আতঙ্কের খবর! ক্লাউনফিশদের শরীরে কি হচ্ছে?

**উষ্ণায়নের প্রভাব: ক্লাউনফিশের জীবনধারণে টিকে থাকতে দেহের সংকোচন**

বিশ্বজুড়ে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সমুদ্রের তাপমাত্রা বাড়ছে, যার ফলে সমুদ্রের জীববৈচিত্র্যের ওপর মারাত্মক প্রভাব পড়ছে। সম্প্রতি এক গবেষণায় জানা গেছে, উষ্ণায়নের কারণে প্রবাল প্রাচীরের অন্যতম আকর্ষণীয় মাছ, ক্লাউনফিশ (Clownfish) আকারে ছোট হয়ে যাচ্ছে।

বিজ্ঞানীরা বলছেন, এটি সম্ভবত তাদের উষ্ণতা-বৃদ্ধি পাওয়া পরিবেশে টিকে থাকার কৌশল।

গবেষণাটি চালানো হয়েছে পাপুয়া নিউ গিনির কিম্বি বে-তে (Kimbe Bay)। এখানকার ক্লাউনফিশদের ওপর নজর রাখেন বিজ্ঞানীরা।

তাঁরা দেখেছেন, সমুদ্রের তাপমাত্রা যখন স্বাভাবিকের চেয়ে ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত বেড়ে গিয়েছিল, তখন ক্লাউনফিশগুলো ছোট হতে শুরু করে।

গবেষণায় নেতৃত্ব দেন নিউক্যাসল ইউনিভার্সিটির গবেষক মেলিসা ভারস্টিগ। তাঁর পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী, প্রায় ৭৯ শতাংশ পুরুষ এবং ৭১ শতাংশ স্ত্রী ক্লাউনফিশ আকারে ছোট হয়ে গিয়েছিল।

গবেষকরা জানিয়েছেন, ক্লাউনফিশদের ছোট হয়ে যাওয়ার কারণ এখনো পুরোপুরি নিশ্চিত নয়।

তবে কিছু সম্ভাব্য কারণ তারা উল্লেখ করেছেন। প্রথমত, উষ্ণতা বৃদ্ধির কারণে তাদের বাসস্থান, অর্থাৎ সমুদ্রের অ্যানিমোন (Anemone) নামক জীবের আকার ছোট হয়ে যেতে পারে।

ক্লাউনফিশেরা সাধারণত এই অ্যানিমোনের ভেতরেই থাকে এবং তাদের আকারের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে তারা বাড়ে।

দ্বিতীয়ত, খাদ্যের অভাব বা অক্সিজেনের স্বল্পতার কারণেও মাছগুলো ছোট হতে পারে।

ছোট আকারের মাছের খাদ্য এবং অক্সিজেনের চাহিদাও তুলনামূলকভাবে কম থাকে।

গবেষণায় আরও দেখা গেছে, যে ক্লাউনফিশেরা তাদের সঙ্গীর সঙ্গে একসাথে ছোট হয়েছিল, তাদের বাঁচার সম্ভাবনা বেশি ছিল।

এটি সম্ভবত তাদের প্রজনন ক্ষমতার সঙ্গে সম্পর্কিত।

ক্লাউনফিশদের মধ্যে সামাজিক সম্পর্ক বেশ জটিল।

একটি দলে সাধারণত একটি প্রভাবশালী স্ত্রী এবং একটি প্রজননক্ষম পুরুষ থাকে।

কোনো কারণে যদি প্রভাবশালী স্ত্রী মারা যায়, তবে পুরুষটি স্ত্রীতে পরিণত হয় এবং দলের অন্য কোনো পুরুষ তার স্থান নেয়।

পরিবেশ বিজ্ঞানীরা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে পৃথিবীর অনেক প্রাণীই তাদের আকার পরিবর্তন করছে।

মেরু অঞ্চলের কিছু পাখির আকার ছোট হয়ে যাচ্ছে, আবার এল নিনো’র (El Niño) বছরগুলোতে সামুদ্রিক ইগুয়ানারাও (Marine Iguanas) ছোট হয়ে যায়।

এই ধরনের পরিবর্তনগুলো সম্ভবত পরিবেশের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার একটি কৌশল।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ক্লাউনফিশের এই নতুন বৈশিষ্ট্য জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাবের একটি উদাহরণ।

যেমন বাংলাদেশের সুন্দরবন অঞ্চলের ম্যানগ্রোভ বনগুলি সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির কারণে হুমকির সম্মুখীন হচ্ছে, তেমনই বিশ্বের প্রবাল প্রাচীরগুলোও উষ্ণায়নের কারণে বিলুপ্তির পথে।

জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সমুদ্রের বাস্তুতন্ত্রে যে পরিবর্তন আসছে, তা গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করা জরুরি।

বিজ্ঞানীরা মনে করেন, এই গবেষণা জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব এবং জীববৈচিত্র্যের উপর এর প্রভাব সম্পর্কে আরও বিস্তারিত জানতে সাহায্য করবে।

তথ্যসূত্র: ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *