ঘুমের চিন্তা দূর! দ্রুত ঘুমোতে সাহায্য করে ‘কগনিটিভ শাফলিং’

ঘুমের সমস্যা সমাধানে নতুন কৌশল: ‘কগনিটিভ শাফলিং’

ঘুমের সমস্যা আজ অনেকের কাছেই পরিচিত। গভীর রাতে ঘুম না আসার কারণে মানসিক অস্থিরতা বাড়ে, দিনের বেলা কাজেও মনোযোগ দেওয়া কঠিন হয়ে পড়ে।

সম্প্রতি, ঘুমের সমস্যা সমাধানে একটি নতুন কৌশল নিয়ে আলোচনা হচ্ছে, যা ‘কগনিটিভ শাফলিং’ নামে পরিচিত। কগনিটিভ শাফলিং আসলে কী? এটি কীভাবে ঘুমের উন্নতি ঘটাতে পারে?

কগনিটিভ শাফলিং হলো এমন একটি কৌশল, যেখানে ঘুমের আগে কিছুক্ষণের জন্য মনকে অন্য কাজে ব্যস্ত রাখা হয়। কগনিটিভ বিজ্ঞানী ড. লুক বোদইন এই কৌশলটি তৈরি করেছেন।

তাঁর মতে, এটি ঘুমের সময় দ্রুত ঘুমিয়ে পড়তে সাহায্য করে। এটি মস্তিষ্কের স্বাভাবিক কার্যক্রমের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে কাজ করে। ঘুমের আগে আমাদের মস্তিষ্ক এলোমেলো চিন্তা করতে থাকে, তাই এই কৌশলটি মস্তিষ্কের এই অবস্থাকে কাজে লাগায়।

এই পদ্ধতিতে, প্রথমে একটি শব্দ বেছে নিতে হয়। এরপর সেই শব্দের প্রতিটি অক্ষরের জন্য এলোমেলো, আবেগহীন শব্দ তৈরি করতে হয়।

যেমন, যদি ‘পিয়ানো’ শব্দটি বেছে নেওয়া হয়, তাহলে ‘পাতা’, ‘পাহাড়’, ‘পাখি’, ‘পরীর গল্প’ – এভাবে প্রতিটি অক্ষরের জন্য শব্দ তৈরি করতে হবে। প্রতিটি শব্দের জন্য ৫ থেকে ৮ সেকেন্ড সময় নিয়ে চিন্তা করতে হবে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই কৌশল মনকে উদ্বেগমুক্ত করে এবং ঘুমের জন্য প্রস্তুত করে। ফ্লোরিডার মিলেনিয়াম ফিজিশিয়ান গ্রুপের ঘুম বিশেষজ্ঞ ও নিউরোলজিস্ট ডা. ফারিহা আব্বাসী-ফেইনবার্গ বলেন, “রোগীদের আমি প্রায়ই বলি, জোর করে ঘুমানো যায় না, ঘুমের জন্য নিজেকে প্রস্তুত করতে হয়। এই কৌশলটি তেমনই একটি উপায়।”

যদিও এই বিষয়ে খুব বেশি গবেষণা হয়নি, তবে কগনিটিভ নিউরোসায়েন্স এবং ঘুম বিষয়ক মনোবিজ্ঞানের প্রতিষ্ঠিত কিছু ধারণার সঙ্গে এর মিল রয়েছে। লুইজিয়ানার ক্লিনিক্যাল সাইকোলজিস্ট ড. লিয়া কায়লরের মতে, এটি ঘুমের প্রাথমিক অবস্থার সঙ্গে সম্পর্কিত।

বোদইনের একটি গবেষণায় দেখা গেছে, যারা এই কৌশল অনুশীলন করেছেন, তাঁদের ঘুম ভালো হয়েছে, ঘুমোতে সমস্যা কম হয়েছে এবং ঘুমের আগের অস্থিরতাও কমেছে।

তবে, কগনিটিভ শাফলিং ঘুমের সমস্যার একমাত্র সমাধান নয়। ঘুমের ভালো অভ্যাসের পাশাপাশি এটি ব্যবহার করা যেতে পারে। ঘুমের আগে ক্যাফিন গ্রহণ করা বা ঘুমের সময় ঘুমের ওষুধ খাওয়ার মতো সমস্যা থাকলে এই কৌশল খুব একটা কাজে নাও আসতে পারে।

এই কৌশলটি ব্যবহারের কিছু নিয়ম রয়েছে। কায়লরের মতে, শব্দ বাছাইয়ের ক্ষেত্রে কোনো নিয়ম মানতে হবে না। এলোমেলোভাবে শব্দ নির্বাচন করতে হবে। সাধারণত, এই কৌশল প্রয়োগের ৫ থেকে ১৫ মিনিটের মধ্যে ঘুম চলে আসে।

তবে, অতিরিক্ত মানসিক চাপে থাকলে বা বেশি চিন্তা করলে বেশি সময় লাগতে পারে।

যদি ২০ মিনিটের বেশি সময় ধরে চেষ্টা করেও ঘুম না আসে, তবে চেষ্টা বন্ধ করে দেওয়া উচিত। এরপর কিছুক্ষণ অন্য কিছু করে আবার চেষ্টা করা যেতে পারে।

ঘুমের সমস্যার সমাধানে এটি একটি সহায়ক কৌশল হতে পারে, তবে ঘুমের সমস্যা গুরুতর হলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। ঘুমের স্বাস্থ্যবিধির (sleep hygiene) প্রতিও মনোযোগ দিতে হবে।

তথ্যসূত্র: সিএনএন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *