গরমকালে সাদা, শীতে কালো! বাড়ির রং বদলের অভিনব উপায়!

ভবনগুলির রং কি ঋতু পরিবর্তনের সাথে সাথে বদলালে কেমন হয়? এমনটাই যদি হয়, তাহলে কেমন হবে? সম্প্রতি, জো ডসেট নামের একজন উদ্ভাবক এমন এক ধরনের বিশেষ রং তৈরি করেছেন, যা আবহাওয়ার পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে নিজের রং বদলায়। এই উদ্ভাবন জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব কমাতে সহায়ক হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের বাসিন্দা জো ডসেট, যিনি পেশায় একজন ডিজাইনার ও উদ্ভাবক, পরিবেশ-বান্ধব একটি বাড়ি তৈরি করতে চেয়েছিলেন। তিনি তার বাড়ির বাইরের অংশে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব কমানোর বিষয়ে চিন্তা করতে শুরু করেন। বিভিন্ন রঙের মডেল তৈরি করে পরীক্ষার মাধ্যমে তিনি বুঝতে পারেন, শীতকালে কালো রং ঘরকে গরম রাখতে এবং গ্রীষ্মকালে সাদা রং ঘরকে ঠান্ডা রাখতে সহায়ক। কিন্তু প্রতি বছর দুবার বাড়ির রং করা তো সম্ভব নয়। তাই তিনি এমন একটি সমাধান চেয়েছিলেন, যা স্বয়ংক্রিয়ভাবে এই কাজটি করতে পারে।

ছোটবেলার একটি স্মৃতি থেকে তিনি এই ধারণার জন্ম দেন। মুড রিং-এর কথা মনে আছে? যা ব্যবহারকারীর শরীরের তাপমাত্রার সঙ্গে সঙ্গে রং পরিবর্তন করে। ডসেট সেই একই রকম প্রক্রিয়া ব্যবহার করেছেন। থার্মোক্রোমিক উপাদান ব্যবহার করে তিনি এমন একটি রং তৈরি করেছেন, যা নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় অতিবেগুনি রশ্মি শুষে নিয়ে রং পরিবর্তন করতে পারে।

পরীক্ষামূলকভাবে এই রং ব্যবহারের পর, ডসেট লক্ষ্য করেন, সরাসরি সূর্যের আলোতে রংটি ধীরে ধীরে নষ্ট হয়ে যাচ্ছিল। এরপর তিনি এই সমস্যা সমাধানে একটি সুরক্ষা উপাদান যোগ করেন। ফলে, রংটি এখন তাপমাত্রা অনুযায়ী গাঢ় ধূসর থেকে হালকা হয়ে যায়। প্রায় ২৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে রংটি গাঢ় থাকে এবং তাপমাত্রা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এটি হালকা হতে শুরু করে।

এই উদ্ভাবন বিশেষভাবে নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চলের মানুষের জন্য উপকারী হতে পারে। ডসেট মনে করেন, উত্তর আমেরিকা, ইউরোপ ও এশিয়ার মতো অঞ্চলের মানুষের জন্য এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ উদ্ভাবন হতে পারে, যেখানে উষ্ণতম মাসগুলোতে গড় তাপমাত্রা প্রায় ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি থাকে।

জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে গত বছর ছিল উষ্ণতম বছর। ডসেট মনে করেন, তার এই উদ্ভাবন জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে একটি পদক্ষেপ। তার মতে, এই প্রযুক্তি ৭০ বছর আগেও তৈরি করা সম্ভব ছিল, কিন্তু সে সময় এর প্রয়োজনীয়তা ছিল না।

ভবনগুলোতে এই বিশেষ রং ব্যবহারের ফলে বিদ্যুতের ব্যবহার কমানো সম্ভব হতে পারে। কারণ, ঘর গরম বা ঠান্ডা রাখার জন্য এয়ার কন্ডিশনার বা হিটারের উপর নির্ভরতা কমে আসবে। ইন্টারন্যাশনাল এনার্জি এজেন্সির মতে, বিশ্বে মোট শক্তির প্রায় ৩০ শতাংশ খরচ হয় ভবনগুলোতে। ডসেটের হিসাব অনুযায়ী, এই রং ব্যবহারের ফলে বাড়ির মালিকরা তাদের বিদ্যুৎ বিলের ১৫ থেকে ৩০ শতাংশ পর্যন্ত সাশ্রয় করতে পারবেন।

ডসেট আরও মনে করেন, প্রকৃতির মতো ভবনগুলোও যদি ঋতু পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে তাদের রূপ পরিবর্তন করে, তবে এতে এক ধরনের সৌন্দর্য যোগ হবে। তিনি জানান, এই রং সাদা-কালো ছাড়াও বিভিন্ন রঙে তৈরি করা যেতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, গ্রীষ্মকালে হালকা নীল এবং শীতকালে গাঢ় নীল রং ব্যবহার করা যেতে পারে।

এই রং বাজারে আসতে এখনো ৫ থেকে ১০ বছর সময় লাগতে পারে। ডসেট এই প্রযুক্তির বাণিজ্যিকীকরণের জন্য একজন অংশীদার খুঁজছেন। তার মতে, জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে লড়াই একটি ধারাবাহিক প্রক্রিয়া। এই রং সেই লড়াইয়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হতে পারে।

তথ্য সূত্র: সিএনএন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *