শাটডাউন: নাটকীয়তা থেকে বাঁচতে কংগ্রেসের পথ?

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে রাজনৈতিক অস্থিরতা: অচলাবস্থার কারণে সরকারি কার্যক্রম বন্ধ হওয়ার শঙ্কা।

যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক অঙ্গনে প্রায়ই দেখা যায় অচলাবস্থা, যা এখন একটি নিয়মিত ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। কংগ্রেসের বিভেদ এবং সরকারি কার্যক্রমের অর্থ বরাদ্দের প্রশ্নে মতানৈক্যের জেরে প্রায়ই এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়, যার ফলস্বরূপ সরকারি কাজকর্ম বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়।

এই অচলাবস্থা শুধু অভ্যন্তরীণ বিষয় নয়, বরং এর প্রভাব বিশ্ব অর্থনীতি এবং আন্তর্জাতিক সম্পর্কেও পড়তে পারে।

যুক্তরাষ্ট্রের আইনসভা, কংগ্রেস, মূলত দুটি অংশে বিভক্ত: সিনেট ও প্রতিনিধি পরিষদ। এই দুই কক্ষের মধ্যে যখন কোনো বিষয়ে সমঝোতা হয় না, বিশেষ করে বাজেট বা অর্থ বরাদ্দের মতো গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে, তখনই দেখা দেয় এই অচলাবস্থা।

এর প্রধান কারণ হলো রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যেকার তীব্র বিভেদ। বর্তমানে, ডেমোক্রেট ও রিপাবলিকান দলগুলোর মধ্যে স্বাস্থ্যখাত বিষয়ক ভর্তুকি এবং অভিবাসন নীতি নিয়ে তীব্র মতবিরোধ চলছে।

এই অচলাবস্থার একটি বড় কারণ হলো সরকারের ব্যয় নির্বাহের জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ নিয়ে দুই দলের মধ্যে ঐকমত্যের অভাব। রিপাবলিকানরা যেখানে সরকারি ব্যয়ের পরিমাণ কমাতে চাইছে, সেখানে ডেমোক্রেটরা স্বাস্থ্যখাতে ভর্তুকি অব্যাহত রাখতে চাইছে।

ওবামাকেয়ার বা ‘দ্য অ্যাফোর্ডেবল কেয়ার অ্যাক্ট’-এর অধীনে স্বাস্থ্য বীমা গ্রহণকারীদের জন্য ভর্তুকি প্রদান করা হয়। রিপাবলিকানরা এই ভর্তুকি কমানোর চেষ্টা করায় ডেমোক্রেটরা এর বিরোধিতা করছেন।

এই অচলাবস্থার কারণে সরকারি কাজকর্ম ব্যাহত হয়, যা বিভিন্ন খাতে বিরূপ প্রভাব ফেলে। সরকারি কর্মীদের বেতন বন্ধ হয়ে যায়, অনেক জরুরি পরিষেবাও স্থগিত হয়ে যায়।

এর ফলে, জনগণের মধ্যে এক ধরনের অস্থিরতা তৈরি হয় এবং সরকারের ভাবমূর্তিও ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এছাড়াও, এমন পরিস্থিতিতে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প, যেমন- নিউইয়র্কের পরিবহন অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প-এর জন্য বরাদ্দকৃত ১৮ বিলিয়ন ডলারের বেশি অর্থ ছাড় পেতে বিলম্ব হতে পারে।

যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে এমন অচলাবস্থার নজির অনেক। ১৯৮০ সাল থেকে এই ধরনের ঘটনা প্রায়ই ঘটছে। অনেক সময় রাজনৈতিক দলগুলো তাদের স্বার্থ হাসিলের জন্য এই ধরনের পরিস্থিতি তৈরি করে।

যেমন, কোনো দল তাদের নীতি বাস্তবায়নের জন্য অন্য দলের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে এই কৌশল ব্যবহার করে। সিনেটর রন জনসন-এর মতো কেউ কেউ এমন পরিস্থিতি এড়ানোর জন্য স্বল্পমেয়াদি বাজেট প্রস্তাব করেন, যাতে সরকারের কার্যক্রম নিয়মিত চলতে পারে।

কিন্তু রাজনৈতিক বিভেদের কারণে সেই প্রস্তাবও বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়নি।

এই অচলাবস্থা শুধু যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ বিষয় নয়, বরং এর আন্তর্জাতিক প্রভাবও রয়েছে। বিশ্ব অর্থনীতির অন্যতম চালিকাশক্তি হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের গুরুত্বের কারণে, এমন পরিস্থিতিতে বিশ্বজুড়ে অর্থনৈতিক অস্থিরতা দেখা দিতে পারে।

বিদেশি বিনিয়োগকারীরা তাদের বিনিয়োগের বিষয়ে দ্বিধাগ্রস্ত হতে পারেন, যা বৈশ্বিক বাণিজ্যের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।

বর্তমানে, উভয় দলই তাদের নিজ নিজ অবস্থান ধরে রেখেছে। রিপাবলিকানরা ডেমোক্রেটদের অভিবাসন নীতিকে দায়ী করছে, অন্যদিকে ডেমোক্রেটরা স্বাস্থ্যখাতের ভর্তুকি রক্ষার জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।

এই পরিস্থিতিতে, অচলাবস্থা কত দিন চলবে এবং এর ফলস্বরূপ কী ধরনের পরিস্থিতি তৈরি হবে, সেদিকেই এখন সবার নজর।

তথ্যসূত্র: সিএনএন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *