কলিন স্ট্যান: ‘বক্সের মেয়ে’র ভয়ঙ্কর অপহরণ-কাণ্ড, সাত বছর বন্দী থাকার পর মুক্তি।
১৯৭৭ সালের ঘটনা। যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ার রাস্তায় এক ভয়াবহ অভিজ্ঞতার শিকার হন কলিন স্ট্যান নামের এক তরুণী। পরিচিত এক দম্পতির হাতে অপহরণের শিকার হয়ে সাত বছর বন্দী জীবন কাটাতে হয় তাকে।
মুক্তি পাওয়ার পর কলিনের জীবন কেমন ছিল? অপহরণকারীষ্টারা এখন কোথায়? আসুন, সেই গল্পটাই শোনা যাক।
কলিন স্ট্যান তখন ছিলেন কুড়ি বছরের এক তরুণী। ১৯৭৭ সালের ১৯ মে, বন্ধুের জন্মদিনের অনুষ্ঠানে যাওয়ার জন্য বাড়ি থেকে বের হন তিনি। ক্যালিফোর্নিয়ার রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাওয়ার সময় এক দম্পতি তাঁদের গাড়িতে কলিনকে লিফট্ দিতে রাজি হন।
তাদের সাথে ছিল একটি শিশুও, যা দেখে কলিন তাঁদেরকে নিরাপদ ভেবেছিলেন। কিন্তু কিছুদূর যাওয়ার পরেই তারা কলিনকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে।
অপহরণকারীরা কলিনকে একটি কাঠের বাক্সে বন্দী করে দিনের পর দিন নির্যাতন চালাত। দিনের প্রায় ২৩ ঘণ্টা তাঁকে সেই বাক্সের মধ্যে বন্দি থাকতে হতো।
শারীরিক নির্যাতনের পাশাপাশি মানসিক অত্যাচারও করা হতো। অপহরণকারীদের প্রধান, ক্যামেরন নামের ওই ব্যক্তি কলিনকে বিভিন্ন সময়ে মারধর করতেন এবং ধর্ষণ করতেন।
ক্যামেরন কলিনকে এমন ভয় দেখিয়েছিলেন যে, তিনি যদি পালানোর চেষ্টা করেন, তাহলে ‘দ্য কোম্পানি’ নামের একটি দল তাঁকে মেরে ফেলবে।
বন্দী থাকাকালীন কলিনকে তাঁর পরিবারের সঙ্গে কথা বলতে বা দেখা করতে দেওয়া হতো, তবে খুব সীমিতভাবে। অপহরণকারীদের ভয়ে কলিন তাঁর পরিবারের কাছেও সত্যি কথা বলতে পারেননি।
তিনি তাঁদেরকে জানান, তিনি একটি গোষ্ঠীতে যোগ দিয়েছেন।
অবশেষে, ১৯৮৪ সালে কলিন মুক্তি পান। কলিনকে বন্দী করে রাখার সাত বছর পর, ক্যামেরনের স্ত্রী জেনিস এক পাদ্রীর কাছে তাঁর স্বামীর কুকীর্তির কথা জানান।
সেই পাদ্রীর পরামর্শে জেনিস কলিনকে নিয়ে পালিয়ে যান এবং পুলিশের কাছে আত্মসমর্পণ করেন।
মুক্তির পর কলিন ধীরে ধীরে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার চেষ্টা করেন। যদিও বন্দী জীবনের স্মৃতি সহজে মুছে ফেলা সম্ভব ছিল না।
তিনি নতুন করে সংসার গড়েন, এবং বর্তমানে নাতির দেখাশোনা করছেন। কলিন এখন ক্যালিফোর্নিয়াতেই বসবাস করেন।
প্রতি বছর ১০ই আগস্ট, যেদিন তিনি অপহরণকারীদের কবল থেকে মুক্তি পেয়েছিলেন, সেই দিনটি তিনি তাঁর পরিবার ও বন্ধুদের সঙ্গে উদযাপন করেন।
অন্যদিকে, কলিনের অপহরণকারী ক্যামেরন হুকরকে ১৯৮৫ সালে অপহরণ ও যৌন নির্যাতনের অভিযোগে ১০৪ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। আদালতের বিচারক ক্যামেরনকে ‘সবচেয়ে বিপজ্জনক মনো রোগী’ হিসেবে অভিহিত করেছিলেন।
বর্তমানে তিনি ক্যালিফোর্নিয়ার একটি মানসিক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। ক্যামেরনকে যেন প্যারোলে মুক্তি না দেওয়া হয়, সেই জন্য কলিন দীর্ঘদিন ধরে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।
কলিন মনে করেন, ক্যামেরন আজও একজন ভয়ঙ্কর মানুষ এবং তাঁর মুক্তি পাওয়া উচিত নয়।
এই ঘটনার উপর ভিত্তি করে বেশ কয়েকটি তথ্যচিত্র, বই এবং সিনেমা তৈরি হয়েছে। এর মধ্যে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য হলো ‘গার্ল ইন দ্য বক্স’ (Girl in the Box) নামের তথ্যচিত্রটি।
তথ্য সূত্র: পিপল