বদভ্যাস নাকি আকর্ষণ? কোক আর বিয়ারের মিশেলে পানীয়ের স্বাদ!

মদ ও কোমল পানীয়: আমার এক অদ্ভুত পানীয় পরীক্ষার অভিজ্ঞতা

বর্তমান সময়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নানান ধরনের পানীয় মিশ্রণের ট্রেন্ড বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। কেউ যদি একটি পানীয়তে একাধিক উপাদান মেশান, তবে সেটিকে একটি ককটেল হিসেবেই ধরা হয়।

সম্প্রতি, একটি সিনেমার দৃশ্যে ‘কোমল পানীয়’ ও ‘বিয়ার’ একসাথে মিশিয়ে খাওয়ার দৃশ্য দেখে আমার মনে হলো, এমন অদ্ভুত পানীয়ের স্বাদ কেমন হতে পারে! এই কৌতূহল থেকেই শুরু হলো আমার নিজের জন্য একটি বিশেষ পানীয় আবিষ্কারের চেষ্টা।

আমার এই পরীক্ষার শুরুতে, আমি ‘কোমল পানীয়’ ও ‘বিয়ার’ মিশিয়ে পান করার সিদ্ধান্ত নিলাম। সিনেমায় দেখা চরিত্রটির মতো, আমিও চেয়েছিলাম এই পানীয়ের মাধ্যমে নিজের রুচি এবং ব্যক্তিত্ব ফুটিয়ে তুলতে।

স্থানীয় একটি পাব-এ গিয়ে আমি যখন এই মিশ্রণটি তৈরির জন্য অনুরোধ করলাম, তখন বারটেন্ডার কিছুটা দ্বিধাগ্রস্ত হলেও, অবশেষে তিনি আমার আবদার রাখলেন।

বিয়ারের সাথে কোমল পানীয় মেশানোর পর, প্রথমে এর স্বাদটা তেমন খারাপ লাগেনি। তবে, দ্বিতীয়বার আর এই পানীয়টি পান করার ইচ্ছা হয়নি।

কারণ, এই পানীয় আমার ব্যক্তিত্ব ফুটিয়ে তোলার বদলে, বরং অপ্রয়োজনীয় বিতর্কের সৃষ্টি করতে পারতো।

এরপর আমি আরও কিছু মিশ্রণ পরীক্ষার সিদ্ধান্ত নিলাম।

স্পেন এবং জার্মানির মত কিছু দেশে ‘কোমল পানীয়’ ও ‘লাল ওয়াইন’ মিশিয়ে পান করার চল রয়েছে, যা ‘কালিমোটক্সো’ বা ‘রটার কোলাশপেন’ নামে পরিচিত।

এই পানীয়টি তৈরি করা তুলনামূলকভাবে সহজ ছিল, কিন্তু স্বাদে তেমন কোনো বিশেষত্ব ছিল না। বরং, অতিরিক্ত চিনি ও ক্যাফেইনের কারণে আমার শরীর বেশ অস্থির হয়ে উঠেছিল।

পরের দিন, আমি ‘সাদা ওয়াইন’ ও ‘স্প্রাইট’-এর মিশ্রণটি পরীক্ষা করে দেখলাম।

এই পানীয়টি আগেরগুলোর চেয়ে কিছুটা ভালো লেগেছিল। তবে, এর মূল কারণ ছিল, ‘স্প্রাইট’-এর মিষ্টি স্বাদ সাদা ওয়াইনের কড়া ভাবকে কিছুটা কমিয়েছিল।

গরমের দিনে এই পানীয়টি বেশ আরামদায়ক হতে পারে।

এরপর আমি ঘরে বসে ‘চকলেট মিল্ক’ ও ‘হোয়াইট রাম’-এর মিশ্রণ তৈরি করলাম।

এই পানীয়টি ছিল আমার কাছে সবচেয়ে অপ্রত্যাশিত। রামের কারণে চকলেট মিল্কের স্বাদ নষ্ট হয়ে গিয়েছিল এবং পানীয়টি পান করার অযোগ্য হয়ে দাঁড়িয়েছিল।

একদিন, আমি একটি ক্যাফেতে ‘অরেঞ্জ জুস’ ও ‘এসপ্রেসো’ মিশিয়ে পান করার সুযোগ পেলাম।

অনেকে এই পানীয়টিকে দিনের শুরু করার চমৎকার উপায় হিসেবে বর্ণনা করেন। কিন্তু আমার মতে, এই মিশ্রণটি তেমন উপভোগ্য ছিল না, বরং এটি একটি সাধারণ পানীয়ের মতোই লেগেছে।

দুপুরের খাবারের সময়, আমি ‘অ্যাপেল সাইডার ভিনেগার’ ও ‘প্রোসেকো’ মিশিয়ে একটি পানীয় তৈরি করলাম।

প্রথমবার, মিশ্রণের অনুপাত ঠিক না থাকার কারণে, ভিনেগারের তীব্রতা আমার গলায় জ্বালা সৃষ্টি করলো।

দ্বিতীয়বার, আমি প্রোসেকোর পরিমাণ বাড়িয়ে দিলাম, এবং পানীয়টি আগের চেয়ে ভালো লেগেছিল।

আমার এক বন্ধু, যিনি ককটেল নিয়ে কাজ করেন, তিনি আমাকে ‘নারকেল জল’ ও ‘স্কচ হুইস্কি’ মিশিয়ে পান করার পরামর্শ দিলেন।

আমি একটি পাব-এ গিয়ে হুইস্কির সাথে নারকেল জল মিশিয়ে পান করলাম। এই মিশ্রণটি ছিল আমার পরীক্ষার সবচেয়ে আকর্ষণীয় আবিষ্কার।

এটি ছিল খুবই সাধারণ, সতেজ এবং গ্রীষ্মমন্ডলীয় আবহাওয়ার উপযোগী।

সবশেষে, আমি ‘করোনা সানরাইজ’ নামের একটি মিশ্রণ তৈরি করি।

এটি মূলত ‘করোনা’ বিয়ারের সাথে তেকিলা, কমলালেবুর রস এবং গ্রেনাডিন সিরাপ মিশিয়ে তৈরি করা হয়। এই পানীয়টি দেখতে সুন্দর হলেও, স্বাদে খুব একটা বিশেষ ছিল না।

আমার এই পানীয় পরীক্ষার অভিজ্ঞতা থেকে আমি বুঝতে পারলাম, একটি বিশেষ পানীয়ের খোঁজে এতটা সময় ব্যয় করা হয়তো বুদ্ধিমানের কাজ নয়।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে জনপ্রিয় হওয়া অনেক পানীয় হয়তো শুধুমাত্র দৃষ্টি আকর্ষণের জন্যই তৈরি করা হয়।

তাই, আমি অবশেষে আমার পুরনো পছন্দের দিকেই ফিরে যেতে চাই – মাঝারি মানের লাল ওয়াইন, যা আমাকে কোনো বিতর্কের মধ্যে ফেলবে না।

তথ্য সূত্র: The Guardian

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *