সমুদ্রের কাছাকাছি যাওয়া সবসময়ই মানুষের মনকে আকর্ষণ করে। সমুদ্রের গর্জন, ঢেউয়ের তালে শান্তির অনুভূতি, অথবা দিগন্তের দিকে তাকিয়ে থাকা – এই সবকিছুই যেন আমাদের ক্লান্তি দূর করে দেয়।
সাম্প্রতিক গবেষণা বলছে, সমুদ্রের ধারে সময় কাটানো মানসিক চাপ কমাতে এবং ভালো থাকতে সহায়ক। বর্তমানে ভ্রমণকারীরাও এই ধরনের অভিজ্ঞতা পেতে আগ্রহী হচ্ছেন।
সৌভাগ্যবশত, সমুদ্রের কাছাকাছি উপভোগ করার মতো অনেক কিছুই রয়েছে, যা একই সাথে আমাদের শরীর ও মনের জন্য উপকারী।
বিশ্বজুড়ে এখন বেশ কিছু উপকূলীয় কার্যকলাপ জনপ্রিয়তা লাভ করেছে। এর মধ্যে অন্যতম হলো জাপানের শিমানামি কাইদোতে ই-বাইকিং।
এই রুটে ইলেক্ট্রিক বাইকের মাধ্যমে সহজে পাহাড়ী পথ পাড়ি দেওয়া যায়, যা বয়স্ক এবং শারীরিক সীমাবদ্ধতা আছে এমন মানুষের জন্য খুবই উপযোগী। জাপানের মূল দ্বীপ হোনশু থেকে শিকোকু পর্যন্ত বিস্তৃত ৪৩.৫ মাইল দীর্ঘ এই পথে সাতটি দৃষ্টিনন্দন ঝুলন্ত সেতু রয়েছে।
এই পথে ভ্রমণ সত্যিই অবিস্মরণীয় একটি অভিজ্ঞতা দিতে পারে।
এছাড়াও, সুইডেনের স্টকহোম দ্বীপুঞ্জে কায়াক ক্যাম্পিংয়ের চল বেড়েছে। যারা প্রকৃতির মাঝে, নির্জনতায় সময় কাটাতে ভালোবাসেন, তাদের জন্য কায়াক ক্যাম্পিং একটি দারুণ বিকল্প।
এখানে কায়াকিংয়ের স্বাধীনতা এবং বন্য প্রকৃতির সৌন্দর্য একসঙ্গে উপভোগ করা যায়। বাল্টিক সাগরের তীরে অবস্থিত ৩০,০০০-এর বেশি দ্বীপের মধ্যে অনেকগুলোই জনমানবশূন্য।
এখানে রাতে তারাভরা আকাশের নিচে শান্ত পরিবেশে ক্যাম্পিং করার সুযোগ রয়েছে।
ওয়েলসের পেমব্রোকশায়ারে উষ্ণ জলের স্নানাগার বা “সোনা” এখন বেশ জনপ্রিয়তা পাচ্ছে। ব্রিটিশ “সোনা সোসাইটি”-এর মতে, ফিনিশ-স্টাইলের পাবলিক সোনার ব্যবহার গত বছরগুলোতে উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে।
গরম এবং ঠান্ডা পানির সংস্পর্শে আসা আমাদের শরীরের রক্ত সঞ্চালন, হৃদযন্ত্র, ফুসফুস এবং ত্বকের জন্য উপকারী। পেমব্রোকশায়ারের “ওয়াইল্ডওয়াটার সোনা”-র মতো ভ্রাম্যমাণ স্নানাগারগুলো বিভিন্ন উপকূলীয় অঞ্চলে ঘুরে বেড়ায়, যা প্রকৃতির কাছাকাছি থেকে স্বাস্থ্যকর জীবনযাপনের এক দারুণ সুযোগ করে দেয়।
দক্ষিণ আফ্রিকার স্কারবোরো বিচ-এ খাদ্য সংগ্রহ বা “কোস্টাল ফরেজিং”-এর চাহিদাও বাড়ছে। প্রকৃতির কাছাকাছি থেকে খাদ্য সংগ্রহের এই প্রক্রিয়া জলবায়ু পরিবর্তনের প্রেক্ষাপটে খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
এখানে বিভিন্ন ধরনের শৈবাল, শামুক, ঝিনুক এবং অন্যান্য সামুদ্রিক খাবার খুঁজে পাওয়া যায়। একটি কর্মশালায়, কীভাবে সমুদ্র থেকে খাবার সংগ্রহ করতে হয় এবং তা প্রস্তুত করতে হয়, সেই বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়।
অস্ট্রেলিয়ার মার্গারেট রিভার অঞ্চলে “কোস্টিয়ারিং”-এর মতো দুঃসাহসিক কার্যকলাপও বেশ জনপ্রিয়তা লাভ করেছে। কোস্টিয়ারিং হলো সমুদ্রের কাছাকাছি পাথুরে অঞ্চলে সাঁতার কাটা, चट्टान থেকে লাফ দেওয়া এবং সমুদ্রের বিভিন্ন জীবজন্তু দেখা।
এখানে আসা পর্যটকদের জন্য ওয়েটস্যুট, লাইফ জ্যাকেট এবং হেলমেট পরে সমুদ্রের গভীরে যাওয়ার সুযোগ থাকে।
যুক্তরাষ্ট্রের ওরেগন উপকূল “টাইড পুলিং”-এর জন্য বিখ্যাত। এখানকার পাথুরে উপকূল “টাইড পুল” বা জোয়ারের সময় সমুদ্রের কিছু অংশ আবদ্ধ হয়ে তৈরি হওয়া অগভীর জলাশয়গুলোর জন্য পরিচিত।
এই জলাশয়গুলোতে নানা ধরনের সামুদ্রিক প্রাণী, যেমন – তারা মাছ, শামুক, এবং বিভিন্ন রঙের সমুদ্রের ঘাস দেখা যায়। এখানে ভ্রমণকারীরা এইসব জীববৈচিত্র্য সম্পর্কে জানতে পারে।
আমাদের বাংলাদেশের সমুদ্র উপকূলও এই ধরনের কার্যকলাপের জন্য অত্যন্ত উপযুক্ত। কক্সবাজার, কুয়াকাটা, সেন্ট মার্টিনের মতো সমুদ্র সৈকতগুলোতেও এইসব কার্যক্রমের আয়োজন করা যেতে পারে, যা একই সাথে পর্যটকদের আকর্ষণ করবে এবং স্থানীয় অর্থনীতির উন্নতিতে সাহায্য করবে।
তথ্য সূত্র: ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক