মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কলোরাডোতে এক মর্মান্তিক ঘটনায়, এক দন্ত চিকিৎসক তাঁর স্ত্রী অ্যাঞ্জেলা ক্রেগকে বিষ প্রয়োগ করে হত্যার দায়ে দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন। এই চাঞ্চল্যকর ঘটনায় আদালত অভিযুক্ত জেমস ক্রেইগকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের আদেশ দিয়েছে।
২০২৩ সালের মার্চ মাসের শুরুতে, ৪৩ বছর বয়সী অ্যাঞ্জেলা হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাঁর শরীরে ক্লান্তি অনুভব হতে শুরু করে, কিন্তু চিকিৎসকেরা এর কারণ খুঁজে পাচ্ছিলেন না।
পরিবারের সদস্যরা তাঁকে বিভিন্ন হাসপাতালে নিয়ে যান, কিন্তু কোনো সুনির্দিষ্ট রোগ ধরা পড়েনি। অ্যাঞ্জেলার শারীরিক অবস্থার অবনতি হতে থাকে এবং তিনি মৃত্যুর কয়েক মুহূর্ত আগে পর্যন্ত “আমার এত কষ্ট হচ্ছে কেন?” এই প্রশ্নটি করেছিলেন।
অনুসন্ধানে জানা যায়, অ্যাঞ্জেলার স্বামী জেমস ক্রেইগই ছিলেন এই ঘটনার মূল হোতা। তিনি স্ত্রীর প্রোটিন শেকের সাথে বিষ মিশিয়ে ধীরে ধীরে তাঁর অসুস্থতা তৈরি করেন।
আদালতে পেশ করা প্রমাণে উঠে আসে, অ্যাঞ্জেলার শরীরে আর্সেনিক ও সায়ানাইডের মতো মারাত্মক বিষের উপস্থিতি ছিল। এই বিষক্রিয়ার কারণেই তাঁর মস্তিষ্কের কার্যকারিতা বন্ধ হয়ে যায় এবং শেষ পর্যন্ত তিনি মারা যান।
অ্যাঞ্জেলার পরিবারের সদস্যরা জানান, ঘটনার কয়েক দিন আগে তিনি একটি স্বাস্থ্য সম্মেলনে যোগ দিতে গিয়েছিলেন। সেখানে ফিরে আসার পরেই তাঁর শরীরে এই ধরনের উপসর্গ দেখা দেয়।
তিনি তাঁর পরিবারের সঙ্গে শারীরিক অবস্থার কথা জানিয়ে টেক্সট মেসেজ আদান-প্রদান করতেন। ঘটনার কয়েক দিন আগে তিনি একবার হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন, কিন্তু কোনো রোগ নির্ণয় করা যায়নি।
এরপর তিনি একটি জরুরি ক্লিনিকেও যান, কিন্তু সেখান থেকেও তাঁকে কোনো সমাধান না দিয়েই বাড়ি পাঠিয়ে দেওয়া হয়।
অ্যাঞ্জেলার বন্ধু এবং পরিবারের সদস্যরা আদালতে সাক্ষ্য দেন যে, অ্যাঞ্জেলা ছিলেন খুবই প্রাণবন্ত এবং স্বাস্থ্য সচেতন একজন নারী। তিনি নিয়মিত শরীরচর্চা করতেন এবং তাঁর জীবনযাত্রা ছিল খুবই সক্রিয়।
তাঁর অসুস্থতা তাঁদের কাছে ছিল অপ্রত্যাশিত এবং হতাশাজনক।
আদালতে জেমস ক্রেইগের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ প্রমাণ করতে সরকারি আইনজীবীরা বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রমাণ উপস্থাপন করেন। এর মধ্যে ছিল অ্যাঞ্জেলার পাঠানো টেক্সট মেসেজ, পরিবারের সদস্যদের সাক্ষ্য এবং ফরেনসিক পরীক্ষার ফল।
এছাড়াও, জেমস ক্রেইগের পরকীয়া সম্পর্ক এবং তদন্তকারী কর্মকর্তাকে হত্যার পরিকল্পনার মতো বিষয়গুলোও এই মামলার সঙ্গে যুক্ত হয়।
বিচার চলাকালীন, অ্যাঞ্জেলার মেয়ে তাঁর মায়ের মৃত্যুর কারণ নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেন এবং তাঁর বাবার নীরবতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন।
অ্যাঞ্জেলার মৃত্যুর পর, তাঁর শরীরের নমুনা পরীক্ষায় আর্সেনিক, সায়ানাইড এবং টেট্রাহাইড্রোজোলাইনের মতো বিষাক্ত পদার্থের উপস্থিতি পাওয়া যায়।
এই মামলার রায় ঘোষণার পর, অ্যাঞ্জেলার পরিবারের সদস্যরা গভীর শোক প্রকাশ করেন। তাঁরা জানান, এই রায়ের মাধ্যমে তাঁরা কিছুটা হলেও শান্তি পেয়েছেন এবং ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
এই ঘটনা আবারও প্রমাণ করে, পারিবারিক সম্পর্কের মধ্যে লুকিয়ে থাকা বিশ্বাসঘাতকতা কতটা ভয়ংকর হতে পারে।
তথ্য সূত্র: সিএনএন