েছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বর্তমানে বিভিন্ন দেশের নেওয়া পদক্ষেপের কারণে পৃথিবীর তাপমাত্রা ২.৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত বৃদ্ধি পেতে পারে। প্যারিস জলবায়ু চুক্তি অনুযায়ী, তাপমাত্রা ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে সীমিত রাখতে কার্বন নিঃসরণ কমানো জরুরি। কিন্তু অনেক দেশ এখনো তাদের অঙ্গীকার পূরণ করতে পারেনি।

উন্নত দেশগুলো জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিপূরণ দিতে দ্বিধা বোধ করতে পারে। তবে এতে কোনো দ্বিধা থাকলে চলবে না। কারণ, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে প্রাকৃতিক দুর্যোগ, বাস্তুতন্ত্রের ধ্বংস, খাদ্য সংকট, অর্থনৈতিক পতন এবং ব্যাপক অভিবাসনসহ নানা ধরনের বিপর্যয় দেখা দিতে পারে।

যুক্তরাজ্যের জ্বালানিসচিব এড মিলিব্যান্ড সম্প্রতি এক সম্মেলনে বলেছেন, জলবায়ু বিষয়ক শক্তিশালী নীতি ছাড়া জাতীয় নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সম্ভব নয়। জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য বিস্তারিত এবং সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা প্রয়োজন।

বাংলাদেশের মতো দেশগুলো জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকিতে রয়েছে। সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি, ঘূর্ণিঝড় ও বন্যার মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে এখানকার মানুষের জীবন ও জীবিকা প্রতিনিয়ত হুমকির সম্মুখীন হচ্ছে। জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব মোকাবিলায় উন্নত দেশগুলোর দ্রুত ও কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া অত্যন্ত জরুরি।

তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *