পোপ নির্বাচনের গোপন জগৎ: ‘কনক্লেভ’ সিনেমার বাস্তব ভিত্তি কতটুকু?
নতুন একটি সিনেমা, ‘কনক্লেভ’, সম্প্রতি বিশ্বজুড়ে আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। ছবিটিতে ক্যাথলিক চার্চের সর্বোচ্চ নেতা, পোপ নির্বাচনের গোপন প্রক্রিয়া উন্মোচন করা হয়েছে। পরিচালক এডওয়ার্ড বার্গার-এর এই ছবিতে অভিনয় করেছেন র্যালফ ফাইনেস, স্ট্যানলি ট্যুসিসহ আরও অনেকে। সিনেমাটি ২০২৩ সালের অস্কারে সেরা অভিযোজিত চিত্রনাট্যের পুরস্কার জিতেছে।
সিনেমাটি মূলত ব্রিটিশ ঔপন্যাসিক রবার্ট হ্যারিসের ২০১৬ সালের একটি থ্রিলার অবলম্বনে নির্মিত। গল্পটি একটি পোপ নির্বাচনের প্রেক্ষাপটে তৈরি, যেখানে ক্ষমতা, ধর্ম এবং মানুষের উচ্চাকাঙ্ক্ষার এক জটিল চিত্র ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। ছবিতে ভ্যাটিকানের গোপন অলিগলিতে চলা আলোচনা, প্রভাবশালী ব্যক্তিদের মধ্যেকার দ্বন্দ্ব, এবং পোপ নির্বাচনের জটিল প্রক্রিয়াগুলো তুলে ধরা হয়েছে।
কিন্তু ‘কনক্লেভ’ নিয়ে বিতর্কও কম হয়নি। অনেকে মনে করছেন, সিনেমাটি চার্চের ভেতরের চিত্রকে কিছুটা অতি-নাটকীয়ভাবে উপস্থাপন করেছে। বিশেষ করে, রক্ষণশীল মহলের কেউ কেউ এর বিষয়বস্তু এবং উপস্থাপনা নিয়ে সমালোচনা করেছেন। তাদের মতে, ছবিতে চার্চের কর্মকর্তাদের মধ্যে লোভ, দুর্নীতি এবং ক্ষমতার লড়াইকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। আবার কেউ কেউ একে প্রগতিশীল ধ্যান-ধারণার প্রতিফলন হিসেবেও দেখছেন।
বাস্তবে, পোপ নির্বাচনের প্রক্রিয়াটি অত্যন্ত গোপনীয়তার সঙ্গে সম্পন্ন হয়। এই নির্বাচনে শুধুমাত্র ৮০ বছরের কম বয়সী কার্ডিনালরা ভোট দিতে পারেন। ভোট গ্রহণের জন্য তারা সিস্টিন চ্যাপেলে মিলিত হন। ভোটের ফলাফল ঘোষণার আগে পর্যন্ত বাইরের জগৎ থেকে তাদের সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন করে রাখা হয়। এমনকি তারা বাইরের কোনো খবরও জানতে পারেন না।
নির্বাচনে পোপ নির্বাচনের জন্য দুই-তৃতীয়াংশ ভোটের প্রয়োজন হয়। নতুন পোপ নির্বাচিত হওয়ার পরে, সিস্টিন চ্যাপেলের চিমনির উপরে সাদা ধোঁয়া ওড়ে, যা বাইরে অপেক্ষমান জনতাকে আনন্দের বার্তা দেয়।
সিনেমার নির্মাতারা বাস্তবতাকে ফুটিয়ে তোলার জন্য অনেক চেষ্টা করেছেন। রবার্ট হ্যারিস তাঁর উপন্যাসের জন্য কার্ডিনাল করমাক মার্ফি ও’কনরের সাহায্য নিয়েছিলেন, যিনি ২০০৫ এবং ২০১৩ সালের কনক্লেভে অংশ নিয়েছিলেন। এমনকি সিনেমার চিত্রনাট্যকার এবং নির্মাতারা সিস্টিন চ্যাপেল ঘুরে সবকিছু কাছ থেকে দেখেছেন।
সিনেমাটিতে কার্ডিনালদের ব্যাগ নিয়ে আসা, নির্বাচনের আগে ধূমপান করা, এমনকি কার্ডিনালদের থাকার স্থান – ডমাস সানcta মারtha-এর ভেতরের দৃশ্যও যথাযথভাবে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। এছাড়াও, মৃত পোপের ঘর সিল করা, তাঁর আংটি ধ্বংস করা, এবং সাদা ধোঁয়া তৈরির জন্য রাসায়নিক ব্যবহারের মতো বিষয়গুলোও ছবিতে দেখানো হয়েছে।
তবে, সিনেমার কিছু অংশে সামান্য ভুলভ্রান্তি রয়েছে। যেমন, সিস্টিন চ্যাপেলের ভেতরের সজ্জা এবং কার্ডিনালদের মধ্যেকার কথোপকথনের ধরনে কিছু পার্থক্য দেখা যায়। সিনেমার সবচেয়ে দুর্বল দিকটি হলো এর ক্লাইম্যাক্স, যা দর্শকদের কাছে কিছুটা অবিশ্বাস্য মনে হতে পারে।
বিশ্লেষকদের মতে, ‘কনক্লেভ’ মূলত একটি কার্ডিনালের বিশ্বাসের সংকট এবং তা থেকে উত্তরণের গল্প। সিনেমাটি একদিকে যেমন পোপ নির্বাচনের গোপন জগৎ তুলে ধরেছে, তেমনি মানুষের বিশ্বাস এবং আধ্যাত্মিকতার গভীরতাকেও স্পর্শ করে।
তথ্যসূত্র: সিএনএন