গণতান্ত্রিক কঙ্গো প্রজাতন্ত্র (DRC) এবং রুয়ান্ডা-সমর্থিত বিদ্রোহীরা কঙ্গোর পূর্বাঞ্চলে দশকের পর দশক ধরে চলা সংঘাত অবসানের লক্ষ্যে কাতারে একটি গুরুত্বপূর্ণ নীতি ঘোষণার চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছে। শনিবারের এই চুক্তির মূল উদ্দেশ্য হল শান্তি ফিরিয়ে আনা এবং বিদ্রোহীদের নিয়ন্ত্রণে থাকা এলাকাগুলোতে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা পুনরুদ্ধার করা।
খবরটি জানিয়েছে আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থা, এসোসিয়েটেড প্রেস (এপি)।
চুক্তি অনুযায়ী, উভয় পক্ষই বন্দী ও আটককৃতদের মুক্তি দেওয়ার পাশাপাশি দেশের সব অংশে, বিশেষ করে বিদ্রোহী অধ্যুষিত এলাকাগুলোতে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা ফিরিয়ে আনতে সম্মত হয়েছে।
কাতারের মন্ত্রী মোহাম্মদ বিন আবদুল আজিজ বিন সালেহ আল-খুলাইফি এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, এর মাধ্যমে উভয় পক্ষ ‘আস্থা তৈরি’ করতে চাইছে।
তবে, বিদ্রোহীদের শহর থেকে সরে আসা নিয়ে মতভেদ দেখা যাচ্ছে। এম২৩ বিদ্রোহী গোষ্ঠীর নেতা বার্ট্রান্ড বিসিমওয়া জানিয়েছেন, এই চুক্তিতে শহর ছাড়ার কথা বলা হয়নি, বরং রাষ্ট্রের ক্ষমতাকে শক্তিশালী করার কথা বলা হয়েছে, যাতে তারা তাদের দায়িত্ব পালন করতে পারে।
অন্যদিকে, কঙ্গোর সরকারি মুখপাত্র প্যাট্রিক মুয়ায়া বলেছেন, বিদ্রোহীদের ‘আলোচনা-অযোগ্যভাবে’ সরে আসা এবং তারপর সরকারি বাহিনী ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান মোতায়েনের বিষয়টি চুক্তিতে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
কঙ্গোর পূর্বাঞ্চলে খনিজ সম্পদ সমৃদ্ধ এলাকা দখলের জন্য সক্রিয় রয়েছে একশোর বেশি সশস্ত্র গোষ্ঠী। এদের মধ্যে এম২৩ বিদ্রোহী গোষ্ঠীটি সবচেয়ে প্রভাবশালী।
জাতিসংঘের হিসাব অনুযায়ী, কঙ্গোতে প্রায় ৭০ লক্ষ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে। জাতিসংঘের মতে, কঙ্গোর পূর্বাঞ্চলের এই সংঘাত বিশ্বের অন্যতম দীর্ঘ ও জটিল মানবিক সংকটগুলোর মধ্যে একটি।
শনিবারের এই চুক্তি উভয় পক্ষের মধ্যে সরাসরি আলোচনার প্রথম পদক্ষেপ। এর আগে, চলতি বছরের শুরুতে বিদ্রোহীরা কঙ্গোর পূর্বাঞ্চলের দুটি গুরুত্বপূর্ণ শহর দখল করে নেয়।
এপি-র দেখা চুক্তির একটি অনুলিপি অনুযায়ী, আগামী ১৮ই আগস্টের মধ্যে একটি চূড়ান্ত শান্তি চুক্তি স্বাক্ষরিত হওয়ার কথা রয়েছে, যা গত জুনে কঙ্গো ও রুয়ান্ডার মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় হওয়া শান্তি চুক্তির সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ হবে।
এম২৩ বিদ্রোহী গোষ্ঠী কঙ্গোর সেনাবাহিনীর হাতে আটক তাদের সদস্যদের মুক্তি চাইছে, যাদের মধ্যে অনেকের মৃত্যুদণ্ড হতে পারে। অন্যদিকে, কঙ্গো সরকার বিদ্রোহীদের তাদের অধিকৃত এলাকা থেকে সরে যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছে।
কাতারের মন্ত্রী জানিয়েছেন, এই নীতি ঘোষণা স্বাক্ষরের ফলে একটি ব্যাপক শান্তি আলোচনার পথ খুলে গেল, যা এই সংঘাতের মূল কারণগুলো সমাধানে সাহায্য করবে।
চুক্তিটিতে কঙ্গো ও রুয়ান্ডার মধ্যে হওয়া গত ২৭শে জুনের শান্তি চুক্তির প্রধান বিষয়গুলো অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে, যার মধ্যে সংঘাতের কারণে বাস্তুচ্যুত হওয়া লক্ষ লক্ষ মানুষের সুরক্ষা ও নিরাপদ প্রত্যাবর্তনের বিষয়ও রয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের উপদেষ্টা মাসাদ বোলোস দোহা-য় অনুষ্ঠিত বৈঠকে যোগ দিয়ে বলেন, এই সংঘাতের একটি চূড়ান্ত সমাধানে আসার সময় এসেছে।
তিনি আরও বলেন, বিদ্রোহীদের নিয়ন্ত্রিত এলাকাগুলোতে রাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করা চুক্তির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। বোলোস যোগ করেন, এই সমস্যার সমাধানে আলোচনা, সেই আলোচনার ধারাবাহিকতা রক্ষা করা এবং অধ্যবসায়ের প্রয়োজন।
এই চুক্তির একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হল রুয়ান্ডার বিদ্রোহে সমর্থন বন্ধ করা। জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, রুয়ান্ডার হাজার হাজার সেনা এখনো কঙ্গোর পূর্বাঞ্চলে অবস্থান করছে।
রুয়ান্ডার পররাষ্ট্রমন্ত্রী অলিভিয়ার এনদুহুঙ্গিরেহে বলেছেন, কঙ্গো সরকার যদি রুয়ান্ডার বিরুদ্ধে ১৯৯৪ সালের গণহত্যায় জড়িত একটি সশস্ত্র গোষ্ঠীকে নিষ্ক্রিয় করতে পারে, তাহলে রুয়ান্ডা তাদের ‘প্রতিরক্ষামূলক ব্যবস্থা’ প্রত্যাহার করে নেবে।
বিশ্লেষকদের মতে, এম২৩ বিদ্রোহীদের জন্য কঙ্গোর পূর্বাঞ্চলের গোমা ও বুকাভু শহর থেকে সরে আসা কঠিন হবে, যা কঙ্গো কর্তৃপক্ষের দেওয়া ছাড়ের ওপর নির্ভর করবে। একই সঙ্গে, যুদ্ধের শিকার হওয়া মানুষের জন্য ন্যায়বিচার নিশ্চিত না হলে, টেকসই শান্তি প্রতিষ্ঠা করা কঠিন হবে বলেও অনেকে মনে করেন।
তথ্য সূত্র: এসোসিয়েটেড প্রেস