বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে প্রভাব: বাড়ছে রক্ষণশীলদের দৌরাত্ম্য!

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে উচ্চশিক্ষা ব্যবস্থাকে নতুন রূপ দিতে রক্ষণশীলদের প্রচেষ্টা ক্রমশ বাড়ছে। হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরেও বিভিন্ন রাজ্যে এই পরিবর্তনের ঢেউ লেগেছে, যেখানে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে তাদের প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা চলছে।

ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনের হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে নেওয়া পদক্ষেপ এর একটি উল্লেখযোগ্য উদাহরণ। কিন্তু দেশের বিভিন্ন রাজ্যে, বিশেষ করে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতেও একই ধরনের পরিবর্তনের জন্য চাপ সৃষ্টি করা হচ্ছে।

যুক্তরাষ্ট্রের অনেক রক্ষণশীল মনে করেন, কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয়গুলো তাদের মূল লক্ষ্য থেকে দূরে সরে গেছে। তারা মনে করেন, শিক্ষাব্যবস্থা বামপন্থীদের দ্বারা প্রভাবিত এবং শিক্ষার্থীদের উপর ঋণের বোঝা বাড়ছে।

এর ফলস্বরূপ, তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন, পাঠ্যক্রম এবং শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে নিজেদের প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করছেন। এর মূল উদ্দেশ্য হলো, শিক্ষাব্যবস্থায় রক্ষণশীল চিন্তাভাবনার প্রসার ঘটানো।

ইন্ডিয়ানা অঙ্গরাজ্যে, গভর্নর মাইক ব্রাউন বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য পরিবর্তন করে নতুনদের নিয়োগ দিয়েছেন, যাদের রক্ষণশীল দৃষ্টিভঙ্গি রয়েছে। তারা চান, বিশ্ববিদ্যালয়গুলো যেন সঠিক পথে ফিরে আসে।

ফ্লোরিডায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের বোর্ড সান্টা ওনোর মতো খ্যাতি সম্পন্ন শিক্ষাবিদকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রেসিডেন্ট পদ থেকে সরিয়ে দেয়, কারণ তিনি ডাইভার্সিটি, ইক্যুইটি এবং ইনক্লুশন (DEI) প্রোগ্রামগুলোর প্রতি সমর্থন জানিয়েছিলেন। এই পদক্ষেপের মাধ্যমে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে রক্ষণশীল আদর্শ প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করা হচ্ছে।

নিউ কলেজের ঘটনাও এক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য। এখানকার গভর্নিং বোর্ডে রিপাবলিকান গভর্নর রন ডিসান্তিসের নিয়োগের পর অনেক শিক্ষক চাকরি ছেড়েছেন। তারা মনে করেন, তাদের ক্যাম্পাসকেও নতুন করে সংজ্ঞায়িত করা হচ্ছে।

ওহাইও রাজ্যে, নতুন একটি আইনে পাবলিক কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে DEI প্রোগ্রাম নিষিদ্ধ করা হয়েছে এবং শিক্ষকদের কিছু অধিকার ও সুযোগ-সুবিধা কমানো হয়েছে।

এই পরিবর্তনের ফলে শিক্ষাবিদ এবং শিক্ষার্থীরা উদ্বিগ্ন। তাদের আশঙ্কা, এর মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাধীনতা খর্ব হবে এবং রাজনৈতিক প্রভাব বাড়বে।

টেক্সাসে, গভর্নর গ্রেগ অ্যাবট দুটি বিলে স্বাক্ষর করেছেন, যার মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ প্রদর্শনে নতুন সীমা আরোপ করা হয়েছে এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ্যক্রম নিয়ন্ত্রণে গভর্নরের ক্ষমতা বাড়ানো হয়েছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই ধরনের পদক্ষেপ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। তারা মনে করেন, এর ফলে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে ভীতি তৈরি হবে এবং মুক্ত চিন্তাভাবনার পরিসর সংকুচিত হবে।

বর্তমানে, উচ্চশিক্ষা ব্যবস্থায় পরিবর্তন আনার এই প্রবণতা যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন রাজ্যে দেখা যাচ্ছে। এর ফলে একাডেমিক স্বাধীনতা এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বায়ত্তশাসনের ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে।

তথ্য সূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *