মার্কিন সরকারের সঙ্গে কলম্বিয়া শিক্ষার্থীর তীব্র লড়াই, কেন এই আট

যুক্তরাষ্ট্রের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিলিস্তিনপন্থী আন্দোলনকারী ছাত্রকে আটকের ঘটনায় তীব্র বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র মাহমুদ খলিলকে ক্যাম্পাস প্রটেস্টের কারণে আটকের পর লুইজিয়ানায় সরিয়ে নেওয়ার ঘটনায় দেশটির সরকার এবং খলিলের মধ্যে আইনি লড়াই চলছে।

সরকারের দাবি, নিউ জার্সির একটি ডিটেনশন সেন্টারে পোকামাকড়ের উপদ্রব ছিল, তাই তাকে লুইজিয়ানায় পাঠানো হয়েছে। অন্যদিকে, খলিলের অভিযোগ, তাকে তাৎক্ষণিকভাবে দেশ থেকে বিতাড়িত করার জন্যই এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।

আদালতে পেশ করা এক বিবৃতিতে খলিল জানিয়েছেন, নিউ জার্সির এলিজাবেথ ডিটেনশন সেন্টারে থাকাকালীন সময় তিনি পোকামাকড়ের উপদ্রবের কথা শোনেননি। তার আইনজীবীরা সরকারের এই পদক্ষেপকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলছেন।

তাদের দাবি, ফিলিস্তিনের অধিকারের পক্ষে কথা বলার কারণে খলিলের কণ্ঠরোধ করার চেষ্টা করা হচ্ছে। তারা আদালতের কাছে আবেদন করেছেন, যাতে সরকার যুক্তরাষ্ট্রে ফিলিস্তিনি অধিকারের সমর্থনে বা ইসরায়েল বিরোধী কোনো ধরনের শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভে অংশ নেওয়া অ-নাগরিকদের গ্রেপ্তার, আটক বা বিতাড়িত করতে না পারে।

খলিল তার বিবৃতিতে আরও জানান, আটকের পর তাকে একটি ভ্যানে করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল। তখন তিনি জানতে চান, তাকে কি ম্যানহাটনের এফবিআই সদর দফতরে ফিরিয়ে নেওয়া হচ্ছে?

উত্তরে তাকে জানানো হয়, ‘না, আমরা আপনাকে জন এফ কেনেডি বিমানবন্দরে নিয়ে যাচ্ছি।’ এরপরই তিনি শঙ্কিত হয়ে পড়েন এবং তার মনে হয়, তাকে হয়তো যুক্তরাষ্ট্র থেকে বিতাড়িত করা হচ্ছে।

এলিজাবেথ ডিটেনশন সেন্টারে কাটানো সময়ের বর্ণনা দিতে গিয়ে খলিল জানান, সেখানে প্রায় দশজন মানুষের সঙ্গে তিনি একটি অপেক্ষমাণ কক্ষে ছিলেন। সেখানে ঘুমানোর জন্য কোনো বিছানা, তোশক বা কম্বল ছিল না।

ঠান্ডার মধ্যেই তাদের মেঝেতে ঘুমাতে হয়েছে। সরকারের আইনজীবীরা আদালতকে জানিয়েছেন, ৮ মার্চ খলিলকে গ্রেপ্তার করা হয় এবং পরে তাকে ম্যানহাটন থেকে এলিজাবেথে নেওয়া হয়।

এরপর ৯ মার্চ সকালে লুইজিয়ানায় তার ফ্লাইট হয়। আইনজীবীদের দাবি, পোকামাকড়ের কারণে খলিলকে এলিজাবেথ ডিটেনশন সেন্টারে বেশি দিন রাখা সম্ভব ছিল না।

তাই তাকে লুইজিয়ানায় পাঠানো হয়েছে। তবে খলিলের আইনজীবীরা বলছেন, পোকামাকড়ের কারণটি ছিল একটি অজুহাত মাত্র।

তাদের মতে, লুইজিয়ানায় স্থানান্তরের বিষয়টি ছিল পূর্ব-পরিকল্পিত এবং এর পেছনে খারাপ উদ্দেশ্য ছিল। তারা আরও উল্লেখ করেন, পোকামাকড়ের অভিযোগ সত্ত্বেও এলিজাবেথ ডিটেনশন সেন্টার ৬ মার্চ থেকে গত বৃহস্পতিবার পর্যন্ত কমপক্ষে চারজন ব্যক্তিকে তাদের হেফাজতে নিয়েছে।

এমনকি খলিল নিজেও সেখানে অন্যদের আটকের প্রক্রিয়া দেখেছেন। আদালতে শুনানিতে সরকারের আইনজীবীরা মামলার কার্যক্রম নিউ জার্সির পরিবর্তে লুইজিয়ানায় পরিচালনার জন্য আবেদন করেছেন।

তবে ম্যানহাটনের ফেডারেল আদালত এখনো এ বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি। এই ঘটনার মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রে মত প্রকাশের স্বাধীনতা এবং সরকার কর্তৃক ভিন্নমত দমনের একটি সম্ভাব্য চিত্র ফুটে উঠেছে।

বিষয়টি বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটেও বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ, যেখানে নাগরিক অধিকার এবং প্রতিবাদের স্বাধীনতা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। তথ্য সূত্র: এসোসিয়েটেড প্রেস।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *