কোপেনহেগেন: পরিবেশ-বান্ধব পর্যটকদের জন্য পুরস্কারের ঘোষণা।
ডেনমার্কের রাজধানী কোপেনহেগেন, যারা পরিবেশ সচেতন হয়ে ভ্রমণ করেন, তাদের জন্য এক দারুণ খবর নিয়ে এসেছে। শহরটি ‘কোপেনপে’ নামে একটি নতুন উদ্যোগ চালু করেছে, যেখানে পর্যটকদের সবুজ পদক্ষেপের জন্য বিভিন্ন পুরস্কার দেওয়া হবে।
এর মূল লক্ষ্য হলো, পর্যটকদের মধ্যে পরিবেশ-বান্ধব পর্যটনের ধারণা তৈরি করা এবং একইসঙ্গে কোপেনহেগেনকে আরও টেকসই করে তোলা।
এই প্রকল্পের আওতায়, পর্যটকদের সাইকেল চালানো, হেঁটে ঘোরাঘুরি করা, আবর্জনা পরিষ্কার করা অথবা স্থানীয় কোনো উদ্যোগে স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ করার মতো সুযোগ রয়েছে। এই কাজগুলোর বিনিময়ে তারা বিনামূল্যে জাদুঘরে প্রবেশ, কফি অথবা কায়াক রাইডের মতো আকর্ষণীয় পুরস্কার পেতে পারেন।
উদাহরণস্বরূপ, কেউ যদি শহরের খাল থেকে আবর্জনা সংগ্রহ করেন, তাহলে তিনি বিনামূল্যে কায়াক রাইডের সুযোগ পেতে পারেন।
কোপেনপে মূলত কোপেনহেগেনের পর্যটন সংস্থা ‘ওয়ান্ডারফুল কোপেনহেগেন’-এর একটি উদ্যোগ। গত বছর গ্রীষ্মকালে, চার সপ্তাহের জন্য এই প্রকল্পের পরীক্ষামূলক সংস্করণ চালু করা হয়েছিল।
পর্যটকদের কাছ থেকে ভালো সাড়া পাওয়ার কারণে, কর্তৃপক্ষ এই প্রোগ্রামটি আরও বড় পরিসরে শুরু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
এই প্রকল্পের সঙ্গে শহরের বিভিন্ন সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান ও স্থানীয় আকর্ষণ যুক্ত রয়েছে। ন্যাশনাল মিউজিয়াম, ন্যাশনাল গ্যালারি অফ ডেনমার্ক, গোবোট, কপেনহিল, দ্য আর্বান গার্ডেন এবং ডনকি রিপাবলিকের মতো প্রায় নব্বইটি সহযোগী সংস্থা এই প্রকল্পের সঙ্গে কাজ করছে।
এর ফলে, পর্যটকদের জন্য কোপেনহেগেন ভ্রমণের অভিজ্ঞতা যেমন আরও আকর্ষণীয় হবে, তেমনই পরিবেশের সুরক্ষায় তারা সরাসরি অবদান রাখতে পারবে।
কোপেনপে-এর একটি বড় দিক হলো, এটি ডেনিশ সংস্কৃতির সঙ্গে পরিবেশ সুরক্ষার একটি মেলবন্ধন তৈরি করেছে। ডেনিশ সংস্কৃতিতে টেকসই জীবনযাত্রা এবং প্রকৃতির প্রতি শ্রদ্ধাবোধ একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
কোপেনহেগেন শহরটিও বিশ্বের অন্যতম পরিবেশ-বান্ধব শহর হিসেবে পরিচিত। শহরটি কার্বন-নিরপেক্ষ হওয়ার লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছে এবং এই প্রকল্পের মাধ্যমে সেই লক্ষ্য আরও একধাপ এগিয়ে যাবে।
পর্যটকদের মধ্যে সাইকেল ব্যবহারের প্রবণতা বাড়াতেও এই প্রোগ্রামটি সাহায্য করেছে। গত বছর, কোপেনপে-এর কারণে সাইকেল ভাড়ার সংখ্যা ২৯ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছিল।
এছাড়া, যারা ট্রেনে করে কোপেনহেগেন ভ্রমণ করেন, তাদের জন্যেও বিশেষ সুবিধা রয়েছে। তারা ডয়েচে বাহন বা স্ন্যালটোজেট-এর মতো রেল পরিষেবা ব্যবহার করলে ডনকি রিপাবলিক থেকে ৪৫ মিনিটের জন্য বিনামূল্যে সাইকেল ভাড়ার সুযোগ পান।
এই ধরনের উদ্যোগ শুধু কোপেনহেগেনের জন্যই নয়, বরং সারা বিশ্বের পর্যটন কেন্দ্রগুলোর জন্য একটি উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।
হাওয়াই দ্বীপপুঞ্জে ‘মালামা হাওয়াই’ নামে এমন একটি প্রকল্প চালু আছে, যেখানে পর্যটকদের স্থানীয় সম্প্রদায়ের সঙ্গে মিশে কাজ করার সুযোগ দেওয়া হয়। এই ধরনের পদক্ষেপগুলো পর্যটকদের মধ্যে পরিবেশ সচেতনতা বাড়ায় এবং তাদের ভ্রমণের অভিজ্ঞতাকে আরও অর্থবহ করে তোলে।
কোপেনহেগেন কর্তৃপক্ষের মতে, এই ধরনের উদ্যোগ পর্যটকদের মধ্যে জনপ্রিয় হচ্ছে কারণ এটি সহজ, মজাদার এবং স্থানীয় সংস্কৃতির সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ। তারা বিশ্বাস করেন, এই প্রকল্পের মাধ্যমে গণ-পর্যটনের ধারণা পরিবর্তন করা সম্ভব, যা পরিবেশের জন্য আরও ভালো ফল বয়ে আনবে।
তথ্য সূত্র: ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক