আশ্চর্যজনক! জলবায়ু সংকট মোকাবেলা করেই বাড়বে অর্থনীতি?

বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনের মোকাবিলায় দ্রুত পদক্ষেপ নিলে বিশ্ব অর্থনীতির উন্নতি ঘটবে। উন্নত দেশগুলোর অর্থনৈতিক সহযোগিতা ও উন্নয়ন সংস্থা (ওইসিডি) এবং জাতিসংঘের উন্নয়ন কর্মসূচির (ইউএনডিপি) এক যৌথ গবেষণা প্রতিবেদনে এমনটাই উঠে এসেছে।

জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিলে বিশ্বের অর্থনীতিতে বড় ধরনের ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে বলেও সতর্ক করা হয়েছে।

ওইসিডি ও ইউএনডিপির গবেষণা অনুযায়ী, ২০৪০ সাল নাগাদ জলবায়ু পরিবর্তনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় বিভিন্ন পদক্ষেপ নিলে বিশ্ব জিডিপি’তে (মোট দেশজ উৎপাদন) ০.২৩ শতাংশের বেশি প্রবৃদ্ধি হতে পারে।

শুধু তাই নয়, কার্বন নিঃসরণ হ্রাসের পদক্ষেপ নিলে ২০৫০ সাল নাগাদ উন্নত দেশগুলোতে মাথাপিছু জিডিপি’র প্রবৃদ্ধি ৬০ শতাংশ পর্যন্ত বাড়তে পারে।

একই সময়ে, নিম্ন আয়ের দেশগুলোতে এই হার হতে পারে প্রায় ১২৪ শতাংশ।

গবেষণায় আরও বলা হয়েছে, জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে এখনই পদক্ষেপ নিলে দরিদ্র দেশগুলোতে আগামী এক দশকের মধ্যে ১৭ কোটি ৫০ লাখ মানুষকে দারিদ্র্য থেকে মুক্তি দেওয়া সম্ভব হবে।

অন্যদিকে, জলবায়ু পরিবর্তন যদি চলতেই থাকে, তাহলে এই শতাব্দীতে বিশ্বের জিডিপির এক-তৃতীয়াংশ পর্যন্ত ক্ষতি হতে পারে।

জার্মান সরকারের বার্লিনে আয়োজিত এক সম্মেলনে ইউএনডিপি’র নির্বাহী সচিব আচিম স্টেইনার বলেন, “আমাদের কাছে এখন যে প্রমাণ আছে, তা হলো জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য বিনিয়োগ করলে আমরা পিছিয়ে যাব না।

বরং জিডিপি’র সামান্য বৃদ্ধি দেখতে পাব, যা প্রথমে ছোট মনে হতে পারে, কিন্তু দ্রুত বাড়তে থাকবে।”

জাতিসংঘের জলবায়ু বিষয়ক প্রধান সাইমন স্টিয়েল বার্লিনে দেওয়া এক ভাষণে সতর্ক করে বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে দ্রুত পদক্ষেপ না নিলে ইউরোপের অর্থনীতি মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

তিনি জানান, চরম আবহাওয়ার কারণে শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়ে ইউরোপের জিডিপি ১ শতাংশ কমতে পারে এবং ২০৫০ সাল নাগাদ বার্ষিক ২.৩ শতাংশ হারে অর্থনৈতিক সংকোচন হতে পারে।

যদিও এই সংখ্যাগুলো খুব বেশি মনে নাও হতে পারে, তবে ক্ষতির ধারাবাহিকতা বজায় থাকলে তা একটি গুরুতর উদ্বেগের কারণ হবে।

উদাহরণস্বরূপ, ২০০৮-০৯ সালের অর্থনৈতিক মন্দায় ইউরোপীয় ইউনিয়নে (ইইউ) ৫.৫ শতাংশ সংকোচন হয়েছিল, তবে কয়েক বছরের মধ্যেই পুনরুদ্ধার শুরু হয়েছিল।

জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে যে ক্ষতি হবে, তা প্রতি বছর একটি গুরুতর মন্দার সমতুল্য হবে।

বিষয়টি ব্যাখ্যা করে সাইমন স্টিয়েল বলেন, “[জলবায়ু পরিবর্তন] একটি স্থায়ী অর্থনৈতিক মন্দার কারণ হবে।

প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে যখন অনেক অঞ্চল বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়বে এবং খাদ্য উৎপাদন হ্রাস পাবে, তখন আরও কয়েক মিলিয়ন মানুষ অভ্যন্তরীণভাবে এবং সীমান্ত অতিক্রম করে স্থানান্তরিত হতে বাধ্য হবে।”

তিনি আরও যোগ করেন, “জলবায়ু সংকট একটি জরুরি জাতীয় নিরাপত্তা সংকট, যা প্রতিটি মন্ত্রিসভার আলোচ্যসূচির শীর্ষে থাকা উচিত।”

২০৫০ সালের মধ্যে কার্বন নিঃসরণ শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনার লক্ষ্য নিয়ে সমালোচকদের অভিযোগ ছিল, জীবাশ্ম জ্বালানির পরিবর্তে একটি কম কার্বন অর্থনীতির দিকে ঝুঁকলে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি কমে যাবে এবং বিশ্ব অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

তবে বিশেষজ্ঞদের মতে, নবায়নযোগ্য শক্তিতে বিনিয়োগের খরচ ক্ষতির তুলনায় অনেক কম।

উদাহরণস্বরূপ, ২০৫০ সাল পর্যন্ত যুক্তরাজ্যের জিডিপির ০.২ শতাংশ খরচ হতে পারে।

দরিদ্র দেশগুলোতে জলবায়ু অর্থায়ন উন্নত দেশগুলোর জন্যও উপকারী হবে।

আন্তর্জাতিক নবায়নযোগ্য শক্তি সংস্থা (আইরিনা) থেকে প্রকাশিত তথ্যে দেখা যায়, গত বছর নবায়নযোগ্য জ্বালানি সক্ষমতার ১৫ শতাংশ বৃদ্ধি হয়েছে, যা একটি রেকর্ড।

এই উন্নতির প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ এসেছে চীন থেকে, যা সবুজ জ্বালানি উৎপাদনের কেন্দ্র হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে।

আইরিনার মহাপরিচালক ফ্রান্সেস্কো লা ক্যামেরা বলেন, “নবায়নযোগ্য জ্বালানির ক্রমাগত বৃদ্ধি প্রমাণ করে যে এগুলো অর্থনৈতিকভাবে লাভজনক এবং সহজে ব্যবহারযোগ্য।”

তবে জীবাশ্ম জ্বালানিতেও বিনিয়োগ অব্যাহত রয়েছে।

২০২৩ সালে বিশ্বজুড়ে পরিচ্ছন্ন জ্বালানি খাতে প্রায় ১৫ লাখ নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে।

একই সময়ে, জীবাশ্ম জ্বালানি শিল্পে প্রায় ১০ লাখ নতুন চাকরি যুক্ত হয়েছে।

তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *