কোপেনহাগেন বিমানবন্দরে ড্রোন হামলা: মুহূর্তে বন্ধ বিমান পরিষেবা!

কোপেনহেগেন বিমানবন্দরে ড্রোন ওড়ার ঘটনা, তদন্তে ডেনমার্ক পুলিশ।

ডেনমার্কের কোপেনহেগেন বিমানবন্দরে সোমবার রাতে বেশ কয়েক ঘণ্টা ধরে অজ্ঞাতপরিচয় কিছু ড্রোনের ওড়াউড়ি দেখা যায়। এর ফলে বিমানবন্দরের আকাশপথ বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয় কর্তৃপক্ষ।

মঙ্গলবার পুলিশ জানিয়েছে, এই ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, দক্ষ কোনো ড্রোন চালক সম্ভবত স্ক্যান্ডিনেভিয়ার বৃহত্তম বিমানবন্দরটিতে তার কারিগরি দক্ষতা দেখাচ্ছিল।

কোপেনহেগেন পুলিশের সিনিয়র ইন্সপেক্টর জেস জেসপারসেন এক সংবাদ সম্মেলনে জানান, বিমানবন্দরের আশেপাশে যাত্রী ও বিমানের উপস্থিতি এবং জ্বালানি ডিপোর মতো গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনার কারণে ড্রোনগুলো ভূপাতিত করার ঝুঁকি নেওয়া হয়নি।

তিনি ড্রোন চালককে ‘দক্ষ ব্যক্তি’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন এবং ধারণা করছেন, সম্ভবত নিজের দক্ষতা প্রদর্শনের জন্যই এই কাজ করা হয়েছে। বেশ কয়েক ঘণ্টা পর ড্রোনগুলো অদৃশ্য হয়ে যায়।

পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ড্রোনগুলো ওড়ানোর মাধ্যমে কারো ক্ষতি করার কোনো উদ্দেশ্য ছিল বলে মনে হয় না। কারণ, ড্রোনগুলোর আলো অনবরত জ্বলছিল এবং বিভিন্ন ধরনের প্যাটার্নে সেগুলো আকাশে উড়ছিল।

জেসপারসেন আরও জানান, “এগুলো দেখে মনে হচ্ছে, কেউ আক্রমণ করার উদ্দেশ্যে আসেনি, বরং নিজের দক্ষতা প্রদর্শন করতে এবং সম্ভবত অনুশীলন করতে এসেছিল।”

তবে, কর্মকর্তারা এখনো এই সম্ভাবনা উড়িয়ে দিচ্ছেন না যে, রাশিয়ার কোনো ‘হাইব্রিড অ্যাটাক’-এর অংশ হিসেবেও ড্রোনগুলো ব্যবহার করা হতে পারে।

কারণ, ড্রোনগুলো বিমানবন্দরের কাছাকাছি আসার আগে অনেক কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়েছে। তদন্তকারীরা জানার চেষ্টা করছেন, ড্রোনগুলো আকাশপথে এসেছিল, নাকি অন্য কোনো উপায়ে—যেমন জলপথে—এসেছিল।

ডেনিশ প্রধানমন্ত্রী মেটে ফ্রেডেরিকসেন এই ঘটনাকে ‘ডেনমার্কের গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামোর ওপর এখন পর্যন্ত সবচেয়ে গুরুতর হামলা’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন।

ড্রোনকাণ্ডের জেরে মঙ্গলবার সকালে বিমানবন্দরের স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যাহত হয়। কিছু ফ্লাইট বাতিল করা হয় এবং অনেক ফ্লাইট দেরিতে ছাড়ে।

বিমানবন্দরের ওয়েবসাইটে জানানো হয়েছে, যাত্রীদের তাদের ফ্লাইটের সর্বশেষ তথ্যের জন্য সংশ্লিষ্ট বিমান সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ করতে পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।

একই রাতে, নরওয়ের অসলো বিমানবন্দরেও অনুরূপ একটি ঘটনার কারণে সেখানকার সব ফ্লাইটকে একটি রানওয়ে ব্যবহার করতে হয়। তবে পরে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসে।

অসলোর ঘটনার সঙ্গে কোপেনহেগেন বিমানবন্দরের ঘটনার কোনো যোগসূত্র আছে কিনা, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

সাম্প্রতিক সময়ে রাশিয়ার নাশকতামূলক কার্যকলাপ এবং ন্যাটো-র আকাশসীমায় ড্রোন ও যুদ্ধ বিমানের অনুপ্রবেশ বেড়ে যাওয়ায় উত্তর ইউরোপে নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ বেড়েছে।

২০২৩ সালে লন্ডনের গ্যাটউইক বিমানবন্দরেও ড্রোন দেখা যাওয়ার কারণে প্রায় এক ঘণ্টা রানওয়ে বন্ধ ছিল।

২০১৮ সালের ডিসেম্বরেও একই কারণে কয়েক দিন ধরে গ্যাটউইক বিমানবন্দরের কার্যক্রম ব্যাহত হয়েছিল, যার ফলে এক লাখ ৪০ হাজারের বেশি যাত্রী ভোগান্তিতে পড়েছিলেন।

তথ্য সূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *