সাগরে বিপর্যয়! নতুন বাস্তবতায় ধ্বংসের পথে আমাদের গ্রহ?

বিশ্বজুড়ে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব ক্রমশ স্পষ্ট হচ্ছে, আর এর ফলস্বরূপ মারাত্মক বিপর্যয়ের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে পৃথিবী। সম্প্রতি ১৬০ জন বিজ্ঞানীর একটি গবেষণা প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ইতিমধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ ‘টিপিং পয়েন্ট’-এ পৌঁছে গেছে বিশ্ব, যার ফলস্বরূপ প্রবাল প্রাচীরগুলো ব্যাপকভাবে ধ্বংস হতে শুরু করেছে।

এই ধ্বংসযজ্ঞ শুধু সমুদ্রের জীববৈচিত্র্যের জন্য হুমকি নয়, বরং এটি খাদ্য নিরাপত্তা এবং উপকূলীয় অঞ্চলের সুরক্ষার ক্ষেত্রেও মারাত্মক প্রভাব ফেলবে।

গবেষণা বলছে, মানুষের জীবাশ্ম জ্বালানি পোড়ানো এবং তাপমাত্রা বৃদ্ধির কারণে ইতোমধ্যে চরম আবহাওয়া দেখা যাচ্ছে। তীব্র তাপপ্রবাহ, বন্যা, খরা এবং দাবানলের মতো ঘটনাগুলো এখন নিয়মিত হয়ে দাঁড়িয়েছে।

বিজ্ঞানীরা আশঙ্কা করছেন, পরিস্থিতি যদি এমনই চলতে থাকে, তাহলে পৃথিবীর গুরুত্বপূর্ণ প্রাকৃতিক ব্যবস্থাগুলো, যেমন – আমাজন বনভূমি এবং মেরু অঞ্চলের বরফের স্তর, সম্পূর্ণভাবে ভেঙে পড়তে পারে। এর ফলে বিশ্বজুড়ে দেখা দেবে আরও বড় ধরনের বিপর্যয়।

গবেষণা প্রতিবেদনে জলবায়ু পরিবর্তনের মারাত্মক প্রভাব সম্পর্কে সতর্ক করে বলা হয়েছে, আমরা দ্রুত এমন অনেকগুলো ‘টিপিং পয়েন্ট’-এর দিকে এগিয়ে যাচ্ছি, যা আমাদের পৃথিবীকে সম্পূর্ণ বদলে দিতে পারে এবং মানুষ ও প্রকৃতির জন্য ভয়াবহ পরিণতি ডেকে আনতে পারে।

বিজ্ঞানীরা বলছেন, উষ্ণতা বৃদ্ধির কারণে ২০২৩ সাল থেকে বিশ্বের প্রবাল প্রাচীরগুলোতে ব্যাপকহারে ‘ব্লীচিং’ বা সাদা হয়ে যাওয়ার ঘটনা ঘটছে, যা আগে কখনও দেখা যায়নি। সমুদ্রে তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ায় ইতিমধ্যে ৮০ শতাংশেরও বেশি প্রবাল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রবাল প্রাচীরগুলো সমুদ্রের বাস্তুতন্ত্রের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এগুলো সামুদ্রিক প্রজাতিদের আবাসস্থল এবং খাদ্য নিরাপত্তার জন্য অপরিহার্য। উপরন্তু, তারা উপকূলীয় অঞ্চলকে ঝড় থেকে রক্ষা করে এবং বিশ্ব অর্থনীতিতে বিশাল অবদান রাখে।

জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে যদি এই প্রবালগুলো ধ্বংস হয়ে যায়, তবে এর ফলস্বরূপ অনেক সামুদ্রিক প্রজাতি বিলুপ্ত হয়ে যাবে এবং উপকূলীয় অঞ্চলে বসবাসকারী মানুষের জীবনযাত্রা কঠিন হয়ে পড়বে।

বিজ্ঞানীরা আরও একটি উদ্বেগের কথা জানিয়েছেন। তাদের মতে, তাপমাত্রা যদি আরও বাড়তে থাকে, তাহলে আটলান্টিক মহাসাগরের একটি গুরুত্বপূর্ণ স্রোত ব্যবস্থা, যা AMOC নামে পরিচিত, সেটি ভেঙে পড়তে পারে।

এর ফলে বিশ্বের কিছু অংশে তাপমাত্রা ভয়ানকভাবে কমে যাবে, আবার কিছু অংশে বাড়তে থাকবে। এছাড়া, বর্ষা মৌসুমেও দেখা দেবে বড় ধরনের পরিবর্তন এবং সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি পাবে। বিজ্ঞানীরা বলছেন, বর্তমান নীতিগুলো এই ধরনের দ্রুত এবং অপরিবর্তনীয় পরিবর্তনের জন্য প্রস্তুত নয়।

এই পরিস্থিতিতে বিজ্ঞানীরা দ্রুত কার্বন নিঃসরণ কমানো এবং বায়ুমণ্ডল থেকে কার্বন অপসারণের ওপর জোর দিয়েছেন। একইসঙ্গে, সৌরবিদ্যুৎ এবং বৈদ্যুতিক গাড়ির মতো পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ানোর কথা বলা হয়েছে।

আসন্ন জলবায়ু সম্মেলন, COP30-এর দিকে তাকিয়ে বিজ্ঞানীরা বলছেন, দেশগুলোকে তাদের কার্বন নিঃসরণ কমানোর লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করতে হবে। এখনই যদি কার্যকর পদক্ষেপ না নেওয়া হয়, তবে আমাজন বনভূমি, বরফের স্তর এবং গুরুত্বপূর্ণ সমুদ্রস্রোতগুলোও হারিয়ে যেতে পারে, যা মানবজাতির জন্য একটি ভয়াবহ পরিণতি ডেকে আনবে।

তথ্যসূত্র: CNN

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *