কফিতে মিলল মারাত্মক রাসায়নিক! চাঞ্চল্যকর তথ্য ফাঁস!

সকালের ঘুম ভাঙানো কফি নিয়ে নতুন একটি গবেষণা বলছে, বাজারে পাওয়া বেশিরভাগ কফিতে ক্ষতিকর উপাদানের মাত্রা খুবই কম। তবে একেবারে যে ভেজাল নেই, তা কিন্তু নয়।

কফি প্রস্তুতকারকদের জন্য এটি একটি সতর্কবার্তা। সম্প্রতি ‘ক্লিন লেবেল প্রজেক্ট’-এর করা এক গবেষণায় কফির নিরাপত্তা নিয়ে এই তথ্য উঠে এসেছে।

গবেষণায় দেখা গেছে, কফিতে কিছু ক্ষতিকর রাসায়নিকের উপস্থিতি রয়েছে, যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল—গ্লাইফোসেট নামক একটি ভেষজনাশক এবং এর উপজাত অ্যামিনোমিথাইলফসফোনিক অ্যাসিড (AMPA)। এছাড়াও, প্যাকেজিং থেকে আসা কিছু ফথ্যালেটস ও ভাজা কফিতে অ্যাক্রাইলামাইড এবং ভারী ধাতুর মতো উপাদান পাওয়া গেছে।

গবেষণার প্রধান গবেষক এবং ক্লিন লেবেল প্রজেক্টের নির্বাহী পরিচালক মলি হ্যামিল্টন জানান, কফিতে ক্ষতিকর উপাদানের উপস্থিতি থাকলেও, তাদের পরিমাণ ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) স্বাস্থ্যবিধির থেকে অনেক কম।

এর মানে হল, সাধারণভাবে কফি পান করা নিরাপদ। তবে কফি প্রস্তুতকারকদের অবশ্যই এই বিষয়গুলো বিবেচনা করতে হবে।

কফি স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী—এ বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই। একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে, প্রতিদিন প্রায় তিন কাপ ব্ল্যাক কফি পান করলে হৃদরোগ, বহুমুখী স্ক্লেরোসিস, টাইপ ২ ডায়াবেটিস, লিভারের রোগ, প্রোস্টেট ক্যান্সার, স্ট্রোক ও স্মৃতিভ্রংশতার ঝুঁকি কমে।

গবেষণায় সবচেয়ে উদ্বেগের বিষয় হল, কফিতে গ্লাইফোসেটের উপস্থিতি। গ্লাইফোসেট একটি বহুল ব্যবহৃত ভেষজনাশক, যা হরমোনের কার্যকারিতা ব্যাহত করে এবং শিশুদের মধ্যে অটিজমসহ বিভিন্ন স্নায়বিক রোগের কারণ হতে পারে।

যদিও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পরিবেশ সুরক্ষা সংস্থা (ইপিএ) সহ অন্যান্য নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলো বলছে, খাদ্যে গ্লাইফোসেটের উপস্থিতির কারণে কোনো বিরূপ প্রভাব হয় না।

গবেষণায় আরও দেখা গেছে, কফি প্যাকেজিংয়ের কারণে কিছু কফিতে ফথ্যালেটসের উপস্থিতি পাওয়া গেছে। এই রাসায়নিক খাদ্য সংরক্ষণে ব্যবহৃত পাত্র, শ্যাম্পু, মেকআপ, পারফিউম ও শিশুদের খেলনার মতো বিভিন্ন পণ্যে পাওয়া যায়।

ফথ্যালেট মানবদেহে প্রজনন ক্ষমতা হ্রাস, অ্যাজমা, শৈশবে স্থূলতা ও ক্যান্সারের মতো সমস্যার কারণ হতে পারে। ক্যানবন্দী কফিতে ফথ্যালেটসের মাত্রা সবচেয়ে বেশি, এরপর রয়েছে কফি পড এবং সবশেষে প্যাকেজ করা কফি।

গবেষণায় আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় উঠে এসেছে। অর্গানিক কফিতেও অ্যামিনোমিথাইলফসফোনিক অ্যাসিডের (AMPA) উপস্থিতি পাওয়া গেছে।

সাধারণত, অর্গানিক কফি চাষিরা গ্লাইফোসেটের মতো কীটনাশক ব্যবহার করেন না। কিন্তু গবেষণায় দেখা গেছে, ১২টি অর্গানিক কফির নমুনার সব কটিতেই AMPA পাওয়া গেছে।

অন্যদিকে, ৪৫টি প্রচলিত কফির নমুনার মধ্যে ২৯টিতে এই উপাদানের উপস্থিতি ছিল।

কফির উৎপাদন অঞ্চলের ওপর ভিত্তি করে ভারী ধাতুর পরিমাণে ভিন্নতা দেখা গেছে। আফ্রিকার কফিতে ভারী ধাতুর পরিমাণ সবচেয়ে কম, যেখানে হাওয়াই দ্বীপের কফিতে এই মাত্রা বেশি।

তবে, হাওয়াই একটি আগ্নেয় দ্বীপ হওয়ায় সেখানকার মাটিতে ভারী ধাতুর পরিমাণ বেশি থাকে।

গবেষণায় আরও দেখা গেছে, সব ধরনের কফিতেই অ্যাক্রাইলামাইডের উপস্থিতি রয়েছে। উচ্চ তাপমাত্রায় খাবার রান্না করার সময়, যেমন ভাজা বা পোড়া খাবারে এই রাসায়নিক তৈরি হয়।

অ্যাক্রাইলামাইড পশুর শরীরে ক্যান্সারের কারণ হতে পারে। তবে, মানুষের শরীরে এর ক্ষতিকর প্রভাব এখনো সেভাবে প্রমাণিত হয়নি।

ক্লিন লেবেল প্রজেক্টের মতে, কফি কেনার সময় হালকা অথবা গাঢ় ভাজা কফি বেছে নেওয়া যেতে পারে। এছাড়াও, কফির উৎপাদন অঞ্চল বিবেচনা করা যেতে পারে।

কারণ, বিভিন্ন অঞ্চলের কফিতে ভারী ধাতুর পরিমাণে ভিন্নতা থাকে। তবে, মলি হ্যামিল্টন জোর দিয়ে বলেন, কফি এখনও পর্যন্ত পরীক্ষা করা সবচেয়ে নিরাপদ খাদ্য উপাদানগুলোর মধ্যে অন্যতম।

সুতরাং, কফি প্রেমীদের জন্য উদ্বেগের কিছু নেই। তবে, কফি পানের ক্ষেত্রে সচেতনতা অবলম্বন করা যেতে পারে।

তথ্য সূত্র: সিএনএন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *