মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে এড়িয়ে চীনের দিকে ঝুঁকছে কলম্বিয়া!

কলম্বিয়া চীন-ভিত্তিক উন্নয়ন ব্যাংকে যোগ দিতে চাইছে, ওয়াশিংটনের থেকে ল্যাটিন আমেরিকার দূরে সরে যাওয়ার ইঙ্গিত।

বিশ্বের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে একটি গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তনের আভাস পাওয়া যাচ্ছে। কলম্বিয়া, চীন-ভিত্তিক একটি উন্নয়ন ব্যাংকের সদস্যপদ লাভের জন্য আবেদন করেছে। এই ঘটনাটি ল্যাটিন আমেরিকার দেশগুলোর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাব বলয় থেকে দূরে সরে যাওয়ার প্রবণতার একটি অংশ হিসেবে দেখা হচ্ছে।

নতুন উন্নয়ন ব্যাংক (New Development Bank – NDB), যা মূলত BRICS দেশগুলো – ব্রাজিল, রাশিয়া, ভারত, চীন এবং দক্ষিণ আফ্রিকার একটি সম্মিলিত প্রয়াস – দ্বারা গঠিত হয়েছে। এই ব্যাংকটি বিশ্ব ব্যাংক এবং আন্ত-আমেরিকান উন্নয়ন ব্যাংকের মতো পশ্চিমা-নিয়ন্ত্রিত আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর বিকল্প হিসেবে কাজ করে।

কলম্বিয়ার প্রেসিডেন্ট গুস্তাভো পেট্রো সম্প্রতি চীনের সফর করেন এবং সাংহাইয়ে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে NDB-র প্রধান দিলমা রুসেফের সঙ্গে মিলিত হন। জানা গেছে, কলম্বিয়া এই ব্যাংকের শেয়ার কিনতে প্রায় ৫১২ মিলিয়ন মার্কিন ডলার (প্রায় ৫,৬০০ কোটি টাকার সমান) বিনিয়োগ করতে প্রস্তুত।

প্রেসিডেন্ট পেট্রো মনে করেন, এই ব্যাংকের সমর্থন পেলে কলম্বিয়ার আটলান্টিক ও প্রশান্ত মহাসাগর উপকূলকে সংযুক্ত করে প্রায় ১২০ কিলোমিটার দীর্ঘ একটি খাল বা রেলওয়ে তৈরি করা সম্ভব হবে। এর ফলে দেশটির বাণিজ্যিকভাবে দক্ষিণ আমেরিকা ও এশিয়ার মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র হয়ে ওঠার সম্ভাবনা রয়েছে।

কলম্বিয়ার এই পদক্ষেপকে অনেকে ওয়াশিংটনের সঙ্গে তাদের সম্পর্কে পরিবর্তনের ইঙ্গিত হিসেবে দেখছেন। এর আগে, ২০২১ সালে ক্ষুদ্র রাষ্ট্র উরুগুয়েও এই ব্যাংকের সদস্য হওয়ার চেষ্টা করেছিল। তবে, কলম্বিয়া দীর্ঘদিন ধরে যুক্তরাষ্ট্রের ঘনিষ্ঠ মিত্র হিসেবে পরিচিত, এবং মাদকবিরোধী যুদ্ধে দেশটির গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে কলম্বিয়ার এই পদক্ষেপ নিঃসন্দেহে যুক্তরাষ্ট্রের জন্য উদ্বেগের কারণ হতে পারে।

যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর এরই মধ্যে চীনের ‘বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ’-এর (Belt and Road Initiative) সঙ্গে জড়িত প্রকল্পগুলোতে অর্থায়নের বিরোধিতা করার কথা জানিয়েছে। প্রেসিডেন্ট পেট্রো অবশ্য যুক্তরাষ্ট্রের চাপকে উপেক্ষা করে এই বিষয়ে নিরপেক্ষ থাকার ঘোষণা দিয়েছেন। তিনি স্পষ্ট করে বলেছেন, কলম্বিয়া স্বাধীনভাবে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে এবং যুক্তরাষ্ট্র ও চীন উভয় দেশের সঙ্গেই আলোচনা চালিয়ে যেতে প্রস্তুত।

এই ঘটনা আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে একটি নতুন মেরুকরণের ইঙ্গিত দেয়। উন্নয়নশীল দেশগুলো পশ্চিমা প্রভাবের বাইরে গিয়ে নিজেদের অর্থনৈতিক ও কৌশলগত সম্পর্ক গড়ে তোলার চেষ্টা করছে।

বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য এই ধরনের পরিবর্তন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, এটি বিশ্ব অর্থনীতির নতুন সম্ভাবনা এবং চ্যালেঞ্জগুলো নিয়ে আসে। বিশেষ করে, অবকাঠামো উন্নয়নে অর্থায়নের জন্য চীন-ভিত্তিক ব্যাংকগুলোর ভূমিকা ভবিষ্যতে আরও বাড়তে পারে।

তথ্য সূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *