ক্যালিফোর্নিয়ার কমটনে, প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের অভিবাসন নীতির বিরুদ্ধে বিক্ষোভের সময় এক বিরল দৃশ্যের অবতারণা হয়। সেখানকার একটি রেস্টুরেন্টের মালিক এলিজাবেথ মেনডোজা, যিনি নিজেও একজন অভিবাসী, বিক্ষোভকারী এবং পুলিশ—উভয়কেই সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেন।
মেনডোজার এই মানবিকতা এবং সাহসিকতার গল্পটি এখন সোশ্যাল মিডিয়ায় ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে।
লস অ্যাঞ্জেলেস কাউন্টির কমটনে অবস্থিত ‘রেস্টুরেন্ট ইয় পুপুসারিয়া লা সেইবা’র বাইরে যখন বিক্ষোভ চলছিল, তখন মেনডোজা দেখেন যে প্রতিবাদকারীরা এবং পুলিশের মধ্যে সংঘর্ষ হচ্ছে। পরিস্থিতি ক্রমশ উত্তপ্ত হয়ে উঠছিল।
তিনি জানান, প্রথমে অল্প কিছু লোক ছিল, কিন্তু মুহূর্তের মধ্যে সেটি অনেক বেড়ে যায়। এক পর্যায়ে, তিনি দেখেন পুলিশ বিক্ষোভকারীদের সরিয়ে দিতে কাঁদানে গ্যাস ব্যবহার করছে। মেনডোজার কথায়, “আমি জানিনা তারা যে টিয়ার গ্যাস ছুড়েছিল, তার কি হয়েছিল।
এর তীব্রতা এতটাই বেশি ছিল যে, আমাদের সবার দম বন্ধ হয়ে আসছিল।
পরিস্থিতি যখন নিয়ন্ত্রণের বাইরে যাচ্ছিল, তখন মেনডোজা এবং তার কর্মীরা এগিয়ে আসেন। তারা পুলিশের সদস্যদের জল সরবরাহ করেন, তাদের চোখেমুখে ভেজা কাপড় দেন।
ভিডিওতে দেখা যায়, মেনডোজার এক কর্মচারী, এক পুলিশ অফিসারের মুখ পরিষ্কার করে, তাকে দোকানের পেছনের রেফ্রিজারেটরের দিকে নিয়ে যান।
মেনডোজা তার টিকটক অ্যাকাউন্টে একটি ভিডিও আপলোড করেন, যেখানে তার তিনজন কর্মচারী দুজন পুলিশ অফিসারের সেবা করছেন। একজন কর্মচারী অফিসারের মুখে কাপড় ধরে ছিলেন, অন্যজন বাতাস করছিলেন।
মেনডোজা জানান, বিক্ষোভকারীদের জন্য তিনি মাস্ক খুঁজেছিলেন, কিন্তু পাননি। তিনি তাদের পরিষ্কার করার জন্য ব্যবহৃত কিছু তোয়ালে দেন, এবং তাদের সেগুলো দিয়ে মুখ ঢাকতে বলেন।
তিনি আরও বলেন, “আমি তাদের দুধও দিতে চেয়েছিলাম, কিন্তু আমার কাছে দুধ ফুরিয়ে গিয়েছিল।
যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসন নীতির বিরুদ্ধে হওয়া এই বিক্ষোভে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষের ঘটনায় কয়েকশ মানুষকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ন্যাশনাল গার্ড মোতায়েন করার জন্য একটি বিরল আইন প্রয়োগ করেন, যদিও ক্যালিফোর্নিয়ার গভর্নর গ্যাভিন নিউসম এবং স্থানীয় কর্মকর্তারা এর বিরোধিতা করেছিলেন।
মেনডোজা জানান, তিনি তার কর্মীদের কাউকে সাহায্য করার নির্দেশ দেননি। তারা সবাই মানবিক দিক বিবেচনা করে নিজেদের ইচ্ছায় কাজ করেছেন।
তিনি আরও বলেন, “আমি শুধু দরজার কাছে দাঁড়িয়ে সবাইকে ভিতরে আসতে সাহায্য করেছি। তারা তাদের মানবিকতার জায়গা থেকে অন্যদের প্রতি যা করা উচিত, তাই করেছে।
যুক্তরাষ্ট্রের আদমশুমারি অনুসারে, লস অ্যাঞ্জেলেস কাউন্টির প্রায় এক কোটি বাসিন্দার অর্ধেকই হিস্পানিক বা ল্যাটিনো। এখানকার এক-তৃতীয়াংশ মানুষ অভিবাসী।
মেনডোজা নিজেও কোনো পরিবার ছাড়াই যুক্তরাষ্ট্রে এসেছিলেন।
তিনি জানান, প্রথমে একটি রেস্টুরেন্টে কাজ করতেন। ১৫ বছর আগে তিনি নিজের রেস্টুরেন্ট খোলেন এবং ধীরে ধীরে স্থানীয় সমাজে পরিচিত হন।
মেনডোজা বলেন, “আমি ভয় পেয়েছিলাম, যদি কিছু খারাপ ঘটে এবং তারা আমার রেস্টুরেন্ট ভেঙে দেয়।
আমি পরিস্থিতি দেখেছি এবং সৃষ্টিকর্তাকে ধন্যবাদ জানাই। আমি অনেক বিক্ষোভকারীর প্রতি সহানুভূতিশীল।
আমি এই এলাকায় থাকি, এবং আমি প্রায় তাদের কয়েকজনকে চিনি, তারা ভালো মানুষ এবং আমার গ্রাহক।
মেনডোজার এই মানবিক কাজের জন্য অনেকেই তাকে প্রশংসা করেছেন। তবে কেউ কেউ তাকে উভয় পক্ষকে সাহায্য করার জন্য সমালোচনাও করেছেন।
মেনডোজা বলেন, “আমি শুধু চাই তারা জানুক, আমরা মানুষ হিসেবে এই কাজটি করেছি।
আমি তাদের সাহায্য করতে পেরে খুশি, ঠিক যেমন আমি বিক্ষোভের সময় সেখানে থাকা মানুষগুলোর পাশে ছিলাম।
মেনডোজা আরও বলেন, বিশ্বে সবার জন্য “সহানুভূতি এবং মানবিকতার” প্রয়োজন।
তিনি আরও যোগ করেন, একজন অভিবাসী হিসেবে তিনি চান মানুষ জানুক, যুক্তরাষ্ট্রে আসা বেশিরভাগ অভিবাসী কঠোর পরিশ্রম করতে এবং নিজেদের ও অন্যদের জীবন উন্নত করতে চায়।
“কখনও কখনও আমাদের এলিয়েনের মতো আচরণ করা হয়; আমরা তেমন নই। আমাদের গায়ের রং কালো হওয়ার কারণে আমরা আলাদা নই।
আমরা সবাই একটি সুন্দর দেশ দেখেছি এবং আমাদের জীবনের আরও ভালো সুযোগ দেখেছি। হ্যাঁ, সম্ভবত এ কারণেই আমরা এখানে এসেছি, এবং সম্ভবত আমরা কয়েকজন সঠিক পথে আসিনি।
তবে একইভাবে, আমরা সবাই একটি উদ্দেশ্য নিয়ে এসেছি, যা হল কাজ করা এবং চেষ্টা করা। আর প্রায়শই, আমি মনে করি, তারা বুঝতে পারে না যে আমরা ল্যাটিনোরাই সবচেয়ে কঠিন কাজগুলো করি।
তথ্য সূত্র: সিএনএন