ঢাকার যানজটের ধুলো আর কোলাহলের মাঝে, একটুখানি শান্তির আশ্রয় খুঁজে পাওয়া যেন এক কঠিন যুদ্ধজয়ের সামিল। কর্মব্যস্ত জীবনে হাঁপিয়ে ওঠা মানুষের জন্য প্রকৃতির সান্নিধ্য এক দারুণ দাওয়াই হতে পারে।
সম্প্রতি, এমনটাই অনুভব করেছেন অনেকে, যারা শহরের কোলাহল থেকে দূরে, একটু শান্ত সবুজ প্রকৃতির মাঝে কয়েকটা মুহূর্ত কাটিয়ে আসার গুরুত্ব উপলব্ধি করেছেন।
একদিন, অফিসের ব্যস্ত সময়ে, ঢাকার যানজটে বসে থাকতে থাকতে আমার চোখ গেল রাস্তার পাশে থাকা একটা সবুজ উদ্যানের দিকে। দেখলাম, গাছগুলোর ফাঁক দিয়ে আসা সূর্যের আলো যেন এক মায়াবী পরিবেশ সৃষ্টি করেছে।
তখনই মনে হলো, এই ব্যস্ত জীবনে প্রকৃতির কাছাকাছি যাওয়াটা খুব জরুরি। এরপর থেকে, আমি চেষ্টা করি অন্তত সপ্তাহে একদিন, কাজের ফাঁকে একটু সময় বের করে কোনো পার্কে যেতে।
আমার এই ‘বিশেষ স্থান’-এ যাওয়ার পথটাও বেশ উপভোগ করি। শহরের কোলাহল থেকে একটু দূরে, পাখির কিচিরমিচির আর হালকা বাতাসে মন জুড়িয়ে যায়।
কখনো দেখি, পুকুরে হাঁসের দল জলকেলিতে মত্ত, আবার কখনো দেখি, সবুজ ঘাসের ওপর প্রজাপতির ওড়াউড়ি। চারপাশের এই শান্ত পরিবেশ যেন এক মুহূর্তের জন্য হলেও সব ক্লান্তি দূর করে দেয়।
বিশেষ করে বর্ষাকালে, যখন চারপাশের প্রকৃতি সবুজ হয়ে ওঠে, তখন এখানকার দৃশ্য মনকে শান্তি এনে দেয়। বৃষ্টির পরে গাছের পাতা থেকে আসা মিষ্টি গন্ধ, আর মাটি ভেজা গন্ধ—যেন এক অন্য জগৎ।
প্রকৃতির এই রূপ আমাকে মুগ্ধ করে। মাঝে মাঝে মনে হয়, এই শহরের জীবনে প্রকৃতির কাছাকাছি আসাটা যেন এক নতুন উপলব্ধি।
জাপানে ভ্রমণের সময় দেখেছি, সেখানকার মানুষজন তাদের বাড়ির আশেপাশে ছোট ছোট বাগান তৈরি করে প্রকৃতির প্রতি ভালোবাসা প্রকাশ করে। এমনকি, রেলস্টেশনের মতো ব্যস্ত জায়গায়ও তারা নান্দনিক বাগান তৈরি করে প্রকৃতির ছোঁয়া রেখেছে।
আসলে, সবুজ প্রকৃতির এই আকর্ষণ universal বা সার্বজনীন। সবুজ রং, যা জীবনের প্রতীক, আমাদের মনে এক ধরনের শান্তি এনে দেয়।
কংক্রিটের এই শহরে, যেখানে জীবনের গতি এত দ্রুত, সেখানে প্রকৃতির সান্নিধ্য আমাদের মানসিক শান্তির জন্য অপরিহার্য।
সুতরাং, আসুন, আমরা সবাই আমাদের আশেপাশে থাকা সবুজ স্থানগুলো খুঁজে বের করি। হয়তো, আমাদের বাড়ির কাছেই কোনো পার্ক আছে, অথবা কোনো খোলা জায়গা, যেখানে কিছু গাছপালা রয়েছে।
চেষ্টা করুন, প্রতিদিনের ব্যস্ত রাস্তার বদলে, সেই সবুজ পথে হেঁটে আসার। প্রকৃতির কাছাকাছি যান, শ্বাস নিন, আর অনুভব করুন জীবনের আনন্দ।
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান