কলোম্বিয়ায় দ্রুত বাড়ছে বনভূমি ধ্বংস: ছয় মাসে ৮৮,৯০০ হেক্টর বন উজাড়।
কলোম্বিয়ায় গত ছয় মাসে ৮৮,৯০০ হেক্টরের বেশি বনভূমি ধ্বংস হয়েছে, যা নিউ ইয়র্ক শহরের চেয়েও বড় একটি এলাকা। দেশটির সরকারি কৌঁসুলির কার্যালয়ের এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানানো হয়েছে। এতে পরিবেশ ধ্বংসের বিষয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত বছরের অক্টোবর মাস থেকে চলতি বছরের মার্চ মাস পর্যন্ত সময়ে দেশটির আমাজন অঞ্চলের কুইন্দিও, কাকেতা, গুয়াভিয়ারে, পুতুমায়ো এবং মেটা—এই সাতটি অঞ্চলে ব্যাপকহারে বনভূমি ধ্বংস হয়েছে। মূলত অবৈধ রাস্তা নির্মাণ, কোকা চাষ এবং অনিয়ন্ত্রিত খনিজ আহরণ—এসব কারণেই বনভূমি ধ্বংসের পরিমাণ বাড়ছে।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, এই সময়ে ১,১০০ কিলোমিটারেরও বেশি অবৈধ রাস্তা তৈরি করা হয়েছে। এসব রাস্তা বনের গভীরে প্রবেশ করে এবং অবৈধ পণ্য পরিবহনে সহায়তা করে। এছাড়া, অবৈধভাবে কাঠ পাচার ও বনভূমি দখলের প্রবণতাও বেড়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এসব রাস্তা তৈরি হওয়ায় ওই অঞ্চলে অবৈধ অর্থনীতির প্রসার ঘটবে এবং পরিবেশের আরও ক্ষতি হবে।
কোকেন তৈরির প্রধান উপাদান কোকা চাষ—মেটা, পুতুমায়ো এবং নায়া নদীর কাছাকাছি এলাকাগুলোতে বনভূমি ধ্বংসের প্রধান কারণ। তবে অবৈধ সোনা উত্তোলনের বিষয়টিও উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বুয়েনাভেঞ্চুরার নায়া নদীর কাছের গ্রামীণ অঞ্চলে, আদিবাসী সংরক্ষিত এলাকার কাছে এবং সংরক্ষিত বনাঞ্চলেও ভারী যন্ত্রপাতি ব্যবহার করে সোনার খনি তৈরি করতে দেখা গেছে। এমনকি, প্রশান্ত মহাসাগরের দিকে যাওয়ার পথেও রাস্তা তৈরি করা হয়েছে।
বনভূমি ধ্বংসের দিক থেকে কুইন্দিও সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এখানে প্রায় ৩০,০০০ হেক্টর বনভূমি ধ্বংস হয়েছে। এরপর রয়েছে গুয়াভিয়ারে ও পুতুমায়ো অঞ্চল। বন্যপ্রাণী ও জীববৈচিত্র্যের জন্য গুরুত্বপূর্ণ বাস্তুসংস্থান এবং আদিবাসী অধ্যুষিত এলাকাগুলোতে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এছাড়াও, জমির অবৈধ দখল ও গাছ কেটে সেই জমি ব্যবহারের প্রবণতাও বেড়েছে।
কর্তৃপক্ষকে অবৈধ রাস্তাগুলো চিহ্নিত করে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে।
যদিও ২০২৩ সালে আগের বছরের তুলনায় বনভূমি ধ্বংসের পরিমাণ ৩৬ শতাংশ কমে গিয়েছিল, কিন্তু ২০২৪ সালে তা ৩৫ শতাংশ বেড়েছে। মূলত আমাজন অঞ্চলে বনভূমি ধ্বংসের পরিমাণ বাড়ায় এই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।
কলোম্বিয়ার পরিবেশ মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হয়নি।
তথ্য সূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস।