বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনের সংকট মোকাবিলায় নতুন দিশা দেখাচ্ছে থিয়েটার। জলবায়ু পরিবর্তনের ধ্বংসাত্মক প্রভাব নিয়ে মানুষের মধ্যে সচেতনতা বাড়াতে এবং তাদের মধ্যে পরিবর্তনের আকাঙ্ক্ষা জাগাতে নাট্যকর্মীরা অভিনব সব কৌশল অবলম্বন করছেন।
তারা পরিবেশ রক্ষার বার্তা নিয়ে আসছেন ভালোবাসার গান, লোককথার গল্প, পুতুল নাচ এবং আরও অনেক কিছুর মাধ্যমে।
বিশ্বজুড়ে, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সৃষ্ট বিপর্যয়গুলো সাধারণত আমাদের হতাশ করে তোলে। ভবিষ্যৎ পৃথিবীর এক ভয়াবহ চিত্র আমাদের সামনে তুলে ধরা হয়, যা অনেক সময় সরাসরি মোকাবেলা করা কঠিন হয়ে পড়ে।
তবে, অনেক নাট্যকার এখন ভয়কে জয় করে, ভালোবাসার মাধ্যমে মানুষকে অনুপ্রাণিত করার চেষ্টা করছেন। তাদের লক্ষ্য হলো, মানুষকে জানানো যে এখনো সময় আছে, এবং আমরা চাইলে অনেক কিছুই করতে পারি।
এই পরিবর্তনের ঢেউয়ের একটি উজ্জ্বল উদাহরণ হলো ব্রিস্টল ওল্ড ভিক থিয়েটারের প্রযোজনা ‘দ্য বিউটিফুল ফিউচার ইজ কামিং’ নাটকটি। এই নাটকে তিনটি যুগ—১৮৫৬, ২০২৭ এবং ২১০০ সালের প্রেক্ষাপটে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব তুলে ধরা হয়েছে।
অতীতে দৃশ্যে, গ্রিনহাউস গ্যাস আবিষ্কারের কৃতিত্ব পাওয়া বিজ্ঞানী ইউনিজ ফুটের (Eunice Foote) জীবনের গল্প ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। ভবিষ্যতের দৃশ্যে, মানুষের জীবন ধারণের আকাঙ্ক্ষা নিয়ে তৈরি হওয়া স্পিটসবার্গেন বীজ ভল্টের (Svalbard seed vault) কথা বলা হয়েছে।
নাটকটির পরিচালক ন্যান্সি মেদিনা (Nancy Medina) বলেন, “পরিসংখ্যানের চেয়ে মানুষের আবেগ অনুভব করানোই আমাদের প্রধান উদ্দেশ্য।”
বর্তমান সময়ের প্রেক্ষাপটে নির্মিত নাটকটি আমাদের মনে করিয়ে দেয়, এখনো আমাদের হাতে নিজেদের ভবিষ্যৎ পরিবর্তনের সুযোগ রয়েছে।
জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষগুলোর কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, “এই সংকট মোকাবিলায় তাদের ভয়ের থেকে বেশি প্রয়োজন টিকে থাকার মানসিকতা।”
অন্যদিকে, সাউদাম্পটন এবং নিউ ফরেস্ট এলাকার তরুণদের নিয়ে ‘ব্রিংগিং দ্য আউটসাইড ইন’ নামে একটি প্রযোজনা তৈরি করা হয়েছে। এই নাটকের মাধ্যমে স্থানীয় লোককথার চরিত্র ইয়ারনাগেটের গল্প তুলে ধরা হয়েছে, যে নিউ ফরেস্টের রক্ষাকর্তা হিসেবে পরিচিত।
স্থানীয় তরুণ-তরুণীদের মধ্যে পরিবেশ রক্ষার চেতনা জাগানো এবং তাদের ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বেগকে দূর করাই এই নাটকের মূল লক্ষ্য।
শুধু তাই নয়, হাস্যরসের মাধ্যমে জলবায়ু পরিবর্তনের মতো গুরুতর বিষয়কে তুলে ধরতে এগিয়ে এসেছেন অনেকে। বার্মিংহাম হিপোড্রোমের নিউ মিউজিক্যাল থিয়েটার বিভাগের জ্যাক গডফ্রে এবং এলি কোট (Ellie Coote) একটি রোমান্টিক কমেডি তৈরি করেছেন, যেখানে পৃথিবী এবং মানবজাতিকে একটি কঠিন সম্পর্কে আবদ্ধ দুটি সত্তা হিসেবে দেখানো হয়েছে।
তাদের নতুন প্রযোজনা ‘হট মেস’ (Hot Mess)-এর মাধ্যমে তারা জলবায়ু পরিবর্তনের বিষয়টিকে মানুষের কাছে আরও সহজভাবে তুলে ধরতে চান।
শুধু মঞ্চ নাটকই নয়, পরিবেশ রক্ষার বার্তা নিয়ে পথে নেমেছে বিশাল আকারের পুতুল দলও। ‘দ্য হার্ডস’ (The Herds) নামক একটি প্রকল্পের আওতায়, কঙ্গো বেসিন থেকে আর্কটিক সার্কেল পর্যন্ত বিশাল এক পথ পরিক্রমা শুরু হয়েছে, যেখানে প্রাণীদের বিশাল আকারের পুতুল ব্যবহার করা হচ্ছে।
এই প্রকল্পের মাধ্যমে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বন্যপ্রাণী ও তাদের আবাসস্থলের ওপর যে মারাত্মক প্রভাব পড়ছে, সে সম্পর্কে সচেতনতা তৈরি করা হচ্ছে।
এসব নাট্যকর্মীর প্রধান লক্ষ্য হলো, হতাশাজনক পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে এসে মানুষের মধ্যে আশা জাগানো এবং সম্মিলিতভাবে পরিবর্তনের জন্য কাজ করতে উৎসাহিত করা।
তাদের মতে, ভয় দেখিয়ে নয়, বরং ভালোবাসার মাধ্যমে মানুষকে পরিবেশ রক্ষার আন্দোলনে উদ্বুদ্ধ করতে হবে।
কারণ, সম্মিলিত প্রচেষ্টাই পারে আমাদের ভবিষ্যৎ পরিবর্তন করতে।
তথ্যসূত্র: The Guardian