পৃথিবীর বুকে ভয়ঙ্কর বিপদ! ৮৪% প্রবালের মারাত্মক ক্ষতি!

বিশ্বের ৮৪ শতাংশ প্রবাল প্রাচীর এখন মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, যা জলবায়ু পরিবর্তনের এক ভয়াবহ চিত্র। আন্তর্জাতিক কোরাল রিফ ইনিশিয়েটিভের (International Coral Reef Initiative) বুধবারের ঘোষণা অনুযায়ী, এটি রেকর্ড করা ইতিহাসে সবচেয়ে বড় ঘটনা।

উষ্ণতা বৃদ্ধির কারণে সমুদ্রের এই প্রবালগুলো তাদের স্বাভাবিক রং হারাচ্ছে এবং সাদা হয়ে যাচ্ছে, যা তাদের মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিচ্ছে।

এই ঘটনা ১৯৯৮ সাল থেকে শুরু হওয়া চতুর্থ বৈশ্বিক প্রবাল বিলুপ্তি। বিজ্ঞানীরা বলছেন, সমুদ্রের তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাওয়াই এর প্রধান কারণ।

গত বছর ছিল পৃথিবীর ইতিহাসে সবচেয়ে উষ্ণ বছর, এবং এর বড় একটি অংশ সমুদ্রকে আরও উত্তপ্ত করেছে। মেরু অঞ্চলের বাইরের সমুদ্রের গড় বার্ষিক তাপমাত্রা ছিল ২০.৮৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস, যা অতীতের সব রেকর্ড ভেঙে দিয়েছে।

প্রবাল হলো সমুদ্রের বাস্তুতন্ত্রের গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এগুলোকে “সমুদ্রের রেইনফরেস্ট” বলা হয়, কারণ তারা প্রায় ২৫ শতাংশ সামুদ্রিক প্রজাতির আবাসস্থল।

এই প্রবালগুলো মাছ ধরা, পর্যটন এবং উপকূলকে ক্ষয় ও ঝড়ের হাত থেকে বাঁচাতে সাহায্য করে।

প্রবালের উজ্জ্বল রং আসে তাদের ভেতরের শৈবাল থেকে, যা তাদের খাদ্য সরবরাহ করে। অতিরিক্ত উষ্ণতা এই শৈবালকে বিষাক্ত করে তোলে, ফলে প্রবাল তাদের শরীর থেকে শৈবালকে বের করে দেয়।

এর ফলে প্রবালের কঙ্কাল সাদা হয়ে যায়, এবং তারা দুর্বল হয়ে পড়ে, যা তাদের মৃত্যুর ঝুঁকি বাড়ায়।

এই ঘটনার ভয়াবহতা এতটাই বেশি যে, ন্যাশনাল ওশেনিক অ্যান্ড অ্যাটমোস্ফিয়ারিক অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (National Oceanic and Atmospheric Administration – NOAA) তাদের সতর্কতা স্কেলে প্রবালের মৃত্যুর ঝুঁকি যুক্ত করতে বাধ্য হয়েছে।

ক্ষতিগ্রস্ত প্রবাল পুনরুদ্ধার এবং সংরক্ষণের জন্য বিভিন্ন প্রচেষ্টা চলছে। নেদারল্যান্ডসের একটি গবেষণাগার প্রবালের কিছু অংশ নিয়ে কাজ করছে, যা ভবিষ্যতে ক্ষতিগ্রস্ত প্রবাল প্রাচীর পুনরুদ্ধারে কাজে লাগতে পারে।

ফ্লোরিডার মতো কিছু স্থানে উচ্চ তাপমাত্রা থেকে ক্ষতিগ্রস্ত প্রবালকে বাঁচিয়ে তাদের সুস্থ করে তোলার চেষ্টা করা হচ্ছে।

তবে বিজ্ঞানীরা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের মূল কারণ, অর্থাৎ কার্বন ডাই অক্সাইড ও মিথেনের মতো গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসরণ কমানো অপরিহার্য। জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার কমালে তবেই এই সমস্যার সমাধান করা সম্ভব।

বিজ্ঞানীরা মনে করেন, এখনই ব্যবস্থা না নিলে প্রবাল প্রাচীর বিলুপ্তির দিকে চলে যাবে।

এই ঘটনার প্রভাব শুধু সমুদ্রের জীববৈচিত্র্যের ওপরই পড়বে না, বরং তা আমাদের খাদ্য নিরাপত্তা এবং উপকূলীয় অঞ্চলে বসবাসকারী মানুষের জীবনযাত্রাকেও প্রভাবিত করবে।

যেহেতু বাংলাদেশ একটি উপকূলীয় দেশ, তাই জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি এবং ঘূর্ণিঝড়ের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগের ঝুঁকি আমাদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

তাই, এই পরিস্থিতি মোকাবিলায় দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া দরকার।

তথ্য সূত্র: সিএনএন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *