নতুন পোপ: গোপন ভোটের মাধ্যমে নির্বাচনের প্রস্তুতি!

ক্যাথলিক খ্রিস্টান ধর্মগুরু পোপ নির্বাচনের জন্য কনক্লেভ শুরু হয়েছে। বুধবার, ৭ই মে, বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা শতাধিক কার্ডিনাল এই গুরুত্বপূর্ণ প্রক্রিয়ার অংশ নিতে একত্রিত হয়েছেন।

প্রয়াত পোপ ফ্রান্সিসের মৃত্যুর দুই সপ্তাহেরও বেশি সময় পরে এই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। গত ২১শে এপ্রিল, ৮৮ বছর বয়সে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।

নির্বাচন প্রক্রিয়া শুরুর আগে, ১৩৩ জন ভোটার কার্ডিনাল সিস্টিন চ্যাপেলে প্রবেশ করেন এবং গোপনীয়তার শপথ গ্রহণ করেন। এরপর, কনক্লেভের সঙ্গে জড়িত নন এমন সকলকে সরিয়ে নেওয়া হয়।

এরপর চলে ধ্যান এবং প্রার্থনার পালা। এই পর্বটি জনসাধারণের জন্য সরাসরি সম্প্রচারিত হয়নি। এরপর শুরু হয় ভোট গ্রহণ প্রক্রিয়া।

নতুন পোপ নির্বাচনের জন্য ১৩৩ জন কার্ডিনাল ভোট দিতে পারবেন। যদিও কার্ডিনালদের সংখ্যা আরও বেশি, তবে ৮০ বছরের বেশি বয়সী কার্ডিনালরা ভোট দিতে পারেন না।

এদের মধ্যে ১০৮ জন কার্ডিনালকে পোপ ফ্রান্সিস নিজেই নিয়োগ করেছিলেন। কনক্লেভ চলাকালীন সময়ে ভ্যাটিকানের সিস্টিন চ্যাপেল দর্শনার্থীদের জন্য বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।

গোপন এই নির্বাচনের ফল সাদা ধোঁয়ার মাধ্যমে ঘোষণা করা হবে। সিস্টিন চ্যাপেলের চিমনির উপরে সাদা ধোঁয়া উঠলে বোঝা যাবে নতুন পোপ নির্বাচিত হয়েছেন।

আর যদি কালো ধোঁয়া দেখা যায়, তাহলে বুঝতে হবে ভোট গ্রহণ প্রক্রিয়া এখনও চলছে।

ঐতিহাসিক কিছু কনক্লেভ প্রায় তিন বছর পর্যন্ত স্থায়ী হয়েছিল, তবে আধুনিক চার্চের ইতিহাসে বেশিরভাগ নির্বাচন কয়েক দিনের মধ্যেই সম্পন্ন হয়েছে।

এই কনক্লেভ শুরুর আগে, একজন কার্ডিনাল ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন যে সম্ভবত খুব বেশি দিন অপেক্ষা করতে হবে না।

এল সালভাদরের কার্ডিনাল গ্রেগোরিও রোসা চাভেজ (যিনি ৮২ বছর বয়সের কারণে ভোট দিতে পারবেন না) সাংবাদিকদের বলেন, “আমি মনে করি একটা ঐকমত্য রয়েছে।” তিনি আরও যোগ করেন, “চার্চ এবং বিশ্বের জন্য আমাদের কেমন পোপ প্রয়োজন, সে সম্পর্কে ধারণা খুবই স্পষ্ট।”

সে কারণেই আমি মনে করি কনক্লেভ খুব দ্রুত শেষ হবে, হয়তো দুই বা তিন দিনের মধ্যে।

পোপ ফ্রান্সিসের মৃত্যুর পর, অনেকেই সম্ভাব্য উত্তরসূরিদের তালিকা প্রকাশ করতে শুরু করেছেন। এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন ফিলিপাইনের কার্ডিনাল লুইস তাগলে, ইতালির কার্ডিনাল পিট্রো পারোলিন, গিনির কার্ডিনাল রবার্ট সারা এবং ফ্রান্সের কার্ডিনাল জ্যাঁ-মার্ক অ্যাভেলিন।

বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, প্রয়াত পোপের উত্তরসূরি হয়তো তাঁর প্রগতিশীল আদর্শের অনুসারী হতে পারেন। তবে, যুক্তরাষ্ট্রের ক্যাথলিক ধর্মতত্ত্ববিদ এবং ডি পল ইউনিভার্সিটির ক্যাথলিক স্টাডিজের অধ্যাপক বিল ক্যাভানাফ সতর্ক করে বলেছেন, “এখানে যেকোনো কিছুই ঘটতে পারে।”

তিনি আরও বলেন, “নতুন পোপ কি আবারও ইউরোপ থেকে আসবেন, নাকি ‘গ্লোবাল সাউথ’ অর্থাৎ এশিয়া বা আফ্রিকা থেকে কেউ নির্বাচিত হবেন, তা বলা কঠিন।

নটর ডেম ইউনিভার্সিটির আমেরিকান স্টাডিজ ও ইতিহাসের অধ্যাপক ক্যাথলিন স্প্রোস কামিংসও বলেছেন, সম্ভাব্য তালিকায় থাকা সবাই যে নির্বাচিত হবেন, এমন নাও হতে পারে। তিনি প্রাক্তন পোপ ষোড়শ বেনেডিক্টের উদাহরণ দিয়ে বলেন, “তিনি প্রথম সারিতে ছিলেন না, কিন্তু তিনিই নির্বাচিত হয়েছিলেন।

পোপ ফ্রান্সিসের মৃত্যুর পর তাঁর সরকারি বাসভবন, অ্যাপোস্টলিক প্যালেস সিল করে দেওয়া হয়েছে। এই ঘটনা নিয়ে নির্মিত হয়েছে অস্কারজয়ী চলচ্চিত্র ‘কনক্লেভ’।

এছাড়াও, পোপ ফ্রান্সিস সাধারণত যে ছোট বাসভবনে থাকতেন, সেই কাসা সান্তা মার্তাও ঐতিহ্য অনুযায়ী সিল করা হয়েছে। কনক্লেভ শেষ না হওয়া পর্যন্ত অ্যাপোস্টলিক প্যালেস সিল করা থাকবে।

তথ্য সূত্র: পিপলস

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *