বিশ্বজুড়ে জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে আবহাওয়ার চরম রূপ দেখা যাচ্ছে। একদিকে যেমন দীর্ঘস্থায়ী খরা, দাবানল এবং পানির অভাব দেখা দিচ্ছে, তেমনি অতিবৃষ্টির কারণে বাঁধ ভেঙে ভয়াবহ বন্যাও হচ্ছে।
উষ্ণতা বৃদ্ধির কারণে জলবায়ু পরিবর্তনের এই বিরূপ প্রভাবগুলো মানুষ ও পরিবেশের জন্য মারাত্মক হুমকি সৃষ্টি করছে।
২০২৩ সালে ক্যালিফোর্নিয়ায় রেকর্ড পরিমাণ বৃষ্টিপাত ও তুষারপাত হয়। এর ফলে গাছপালা দ্রুত বেড়ে ওঠে, যা পরবর্তীতে খরার কারণে লস অ্যাঞ্জেলেসের ভয়াবহ দাবানলের কারণ হয়।
বিজ্ঞানীরা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে একদিকে যেমন বৃষ্টি কমে যাচ্ছে, তেমনি যখন বৃষ্টি হচ্ছে, তখন তা অতি তীব্র রূপ ধারণ করছে।
আসলে, এর পুরোটা নির্ভর করে জলচক্রের ওপর। জলীয় বাষ্পের মাধ্যমে পানি এক স্থান থেকে অন্য স্থানে যায়।
কিন্তু পৃথিবীর তাপমাত্রা বৃদ্ধির কারণে এই চক্র দ্রুত হচ্ছে। জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার—যেমন কয়লা ও গ্যাস পোড়ানোর ফলে—গরম আবহাওয়া সমুদ্র, নদ-নদী, ও মাটি থেকে আরো বেশি জলীয় বাষ্প শোষণ করছে।
মাটিতে আর্দ্রতা কমে যাওয়ায় খরা দীর্ঘস্থায়ী হচ্ছে, এমনকি কিছু শুষ্ক এলাকাও আরো বিস্তৃত হচ্ছে। বৃষ্টি কম হলেও, যখন হয়, তখন তা তীব্র আকার ধারণ করে।
কারণ, তাপমাত্রা প্রতি ডিগ্রি সেলসিয়াস বাড়লে বাতাসে ৭ শতাংশ বেশি জলীয় বাষ্প ধরে রাখতে পারে।
মিশিগান বিশ্ববিদ্যালয়ের জলবায়ু বিজ্ঞানী জোনাথন ওভারপেক বলেন, “মূলত, বৈশ্বিক উষ্ণতা বায়ুমণ্ডলকে একটি বিশাল স্পঞ্জে পরিণত করছে, যা আরো বেশি আর্দ্রতা শোষণ করতে পারে…এবং যখন বৃষ্টিপাতের উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি হয়, তখন সেই স্পঞ্জকে চাপ দিলে যেমন হয়, তেমন দ্রুত জল বেরিয়ে আসে।”
সমুদ্র এই পরিবর্তনের একটি বড় কারণ। সমুদ্র পৃথিবীর অতিরিক্ত তাপ শোষণ করে।
এর ফলে পানির প্রসারণ ঘটে এবং মেরু অঞ্চলের বরফ গলতে শুরু করে, যা সমুদ্রের উচ্চতা বাড়ায়।
উষ্ণ জল শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় তৈরি করে, যা অল্প সময়ে প্রচুর বৃষ্টি নিয়ে আসে।
উদাহরণস্বরূপ, ২০২৩ সালে, ভূমধ্যসাগরের ঘূর্ণিঝড় ড্যানিয়েলের কারণে লিবিয়ার পূর্বাঞ্চলে ব্যাপক বন্যা হয়। এতে দুটি বাঁধ ভেঙে যায়, এবং ডেরনা শহরে পানির তোড়ে ঘরবাড়ি ভেসে যায়, সেতু ভেঙে যায়, এমনকি মানুষও মারা যায়।
জলবায়ু বিজ্ঞানীরা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণেই এই ধরনের দুর্যোগ আরও বেশি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে তুষারপাতের পরিমাণও কমছে, যা জলচক্রের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। বরফ গলা জল জলাধার ও জলপথগুলোকে সচল রাখতে সাহায্য করে।
কিন্তু সাধারণভাবে তুষারপাত কমে যাচ্ছে, এবং যা পড়ছে, তাও দ্রুত মাটি শোষণ করে নিচ্ছে।
এছাড়াও, শীতকাল উষ্ণ হওয়ার কারণে গাছের বৃদ্ধি দ্রুত হচ্ছে, ফলে বরফ গলা জল বাষ্পীভবনের মাধ্যমে দ্রুত হারিয়ে যাচ্ছে।
তবে বৃষ্টির মতো, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে তীব্র তুষারঝড়ও হতে পারে।
জোনাথন ওভারপেক আরও বলেন, “এই সবকিছুই উষ্ণতার সঙ্গে সম্পর্কিত, এবং আমরা নিশ্চিত যে এর প্রধান কারণ হলো মানুষের কার্যকলাপ।
ভালো খবর হলো, আমরা জানি কীভাবে এটি বন্ধ করতে হয়, যদি আমরা চাই।”
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বাংলাদেশের জন্য পরিস্থিতি আরও গুরুতর হতে পারে।
ঘূর্ণিঝড় এবং সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির কারণে উপকূলীয় অঞ্চলগুলোতে বন্যার ঝুঁকি বাড়ছে।
বৃষ্টিপাতের ধরন পরিবর্তনের ফলে কৃষি ও খাদ্য নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়তে পারে।
এই পরিস্থিতি মোকাবিলায় কার্বন নিঃসরণ কমিয়ে জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি।
তথ্য সূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস