জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্কট বাড়ছে, বাড়ছে প্রাকৃতিক দুর্যোগের সংখ্যা। বন্যা, ঘূর্ণিঝড়, দাবানলের মতো ঘটনাগুলো এখন নিয়মিত হয়ে দাঁড়িয়েছে।
বিজ্ঞানীরা বলছেন, এই পরিস্থিতি মোকাবিলায় দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে ভবিষ্যতে বিপদ আরও বাড়বে। তবে আশার কথা হলো, এই সংকট থেকে বাঁচতে এবং টিকে থাকতে উদ্ভাবকেরা নতুন নতুন উপায় খুঁজে বের করছেন।
তাঁরা পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তির ব্যবহার করছেন, যা আমাদের জীবনযাত্রাকে আরও টেকসই করতে পারে।
নেদারল্যান্ডসের আমস্টারডামের কথা ধরা যাক। সেখানে সমুদ্রের উচ্চতা বাড়ার সঙ্গে তাল মিলিয়ে তৈরি হয়েছে ভাসমান বসতি, যা “স্কুনশিপ” নামে পরিচিত।
এই ধরনের উদ্ভাবন জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে হওয়া বিপদ থেকে বাঁচতে সাহায্য করতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডাতেও দেখা যাচ্ছে একই ধরনের উদ্যোগ। সেখানকার একজন উদ্যোক্তা ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাব থেকে বাঁচতে দুর্যোগ-প্রতিরোধী বাড়ি তৈরি করছেন।
ক্যালিফোর্নিয়ার লস অ্যাঞ্জেলেস কাউন্টিতে দাবানলের সময় কিছু বাড়ি অক্ষত ছিল।
এর কারণ হলো, সেখানকার নির্মাতারা বিশেষ নকশা ব্যবহার করেছিলেন। ক্যালিফোর্নিয়ার প্যারাডাইস শহরে দাবানলের পাঁচ বছর পরও সেখানকার মানুষজন ঘুরে দাঁড়াচ্ছেন। তাঁরা নতুন করে জীবন শুরু করার চেষ্টা করছেন।
ফ্লোরিডার বাবকক র্যাঞ্চ হলো আমেরিকার প্রথম সৌরবিদ্যুৎ কেন্দ্র দ্বারা চালিত শহর।
এটি দুটি বড় ধরনের ঘূর্ণিঝড় সফলভাবে মোকাবেলা করেছে, যেখানে কোনো বন্যা হয়নি এবং বিদ্যুতের বিভ্রাটও ঘটেনি।
জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় উন্নত দেশগুলোও চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
লন্ডন থেকে সিলিকন ভ্যালি পর্যন্ত বিভিন্ন স্থানে উদ্ভাবকেরা পরিবেশবান্ধব সমাধান নিয়ে কাজ করছেন।
তাঁরা এমন সব প্রযুক্তি তৈরি করছেন, যা ঘর গরম করার খরচ অর্ধেক কমিয়ে দিতে পারে। এছাড়া, আকাশপথে পণ্য পরিবহনের জন্য ছোট আকারের ড্রোন ব্যবহারের পরীক্ষাও চলছে।
বর্তমানে সৌর ও বায়ু বিদ্যুতের দাম তেল ও গ্যাসের চেয়ে কম হওয়ায় অনেক বিশেষজ্ঞ মনে করেন, পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তি তৈরি করে কার্বন নিঃসরণ কমানো সম্ভব।
টম চি নামের একজন উদ্ভাবক ও জলবায়ু বিষয়ক বিনিয়োগকারী বলেছেন, “আমরা যদি এমন কিছু তৈরি করতে পারি, যা একইসঙ্গে পরিবেশের জন্য ভালো এবং অর্থনৈতিকভাবে লাভজনক হয়, তাহলে কেমন হয়?”
তবে জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় রাজনৈতিক সমর্থনও জরুরি।
অনেক দেশে পরিবেশ রক্ষার আইন প্রণয়ন এবং এই খাতে বিনিয়োগের পরিকল্পনা নেওয়া হচ্ছে।
উদাহরণস্বরূপ, “ইনফ্লেশন রিডাকশন অ্যাক্ট” নামের একটি আইনের মাধ্যমে জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জন্য বিপুল পরিমাণ অর্থ বিনিয়োগের কথা বলা হয়েছে।
আমাদের মনে রাখতে হবে, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব থেকে বাঁচতে হলে উদ্ভাবন এবং প্রযুক্তির পাশাপাশি প্রয়োজন সমন্বিত প্রচেষ্টা।
প্রতিটি দেশের সরকার, বিভিন্ন সংস্থা এবং সাধারণ মানুষকে এক হয়ে কাজ করতে হবে।
তথ্য সূত্র: সিএনএন