আতঙ্কে শিক্ষাঙ্গন! কৃষ্ণাঙ্গ শিক্ষার্থীদের সাহায্যকারী প্রোগ্রামের বিরুদ্ধে ট্রাম্প প্রশাসন

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের শিক্ষা বিষয়ক একটি অলাভজনক সংস্থার (নন-প্রফিট) সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করতে শুরু করেছে দেশটির বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনের নিশানায় থাকা এই সংস্থাটির বিরুদ্ধে অভিযোগ, তারা ‘বৈচিত্র্য, সমতা ও অন্তর্ভুক্তি’ (Diversity, Equity and Inclusion – DEI) বিষয়ক কর্মসূচি পরিচালনা করে থাকে।

সম্প্রতি, রিপাবলিকান রাজনীতিবিদদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে এমন কিছু সামাজিক মাধ্যম পোস্টের পরই এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।

জানা গেছে, ‘দ্য পিএইচডি প্রজেক্ট’ নামের এই সংস্থাটি মূলত কৃষ্ণাঙ্গ ও হিস্পানিক (লাতিন) সম্প্রদায়ের শিক্ষার্থীদের ব্যবসায় শিক্ষা অর্জনে সহায়তা করে থাকে। কিন্তু সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন এখন উচ্চ শিক্ষাব্যবস্থায় ‘বৈচিত্র্য, সমতা ও অন্তর্ভুক্তি’ বিষয়ক কর্মসূচি নির্মূল করতে চাইছে।

এর অংশ হিসেবেই শিক্ষা দপ্তর সম্প্রতি বেশ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে বর্ণবাদের অভিযোগ এনে তদন্ত শুরু করেছে। এইসব বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তারা এই অলাভজনক সংস্থাটির সঙ্গে যুক্ত ছিল।

তদন্তের খবর ছড়িয়ে পড়ার পর অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধান হতভম্ব হয়ে পড়েন এবং তারা তাদের উদ্বেগের কথা জানান। অনেকেই দ্রুত ‘দ্য পিএইচডি প্রজেক্ট’-এর সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন।

কারণ, তাদের আশঙ্কা ছিল, এই সংস্থার সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রাখলে সরকারি তহবিল বন্ধ হয়ে যেতে পারে।

অভিযোগ রয়েছে, এই প্রকল্পের মাধ্যমে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি, বৃত্তি এবং ছাত্রজীবনে ‘জাতিগত পছন্দ’কে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে, কেন তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু হয়েছে, তা নিয়ে অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রধান ধোঁয়াশার মধ্যে রয়েছেন।

যুক্তরাষ্ট্রের শিক্ষা বিষয়ক একটি প্রভাবশালী সংগঠন, আমেরিকান কাউন্সিল অন এডুকেশন-এর (American Council on Education) সরকারি সম্পর্ক বিষয়ক সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট জোনাথন ফ্যানস্মিথ বলেন, ‘উচ্চশিক্ষায় সংখ্যালঘু গোষ্ঠীগুলোর উন্নতিতে সহায়তা করার জন্য বিভিন্ন অলাভজনক সংস্থা কাজ করে।

তবে ক্রিস্টোফার রুফোর (Christopher Rufo) সামাজিক মাধ্যমে দেওয়া পোস্টের আগে ‘দ্য পিএইচডি প্রজেক্ট’ এতটা পরিচিত ছিল না।’

তদন্তের আওতায় আসা ৪৫টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে অ্যারিজোনা স্টেট, ওহাইও স্টেট, ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয় (বার্কলে), ইয়েল, কর্নেল, ডিউক এবং ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজির (এমআইটি) মতো স্বনামধন্য বিশ্ববিদ্যালয়। শিক্ষা দপ্তর বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে চিঠি দিয়ে জানায়, তাদের ‘অফিস ফর সিভিল রাইটস’-এর কাছে একটি অভিযোগ এসেছে এবং ‘দ্য পিএইচডি প্রজেক্ট’-এর সঙ্গে তাদের সম্পর্কের কারণে তাদের বিরুদ্ধে জাতিগত বৈষম্যের অভিযোগের তদন্ত করা হচ্ছে।

আগামী ৩১শে মার্চের মধ্যে এই বিষয়ে তথ্য দিতে বলা হয়েছে।

এদিকে, ‘দ্য পিএইচডি প্রজেক্ট’ এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, তারা ব্যবসাখাতে নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য একটি বৃহত্তর প্রতিভার ক্ষেত্র তৈরি করতে চায়। তারা আরও জানায়, এই বছর থেকে তাদের সদস্যপদ আবেদনের সুযোগ সবার জন্য উন্মুক্ত করা হয়েছে, যারা তাদের এই ভিশন-এর সঙ্গে একমত পোষণ করেন।

বিশ্ববিদ্যালয়গুলো জানিয়েছে, তারা তদন্তকারীদের সঙ্গে সহযোগিতা করবে এবং এ বিষয়ে বিস্তারিত কোনো মন্তব্য করতে রাজি নয়।

কারণ, অতীতে ট্রাম্প প্রশাসন ইহুদি বিদ্বেষ, ‘বৈচিত্র্য’ বিষয়ক কর্মসূচি এবং ট্রান্সজেন্ডার ক্রীড়াবিদদের সঙ্গে সম্পর্কিত বিভিন্ন ইস্যুতে সরকারি তহবিল বন্ধ করার ইঙ্গিত দিয়েছে।

কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষেত্রেও ফিলিস্তিনপন্থী বিক্ষোভের জেরে প্রায় ৪০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের তহবিল প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়েছিল এবং আরও কয়েক বিলিয়ন ডলার বন্ধের হুমকি দেওয়া হয়েছিল।

একাডেমিক স্বাধীনতা হরণের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে সম্প্রতি ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বার্কলে) শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা একত্রিত হয়েছিলেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের এক অধ্যাপক উলা টেইলর বলেন, ‘এই লড়াইকে পাঁচটি শব্দে প্রকাশ করা যায়: একাডেমিক স্বাধীনতার ওপর আঘাত।’

তথ্যসূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস (এপি)

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *