যমজ শিশুদের জন্ম একটি বিশেষ ঘটনা, তবে কিছু ক্ষেত্রে, এই শিশুরা জন্মের সময় পরস্পরের সাথে সংযুক্ত অবস্থায় আসে।
চিকিৎসা পরিভাষায়, এই ধরনের যমজদের বলা হয় “কনজয়েন্ড টুইনস” বা জোড়া-লাগানো যমজ। এটি একটি বিরল ঘটনা, যা প্রতি প্রায় ৫০,০০০ থেকে ৬০,০০০ জন জীবিত জন্মে একবার দেখা যায়। এদের মধ্যে প্রায় ৭০ শতাংশ ক্ষেত্রে, জোড়া-লাগানো যমজদের সবাই নারী হয়ে থাকে।
চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা মনে করেন, একটি নিষিক্ত ডিম্বাণু (ফার্টিলাইজড এগ) যখন বিভাজিত হয়ে দুটি শিশুর জন্ম দেয়, সেই বিভাজনের প্রক্রিয়াটি যদি কোনো কারণে সম্পূর্ণ না হয়, তবে এই ধরনের যমজ শিশুর জন্ম হতে পারে।
এদের শরীরের বিভিন্ন অংশ সংযুক্ত থাকতে পারে, যেমন বুক, পেট, মেরুদণ্ড, শ্রোণী বা মাথার দিক।
ইতিহাসের পাতায় “সিয়ামিজ টুইনস” বা “সিয়ামদেশীয় যমজ” শব্দটির উদ্ভব হয়েছিল, একজোড়া যমজ ভাই-এর সূত্রে, যাদের নাম ছিল এং এবং चांग বা বাংকার।
তারা ১৮১১ সালে তৎকালীন সিয়াম (বর্তমানে থাইল্যান্ড)-এ জন্ম নিয়েছিলেন। তারা সারা জীবন একসঙ্গে ছিলেন এবং বিভিন্ন প্রদর্শনীতে অংশ নিতেন। আশ্চর্যের বিষয় হলো, এই দুই ভাই বিয়ে করেছিলেন এবং তাদের প্রত্যেকের পরিবারে ১১ জন করে সন্তান ছিল।
চিকিৎসা বিজ্ঞানের অগ্রগতির ফলে, জোড়া-লাগানো যমজ শিশুদের পৃথক করার জন্য অস্ত্রোপচার এখন সম্ভব হচ্ছে। ১৯৫৫ সালে, শিকাগোর মার্সি হাসপাতালে নিউরোসার্জন ড. হ্যারল্ড ভোরিস প্রথম সফলভাবে এই ধরনের অস্ত্রোপচার করেন।
বিশ্বজুড়ে এমন অনেক বিরল ঘটনা ঘটেছে যেখানে চিকিৎসকেরা এই চ্যালেঞ্জিং কাজটি করেছেন।
উদাহরণস্বরূপ, জার্মানির লিমগো শহরে ২০০৩ সালে জন্ম নেওয়া লিয়া এবং তাবিয়া ব্লক নামের যমজদের কথা বলা যায়। তারা মাথার দিক থেকে জোড়া লাগানো ছিল। ২০০৪ সালে তাদের আলাদা করার জন্য অস্ত্রোপচার করা হলেও, তাবিয়া নামের শিশুটি অস্ত্রোপচারের পর মারা যায়।
আবার, ২০০৯ সালে ফিলিপাইনে জন্ম নেওয়া অ্যাঞ্জেলিকা এবং অ্যাঞ্জেলিনা সাবুকো নামের যমজদের কথা ভাবুন। তারা বুক ও পেটের দিক থেকে জোড়া লাগানো ছিল। দীর্ঘ ১০ ঘণ্টার অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে তাদের সফলভাবে আলাদা করা সম্ভব হয়েছিল।
এই ধরনের অস্ত্রোপচার অত্যন্ত জটিল এবং ঝুঁকিপূর্ণ। অনেক সময়, অস্ত্রোপচারের সময় একটি শিশুর জীবনহানি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
উদাহরণস্বরূপ, ব্রাজিলের বাহিয়াতে জন্ম নেওয়া আর্থার ও হেইটর রোচা ব্র্যান্ডাও নামের যমজদের কথা বলা যায়। তারা কোমরের কাছে জোড়া লাগানো অবস্থায় ছিল এবং তাদের তিনটি পা ছিল। ২০১৫ সালে, ১৫ ঘণ্টার অস্ত্রোপচারের পর তাদের আলাদা করা হয়, কিন্তু অস্ত্রোপচারের তিন দিন পর আর্থারের হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয়।
চিকিৎসা বিজ্ঞান প্রতিনিয়ত উন্নত হচ্ছে, এবং ভবিষ্যতে এই ধরনের অস্ত্রোপচার আরও নিরাপদ ও সফল হবে বলে আশা করা যায়। এই বিরল ঘটনাগুলো চিকিৎসা বিজ্ঞানীদের জন্য এক বিশাল চ্যালেঞ্জ, যা তাঁরা সাফল্যের সঙ্গে মোকাবেলা করার চেষ্টা করছেন।
তথ্য সূত্র: সিএনএন