শিরোনাম: জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় বিশ্ব নেতাদের দ্বিচারিতা: একটি নতুন বইয়ের বিশ্লেষণ ও বাংলাদেশের জন্য এর গুরুত্ব
বৈশ্বিক জলবায়ু নীতি নিয়ে সম্প্রতি প্রকাশিত হয়েছে একটি নতুন বই। “এ ক্লাইমেট অফ ট্রুথ: হোয়াই উই নিড ইট অ্যান্ড হাউ টু গেট ইট” (A Climate of Truth: Why We Need It and How to Get It) শীর্ষক এই বইটির লেখক হলেন মাইক বার্নার্স-লি।
বইটিতে জলবায়ু পরিবর্তন (Climate Change) মোকাবিলায় বিশ্ব নেতাদের ব্যর্থতা এবং কার্বন নিঃসরণ হ্রাসে তাদের দ্বিচারিতার কঠোর সমালোচনা করা হয়েছে। লেখকের মতে, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সৃষ্ট সংকট, খাদ্য নিরাপত্তা (Food Security) হ্রাস, জীববৈচিত্র্যের (Biodiversity) ক্ষতি এবং দূষণ—এগুলো একত্রে একটি ‘পলিক্রাইসিস’ (Polycrisis) তৈরি করেছে, যা মানবজাতির জন্য এক চরম বিপদ ডেকে আনছে।
বার্নার্স-লি তার বইয়ে বিশেষভাবে যুক্তরাজ্যের (UK) তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক এবং জ্বালানি বিষয়ক মন্ত্রী গ্রান্ট শাপসের নীতির সমালোচনা করেছেন। তিনি উল্লেখ করেন, উত্তর সাগরে তেল ও গ্যাস উৎপাদন বাড়ানোর যে সিদ্ধান্ত তারা নিয়েছিলেন, তা ছিল একটি ভুল পদক্ষেপ।
কারণ, যুক্তরাজ্যের অভ্যন্তরীণ তেলের দাম বিশ্ব বাজারের ওপর নির্ভরশীল, যা তাদের এই সিদ্ধান্তে খুব একটা প্রভাবিত হতো না। উপরন্তু, এই পদক্ষেপের কারণে ২০৫০ সালের মধ্যে কার্বন নিঃসরণ শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনার যে লক্ষ্যমাত্রা, তা পূরণ করা কঠিন হয়ে পড়বে।
বইটিতে জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণে ব্যর্থতার জন্য বিভিন্ন ব্যক্তি ও গোষ্ঠীকে দায়ী করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে—বিভিন্ন প্রভাবশালী থিংক ট্যাঙ্ক (Think tank), জীবাশ্ম জ্বালানি কোম্পানি (Fossil fuel company) এবং ডানপন্থী মিডিয়া সংস্থাগুলো। লেখকের মতে, এদের ভুল নীতির কারণে জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে লড়াই দুর্বল হয়ে পড়েছে।
অন্যদিকে, বার্নার্স-লি কিছু সম্ভাব্য পদক্ষেপের কথা উল্লেখ করেছেন, যা জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সহায়তা করতে পারে। এর মধ্যে রয়েছে—গণমাধ্যম বাছাইয়ের ক্ষেত্রে সচেতনতা বৃদ্ধি, রাজনীতিবিদদের ওপর চাপ সৃষ্টি করা এবং পরিবেশবান্ধব প্রতিষ্ঠানে কাজ করা।
যদিও সমালোচকেরা বলছেন, এই প্রস্তাবগুলো যথেষ্ট জোরালো নয়।
বার্নার্স-লির বইয়ের একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো, জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষের সচেতনতা ও পদক্ষেপ গ্রহণের আগ্রহের বিষয়টি তুলে ধরা। একটি জরিপে দেখা গেছে, ১২৫টি দেশের অধিকাংশ মানুষ জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য ব্যক্তিগতভাবে ত্যাগ স্বীকার করতে রাজি আছে।
তারা তাদের আয়ের একটি অংশ পরিবেশ সুরক্ষার জন্য ব্যয় করতে প্রস্তুত।
জলবায়ু পরিবর্তনের প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের (Bangladesh) জন্য এই বইটির গুরুত্ব অপরিসীম। একটি উপকূলীয় দেশ হিসেবে জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব—যেমন, সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি, বন্যা, ঘূর্ণিঝড়, এবং খাদ্য নিরাপত্তা সংকট—থেকে বাংলাদেশ সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে।
বার্নার্স-লির বিশ্লেষণ অনুযায়ী, বিশ্বনেতাদের দ্বিচারিতা এবং কার্যকর পদক্ষেপের অভাবে বাংলাদেশের মতো দেশগুলো আরও বেশি ক্ষতির শিকার হবে। তাই, জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় জরুরি ভিত্তিতে পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন।
বার্নার্স-লির এই বইটি বিশ্বজুড়ে জলবায়ু নীতি নিয়ে নতুন করে আলোচনার জন্ম দিয়েছে। একইসঙ্গে, জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে ব্যক্তি, সমাজ এবং নীতিনির্ধারকদের আরও বেশি সচেতন ও দায়িত্বশীল হওয়ার প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্ব আরোপ করেছে।
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান