বিশ্বজুড়ে জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে লড়াই একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, আর এতে কার্বন নিঃসরণ কমানোর চেষ্টা চলছে।
সুইজারল্যান্ডভিত্তিক কোম্পানি ক্লাইমওয়ার্কস (Climeworks), এই দৌড়ে “সরাসরি বায়ু ক্যাপচার” (Direct Air Capture বা DAC) প্রযুক্তির মাধ্যমে কার্বন ডাই অক্সাইড (carbon dioxide) গ্যাস বাতাস থেকে শুষে নেওয়ার কাজ করে। কিন্তু সম্প্রতি তারা কর্মীদের ২০ শতাংশ ছাঁটাই করার ঘোষণা দিয়েছে, যা এই প্রযুক্তির ভবিষ্যৎ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে।
বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলায় বাংলাদেশের মতো দেশগুলোর জন্য কার্বন নিঃসরণ কমানো জরুরি।
ক্লাইমওয়ার্কসের এই প্রযুক্তি অনেকটা ভ্যাকুয়াম ক্লিনার-এর মতো কাজ করে। তারা বাতাস থেকে কার্বন শুষে নেয় এবং পরে এটিকে হয় পুনর্ব্যবহার করে, না হয় মাটির গভীরে জমা করে রাখে, যা পাথরের মতো শক্ত হয়ে যায়।
কোম্পানিটি এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বিভিন্ন কোম্পানির কাছ থেকে কার্বন ক্রেডিট বিক্রি করে অর্থ উপার্জন করে।
কিন্তু খবর হলো, ক্লাইমওয়ার্কস বর্তমানে বেশ কিছু সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে।
কোম্পানিটি সম্প্রতি ঘোষণা করেছে যে তারা তাদের কর্মী বাহিনীর প্রায় ২০ শতাংশ ছাঁটাই করবে।
এর কারণ হিসেবে তারা অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা এবং জলবায়ু নীতিতে পরিবর্তনের কথা উল্লেখ করেছে।
কোম্পানির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ক্রিস্টোফ গেবাল্ড এবং জান উরজবাশার এক বিবৃতিতে জানিয়েছেন, “আমরা সবসময় জানতাম এই পথটা কঠিন হবে। আজ আমরা একটি কঠিন সময়ের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছি।”
যুক্তরাষ্ট্রে তাদের একটি প্রকল্প নিয়েও অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে।
লুইজিয়ানাতে একটি নতুন প্ল্যান্ট স্থাপনের পরিকল্পনা ছিল, যার জন্য বাইডেন প্রশাসন ৫০ মিলিয়ন ডলার (প্রায় ৫৩০ কোটি টাকার বেশি) অর্থ সহায়তা দিয়েছিল।
কিন্তু সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জলবায়ু তহবিলে কাটছাঁট করায় সেই প্রকল্পের ভবিষ্যৎ এখন ঝুঁকির মুখে।
ক্লাইমওয়ার্কস তাদের প্ল্যান্টগুলোর সম্পূর্ণ ক্ষমতা এখনো পর্যন্ত ব্যবহার করতে পারেনি, এমন অভিযোগও উঠেছে।
উদাহরণস্বরূপ, আইসল্যান্ডের Orca প্ল্যান্ট বছরে সর্বোচ্চ ৪,০০০ টন কার্বন অপসারণ করতে পারলেও, ২০২১ সালে চালু হওয়ার পর থেকে এটি এক বছরে ১,৭০০ টনের বেশি কার্বন অপসারণ করতে পারেনি।
সম্প্রতি চালু হওয়া Mammoth প্ল্যান্ট বছরে সর্বোচ্চ ৩৬,০০০ টন কার্বন অপসারণ করতে পারলেও, এক বছরে এটি মাত্র ৮০০ টনের বেশি কার্বন অপসারণ করতে পেরেছে।
কোম্পানিটির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, “উদ্যোগের শুরুতে কিছু সমস্যা থাকে, তবে আমরা প্রযুক্তির উন্নতি অব্যাহত রাখব।”
তবে সমালোচকরা বলছেন, ক্লাইমওয়ার্কসের এই সমস্যাগুলো সরাসরি বায়ু ক্যাপচার প্রযুক্তির সীমাবদ্ধতাকেই তুলে ধরে।
বাফেলো বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ ও টেকসই উন্নয়ন বিভাগের অধ্যাপক হলি বাকের মতে, এই প্রযুক্তি এখনো পর্যন্ত খুব বেশি কার্যকর নয় এবং এটি বেশ ব্যয়বহুল।
কার্বন ক্যাপচার প্রযুক্তি কতটা সফল হবে, তা নির্ভর করবে প্রযুক্তির উন্নতি, কার্বন অপসারণের বাজার তৈরি এবং নীতিগত স্থিতিশীলতার ওপর।
জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বাংলাদেশের মতো দেশগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, তাই কার্বন নিঃসরণ কমানোর বৈশ্বিক প্রচেষ্টায় এই ধরনের প্রযুক্তির ভবিষ্যৎ খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
তথ্য সূত্র: সিএনএন