তরুণদের মধ্যে কোলন ক্যান্সারের বৃদ্ধি: কারণ অনুসন্ধানে বিজ্ঞানীদের নতুন সূত্র।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে কম বয়সী মানুষের মধ্যে কোলন ক্যান্সারের (Colorectal cancer) ঘটনা উদ্বেগজনকভাবে বাড়ছে।
ক্যান্সারের এই ধরনটি সাধারণত বয়স্কদের মধ্যে দেখা গেলেও, এখন ৫০ বছরের কম বয়সীদের মধ্যেও এর প্রকোপ বাড়ছে, যা চিকিৎসা বিজ্ঞানীদের কপালে চিন্তার ভাঁজ ফেলেছে।
গত দুই দশকে, এই বয়সী মানুষের মধ্যে কোলন ক্যান্সারের হার ১১ শতাংশ বেড়েছে।
বিজ্ঞানীরা দীর্ঘদিন ধরে এর কারণ অনুসন্ধানে গবেষণা করছেন।
এবার, একটি নতুন গবেষণায় এই বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ একটি সূত্র খুঁজে পাওয়া গেছে।
যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক দল ‘নেচার’ জার্নালে প্রকাশিত একটি গবেষণায় দেখিয়েছেন, শৈশবে ‘কোলিব্যাকটিন’ নামক একটি বিষাক্ত উপাদানের সংস্পর্শে আসার কারণে কম বয়সীদের মধ্যে কোলন ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়।
কোলিব্যাকটিন তৈরি করে কিছু বিশেষ ব্যাকটেরিয়া, যা মূলত অন্ত্রে বাস করে।
এই ব্যাকটেরিয়া ডিএনএ (DNA)-এর ক্ষতি করে ক্যান্সার সৃষ্টির প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করতে পারে।
গবেষকরা ১১টি দেশের প্রায় ১০০০ জন কোলন ক্যান্সার রোগীর টিউমার বিশ্লেষণ করেছেন।
এই গবেষণায়, ৫০ বছরের কম বয়সী রোগীদের মধ্যে কোলিব্যাকটিনের সঙ্গে সম্পর্কিত মিউটেশন বা জিনের পরিবর্তনের হার বেশি পাওয়া গেছে।
যাদের বয়স ৪০ বছরের নিচে, তাদের মধ্যে কোলিব্যাকটিন-সৃষ্ট মিউটেশন দেখা গেছে, যাদের বয়স ৭০ বছরের বেশি, তাদের তুলনায় তিনগুণ বেশি।
অর্থাৎ, অল্প বয়সে কোলিব্যাকটিনের প্রভাবে ডিএনএ-এর ক্ষতির শিকার হওয়ার আশঙ্কা বেশি থাকে।
গবেষকরা বলছেন, এই মিউটেশনগুলো সম্ভবত শৈশবে, বিশেষ করে ১০ বছর বয়সের আগে সংঘটিত হয়েছিল।
এটি ইঙ্গিত করে যে, শৈশবে অন্ত্রের মাইক্রোবায়োমের (microbiome) ওপর আঘাত হানা হলে, তা ২০ থেকে ৩০ বছর পর কোলন ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায়।
উদাহরণস্বরূপ, যাদের ৬০-৭০ বছর বয়সে এই রোগ হওয়ার কথা, তাদের ক্ষেত্রে ৩০-৪০ বছর বয়সেই ক্যান্সার ধরা পড়ছে।
গবেষণায় আরও দেখা গেছে, খাদ্যাভ্যাস এবং জীবনযাত্রার ধরনের সঙ্গেও এই রোগের সম্পর্ক রয়েছে।
পশ্চিমা বিশ্বে, বিশেষ করে উন্নত দেশগুলোতে, ফাস্ট ফুড ও প্রক্রিয়াজাত খাবার (processed foods) খাওয়ার প্রবণতা বেশি।
এই ধরনের খাদ্যাভ্যাস অন্ত্রের ব্যাকটেরিয়ার ভারসাম্য নষ্ট করে, যা কোলিব্যাকটিন-উৎপাদনকারী ব্যাকটেরিয়ার সংখ্যা বৃদ্ধি করতে সহায়ক হতে পারে।
অতিরিক্ত চিনি ও পরিশোধিত শস্যযুক্ত খাবারও এই ঝুঁকির কারণ হতে পারে।
তবে, কোলিব্যাকটিন কীভাবে ক্যান্সারের কারণ হয়, সে বিষয়ে আরও বিস্তারিত গবেষণা প্রয়োজন।
বিজ্ঞানীরা মনে করেন, কোলিব্যাকটিনের কারণে সৃষ্ট মিউটেশন ক্যান্সার কোষের বৃদ্ধিতে সহায়ক হতে পারে।
এই গবেষণা ভবিষ্যতের জন্য নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে।
বিজ্ঞানীরা এখন এমন একটি পরীক্ষার পদ্ধতি তৈরির চেষ্টা করছেন, যা কোলিব্যাকটিন-সৃষ্ট মিউটেশন শনাক্ত করতে পারবে।
এর মাধ্যমে, রোগের প্রাথমিক পর্যায়ে সনাক্তকরণ সম্ভব হবে এবং আক্রান্ত ব্যক্তির দ্রুত চিকিৎসার ব্যবস্থা করা যাবে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কোলন ক্যান্সার প্রতিরোধের জন্য সচেতনতা এবং স্বাস্থ্যকর জীবনযাত্রা খুবই জরুরি।
নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করানো, স্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহণ, পর্যাপ্ত শারীরিক কার্যকলাপ এবং ধূমপান ও মদ্যপান পরিহার করা – এই বিষয়গুলোর ওপর গুরুত্ব দিতে হবে।
কোনো ব্যক্তির যদি পেটে ব্যথা, ওজন হ্রাস, বা মলের সঙ্গে রক্ত যাওয়ার মতো সমস্যা দেখা দেয়, তবে দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
তথ্য সূত্র: ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক