ভোক্তাদের মনে স্বস্তি! নভেম্বরের পর প্রথমবার বাড়ল আস্থা

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ভোক্তাদের আস্থা নভেম্বর মাসের পর প্রথমবারের মতো বেড়েছে। বাণিজ্য আলোচনার ইতিবাচক ফলাফলের কারণে এই উন্নতি হয়েছে, যা বিশ্ব অর্থনীতির জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ ইঙ্গিত বহন করে।

সম্প্রতি প্রকাশিত এক জরিপে দেখা গেছে, কনফারেন্স বোর্ড-এর তথ্য অনুযায়ী, চলতি মাসে ভোক্তাদের আস্থা সূচক ১২.৩ পয়েন্ট বেড়ে ৯৮-এ দাঁড়িয়েছে। এর আগে, গত নভেম্বরে এই সূচক বেড়েছিল, এবং ২০২১ সালের মার্চ মাসের পর এটিই সবচেয়ে বড় উল্লম্ফন।

অর্থনীতিবিদদের ধারণা ছিল সূচকটি ৮৮-এর কাছাকাছি থাকবে, তবে তা ছাড়িয়ে যাওয়ায় অনেকেই বিষয়টিকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বাণিজ্য নীতি, বিশেষ করে বাণিজ্য যুদ্ধ এবং শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্তের কারণে বিগত মাসগুলোতে মানুষের অর্থনৈতিক মনোভাব কিছুটা দুর্বল হয়ে পড়েছিল। এমনকি, কোভিড-১৯ মহামারীর শুরুর দিকের পর গত মাসেই ভোক্তাদের আস্থা সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমে এসেছিল।

তবে, অন্যান্য দেশগুলোর সঙ্গে বাণিজ্য আলোচনায় অগ্রগতি হওয়ায় আমেরিকানদের মধ্যে নতুন করে আশার সঞ্চার হয়েছে। বিশেষ করে চীন ও যুক্তরাজ্যের সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে আলোচনা ইতিবাচক দিকে মোড় নেওয়ায় এই উন্নতি হয়েছে।

কনফারেন্স বোর্ডের একজন অর্থনীতিবিদ স্টেফানি গুইচার্ডের মতে, “১২ই মের আগে থেকেই এই উন্নতির আভাস পাওয়া যাচ্ছিল, তবে যুক্তরাষ্ট্র-চীনের মধ্যে বাণিজ্য চুক্তির পর এটি আরও গতি পেয়েছে। মূলত, ভোক্তাদের প্রত্যাশা বৃদ্ধি পাওয়ার কারণেই এই উন্নতি হয়েছে।”

যদিও বাণিজ্য আলোচনা এখনো সম্পূর্ণভাবে শেষ হয়নি এবং শুল্কের বিষয়টি এখনো অনিশ্চিত, তারপরও এই উন্নতির ফলে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব পড়ার সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতির দুই-তৃতীয়াংশই ভোক্তা ব্যয়ের ওপর নির্ভরশীল, তাই এই ধরনের অগ্রগতি খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

নৌবাহিনী ফেডারেল ক্রেডিট ইউনিয়নের কর্পোরেট অর্থনীতিবিদ রবার্ট ফ্রিক বলেন, “শুল্ক কমানোর কারণে আমেরিকানরা খুশি হতে পারে, তবে খুব শীঘ্রই যখন পণ্যের দাম বাড়তে শুরু করবে, তখন এটি একটি কঠিন বাস্তবতার মুখোমুখি করবে।”

যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য যুদ্ধ এখনো চলমান, তবে কিছু দেশ সহযোগিতা করতে এবং বাণিজ্য চুক্তি করতে আগ্রহ দেখাচ্ছে। যুক্তরাজ্য ৮ই মে একটি কাঠামো চুক্তি ঘোষণা করেছে, যেখানে যুক্তরাজ্যের গাড়ি আমদানির ওপর শুল্ক কমানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে। এর কয়েক দিন পর, ১২ই মে জেনেভায় চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে শুল্ক কমানোর বিষয়ে একটি চুক্তি হয়, যা দু’দেশের মধ্যে চলমান বাণিজ্য যুদ্ধের অবসানের একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ ছিল।

তবে, চীন যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য চুক্তির পথে এখনো অনেক বাধা রয়েছে। চীনের বাণিজ্য মন্ত্রণালয় যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে জেনেভা আলোচনাকে দুর্বল করার অভিযোগ করেছে। অন্যদিকে, ইউরোপীয় ইউনিয়নও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে দ্রুত বাণিজ্য আলোচনা করতে রাজি হয়েছে। এর ফলে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ইউরোপীয় ইউনিয়নের পণ্যের ওপর শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্ত পিছিয়ে দিয়েছেন।

ভোক্তাদের আস্থা বাড়লেও, বাণিজ্য যুদ্ধ এখনো শেষ হয়নি। তাই, ওয়াল স্ট্রিট এবং ফেডারেল রিজার্ভ-এর কর্মকর্তারা ভোক্তাদের চাহিদা এবং ব্যয়ের ওপর নজর রাখছেন। এপ্রিল মাসের ভোক্তা ব্যয় এবং মূল্যস্ফীতির তথ্য খুব শীঘ্রই প্রকাশ করা হবে, যা বাজারের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে।

তথ্য সূত্র: সিএনএন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *