মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে এক ভারতীয় পিএইচডি শিক্ষার্থীর ভিসা বাতিল হওয়ার ঘটনা বর্তমানে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে আলোচনার জন্ম দিয়েছে। কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত রঞ্জনি শ্রীনিবাসন নামের ওই শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবাদে মদদ দেওয়ার অভিযোগ এনেছে মার্কিন কর্তৃপক্ষ।
এর জেরে তাকে দেশ ছাড়তে হয়, যা নিয়ে তৈরি হয়েছে বিতর্ক।
জানা যায়, রঞ্জনি শ্রীনিবাসন ভারতের চেন্নাইয়ের বাসিন্দা এবং কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডি (ডক্টরেট অফ ফিলোসফি) গবেষণা করছিলেন। গত ৬ মার্চ তিনি তার ভিসা বাতিলের একটি ইমেইল পান, যা প্রথমে স্প্যাম (spam) ভেবেছিলেন।
কিন্তু পরে জানতে পারেন, তার ভিসা সত্যি সত্যিই বাতিল করা হয়েছে। এরপর তিনি যুক্তরাষ্ট্রে তার ভবিষ্যৎ নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েন।
ভিসা বাতিলের কারণ হিসেবে প্রাথমিকভাবে কিছু জানা যায়নি। তবে ধারণা করা হচ্ছে, ফিলিস্তিন ইস্যুতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তার করা কিছু পোস্টের কারণে এমনটা হতে পারে।
ইসরায়েলের গাজায় চালানো হামলার সমালোচনা করে তিনি বিভিন্ন সময়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্ট করেছিলেন।
ভিসা বাতিলের কয়েকদিনের মধ্যেই যুক্তরাষ্ট্রের ‘ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট’ (ICE) বিভাগের কিছু সদস্য তার ফ্ল্যাটে যায়। তারা কোনো ওয়ারেন্ট ছাড়াই তার ফ্ল্যাটে প্রবেশ করতে চেয়েছিল।
শ্রীনিবাসনের আশঙ্কা, তাকে গ্রেপ্তার করার উদ্দেশ্যেই তারা সেখানে গিয়েছিল। এই ঘটনার পর তিনি যুক্তরাষ্ট্রে নিজের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কিত হয়ে পড়েন।
কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে সাহায্য চেয়েও তেমন কোনো সাড়া পাননি রঞ্জনি। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তাকে আইনজীবীর সঙ্গে যোগাযোগ করতে বললেও, তার ভিসা বাতিলের বিরুদ্ধে কোনো পদক্ষেপ নেয়নি।
এমনকি, কর্তৃপক্ষ সহযোগিতা করতেও গড়িমসি করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
পরিস্থিতি বেগতিক দেখে তিনি ১১ মার্চ কানাডার উদ্দেশ্যে যাত্রা করেন। বর্তমানে তিনি সেখানে অবস্থান করছেন।
যাওয়ার আগে তিনি তার পরিবারের কাছে বিষয়টি জানান।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের হোমল্যান্ড সিকিউরিটি সেক্রেটারি ক্রিস্টিন নোয়েম পরে এক টুইট বার্তায় রঞ্জনি শ্রীনিবাসনকে ‘সন্ত্রাসীর সমর্থক’ হিসেবে অভিযুক্ত করেন।
এরপর বিষয়টি আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে আরও বেশি গুরুত্বের সঙ্গে আসে।
রঞ্জনি শ্রীনিবাসনের আইনজীবী জানিয়েছেন, তিনি এখনো পর্যন্ত ভিসা ফিরে পাওয়ার চেষ্টা করছেন। তবে, তিনি যুক্তরাষ্ট্রে ফিরতে কতটা নিরাপদ বোধ করবেন, তা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন।
কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত এ বিষয়ে কোনো আনুষ্ঠানিক মন্তব্য পাওয়া যায়নি।
রঞ্জনীর ঘটনা আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের মধ্যে ভীতির সঞ্চার করেছে। বিশেষ করে যারা ফিলিস্তিন ইস্যুতে সোচ্চার, তাদের মধ্যে এক ধরনের শঙ্কা তৈরি হয়েছে।
অনেকে মনে করছেন, এই ঘটনার মাধ্যমে ভিন্ন মতাবলম্বীদের কণ্ঠরোধ করার চেষ্টা করা হচ্ছে।
তথ্য সূত্র: আল জাজিরা