যুক্তরাষ্ট্রের বিখ্যাত কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়, সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসনের সঙ্গে একটি বিশাল অঙ্কের আর্থিক চুক্তিতে রাজি হয়েছে। খবর অনুযায়ী, বিশ্ববিদ্যালয়টি ফেডারেল সরকারের কাছ থেকে বাতিল হওয়া গবেষণা তহবিল পুনরুদ্ধারের জন্য ২২০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের বেশি পরিশোধ করতে সম্মত হয়েছে।
এই পদক্ষেপটি ক্যাম্পাসে ইহুদি-বিদ্বেষের অভিযোগের প্রতিক্রিয়ায় নেওয়া হয়েছে।
প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, এই চুক্তির মধ্যে রয়েছে ২০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের একটি মীমাংসা, যা বিশ্ববিদ্যালয়টি আগামী তিন বছরে পরিশোধ করবে। এছাড়াও, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবরের হামাস আক্রমণের পর ইহুদি কর্মীদের বিরুদ্ধে সংঘটিত হওয়া নাগরিক অধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগের নিষ্পত্তির জন্য আরও ২১ মিলিয়ন ডলার পরিশোধ করতে হবে।
এই চুক্তির ফলে, কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়কে তাদের ছাত্র শৃঙ্খলা প্রক্রিয়া এবং পাঠ্যক্রমের পর্যালোচনা সহ বেশ কিছু সংস্কার করতে হবে।
কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট ক্লিয়ার শিপম্যান এই চুক্তিকে ‘একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন।
তিনি বলেন, এই চুক্তির ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বায়ত্তশাসন বজায় থাকবে। ট্রাম্প প্রশাসনের পক্ষ থেকে শিক্ষাসচিব লিন্ডা ম্যাকমোহন এই চুক্তিকে ‘ঐতিহাসিক’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন। তিনি মনে করেন, এর মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ইহুদি-বিদ্বেষের বিরুদ্ধে লড়াই আরও জোরদার হবে।
চুক্তি অনুযায়ী, কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয় মধ্যপ্রাচ্যের পাঠ্যক্রম পর্যালোচনা করতে এবং ইসরায়েল ও ইহুদি স্টাডিজ ইনস্টিটিউটে নতুন শিক্ষক নিয়োগ করতে রাজি হয়েছে।
এছাড়াও, তারা এমন কর্মসূচি বন্ধ করতে সম্মত হয়েছে যা ‘জাতিগত ফলাফলের’ দিকে পরিচালিত করে। বিশ্ববিদ্যালয়টিকে এখন নিশ্চিত করতে হবে যে, তাদের কর্মসূচিগুলো কোনো ‘বেআইনি’ বৈচিত্র্য, ইক্যুইটি ও অন্তর্ভুক্তি (DEI) লক্ষ্যকে উৎসাহিত করে না।
সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তার সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মে এই চুক্তির বিষয়ে মন্তব্য করেছেন। তিনি বলেছেন, কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয় তাদের বিতর্কিত DEI নীতিগুলি বাতিল করতে এবং শুধুমাত্র মেধার ভিত্তিতে শিক্ষার্থী ভর্তি করতে রাজি হয়েছে।
তিনি আরও উল্লেখ করেছেন, এই ধরনের পদক্ষেপ অন্যান্য উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রেও নেওয়া হতে পারে।
এই চুক্তির ফলে কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ওপর ফেডারেল সরকারের নজরদারি আরও বাড়বে।
এর আগে, বিশ্ববিদ্যালয়টি ফিলিস্তিনিপন্থী বিক্ষোভের কারণে সমালোচিত হয়েছিল। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
এই চুক্তির একটি অংশ হিসেবে, কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয় বিদেশি শিক্ষার্থীদের যুক্তরাষ্ট্রে অধ্যয়নের কারণ জানতে চাইবে এবং নিশ্চিত করবে যে, সকল শিক্ষার্থী ‘সভ্য আলোচনা’র প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
এছাড়াও, ভিসা-সংক্রান্ত কোনো সমস্যা হলে, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সরকারকেও তথ্য সরবরাহ করবে।
এই ঘটনার প্রেক্ষাপটে, বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ফেডারেল গবেষণা তহবিলের ওপর নজরদারি বাড়ানো হয়েছে।
যেমন- কর্নেল, নর্থওয়েস্টার্ন, ব্রাউন এবং প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয়েও ২ বিলিয়ন ডলারের বেশি তহবিল স্থগিত করা হয়েছে।
এই চুক্তির ফলে, বাংলাদেশি শিক্ষার্থীসহ আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের ওপর কেমন প্রভাব পড়বে, সে বিষয়ে বিস্তারিত কোনো তথ্য এখনো পাওয়া যায়নি।
তবে, যুক্তরাষ্ট্রের উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে এমন সিদ্ধান্তের প্রভাব ভবিষ্যতে দেখা যেতে পারে।
তথ্য সূত্র: এসোসিয়েটেড প্রেস (এপি)