ফিফা ক্লাব বিশ্বকাপ: ট্যাক্সের গেরোয় ক্লাবগুলি, বিপুল অঙ্কের ক্ষতির আশঙ্কা।
বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় ফুটবল টুর্নামেন্টগুলোর মধ্যে অন্যতম ফিফা ক্লাব বিশ্বকাপ। এই টুর্নামেন্টকে কেন্দ্র করে ফুটবলপ্রেমীদের উন্মাদনা থাকে তুঙ্গে।
সম্প্রতি জানা গেছে, আসন্ন ক্লাব বিশ্বকাপে অংশগ্রহণকারী দলগুলোর উপর ট্যাক্স (কর) নিয়ে জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে। এর ফলে দলগুলোর কোটি কোটি ডলার ক্ষতির সম্মুখীন হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে।
আসন্ন ক্লাব বিশ্বকাপের আসর বসতে চলেছে যুক্তরাষ্ট্রে। যেখানে অংশ নিতে যাওয়া দলগুলোর জন্য এখনো পর্যন্ত ট্যাক্স ছাড় নিশ্চিত করতে পারেনি ফিফা।
টুর্নামেন্টের প্রাইজমানি প্রায় ১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার (প্রায় ১১,০০০ কোটি টাকা)। বিজয়ী দলের জন্য সর্বোচ্চ পুরস্কারের অর্থমূল্য ধরা হয়েছে ১২৫.৮ মিলিয়ন মার্কিন ডলার (প্রায় ১,৩৮৪ কোটি টাকা)।
কিন্তু ট্যাক্স সংক্রান্ত জটিলতা নিরসন না হলে, দলগুলোকে তাদের নিজ দেশের করের পাশাপাশি, যুক্তরাষ্ট্রের করও দিতে হতে পারে। ফলে বিশাল অঙ্কের এই অর্থ থেকে বঞ্চিত হতে পারে ক্লাবগুলো।
এই বিশ্বকাপে ইউরোপের শীর্ষস্থানীয় ক্লাব – চেলসি, ম্যানচেস্টার সিটি, প্যারিস সেন্ট জার্মেইয়ের মতো দলগুলোসহ অন্তত ২৯টি দল অংশ নেবে। ক্লাবগুলোর মধ্যে ট্যাক্স নিয়ে এই জটিলতা তৈরি হওয়ায় স্বাভাবিকভাবেই ক্ষতির সম্মুখীন হওয়ার সম্ভবনা সবচেয়ে বেশি এই দলগুলোর।
জানা গেছে, ফিফা ইতোমধ্যেই ২০২৬ সালের বিশ্বকাপ আয়োজনের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে বিভিন্ন ধরনের কর ছাড় আদায় করতে সক্ষম হয়েছে। কিন্তু ক্লাব বিশ্বকাপের সূচি তুলনামূলকভাবে দেরিতে চূড়ান্ত হওয়ায়, একই ধরনের সুবিধা এখনো পর্যন্ত পাওয়া যায়নি।
টুর্নামেন্টের ভেন্যুগুলোও ঘোষণা করা হয়েছে বেশ দেরিতে, যা এই জটিলতা আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন রাজ্যের ভিন্ন ভিন্ন ট্যাক্স হারও একটি উদ্বেগের কারণ। উদাহরণস্বরূপ, ফ্লোরিডায় কোনো রাজ্য আয়কর নেই, যেখানে মিয়ামি ও অরল্যান্ডোতে দুটি ভেন্যু রয়েছে।
আবার পেনসিলভানিয়াতে এই হার ৩ শতাংশ, ক্যালিফোর্নিয়ায় ৭ শতাংশ। প্যারিস সেন্ট জার্মেই তাদের তিনটি গ্রুপের মধ্যে দুটি ম্যাচ লস অ্যাঞ্জেলেসে খেলবে।
অন্যদিকে, ম্যানচেস্টার সিটি তাদের শেষ গ্রুপ ম্যাচ খেলবে অরল্যান্ডোতে, যেখানে চেলসি খেলবে পেনসিলভানিয়া এবং আটলান্টাতে।
বিষয়টি সমাধানে ফিফা বেশ তৎপরতা দেখাচ্ছে। তারা যুক্তরাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে।
ফিফা প্রেসিডেন্ট জিয়ান্নি ইনফান্তিনো একাধিকবার ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন এবং এফবিআই-এর সদর দফতরও পরিদর্শন করেছেন।
এদিকে, ক্লাব বিশ্বকাপের এই বিপুল পরিমাণ অর্থ কিভাবে বন্টন করা হবে, সে বিষয়েও একটি জটিলতা রয়েছে।
তবে ফিফা নিশ্চিত করেছে যে, এই অর্থ ক্লাবগুলোর আর্থিক স্থিতিশীলতার উপর কোনো প্রভাব ফেলবে না।
অংশগ্রহণকারী দলগুলোর পারফরম্যান্স এবং তাদের স্থানীয় বাজারের আকারের উপর ভিত্তি করে এই অর্থ বরাদ্দ করা হবে। উদাহরণস্বরূপ, চেলসি ও ম্যানচেস্টার সিটি শুধুমাত্র অংশগ্রহণের জন্য প্রায় ৩৮.১৯ মিলিয়ন মার্কিন ডলার (প্রায় ৪২০ কোটি টাকা) করে পাবে।
এছাড়াও, এই টুর্নামেন্টে অংশ না নেওয়া ক্লাবগুলোর জন্য ফিফা ২৫০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার (প্রায় ২,৭৫০ কোটি টাকা) বরাদ্দ করেছে।
প্রত্যেক হোস্ট শহরকেও ১ মিলিয়ন মার্কিন ডলার করে দেওয়া হবে।
সবকিছু বিবেচনা করে, ফিফা চাইছে দ্রুত এই ট্যাক্স সংক্রান্ত জটিলতা কাটিয়ে উঠতে এবং ক্লাবগুলোর জন্য একটি সুষ্ঠু সমাধান নিশ্চিত করতে।
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান