আকাশে অমাবস্যার পর পূর্ণিমার আলো ঝলমলে রূপ অনেকেরই পরিচিত।
কিন্তু এই পূর্ণিমারও যে বিশেষ কিছু নাম আছে, তা কি জানেন?
তেমনই একটি নাম হলো ‘কর্ನ್ মুন’ বা ‘শস্যপূর্ণিমা’। প্রতি বছর সেপ্টেম্বর মাসের শুরুতে দৃশ্যমান পূর্ণিমাকে এই নামে অভিহিত করা হয়।
আসলে, এই নামকরণের পেছনে রয়েছে প্রকৃতির সঙ্গে মানুষের নিবিড় সম্পর্ক।
বিশেষ করে উত্তর গোলার্ধের দেশগুলোতে শস্য বা ফসলের মরসুমের সঙ্গে চাঁদের এই বিশেষ দশার একটা যোগসূত্র রয়েছে।
যখন ভুট্টা সহ অন্যান্য গ্রীষ্মকালীন শস্য ভালোভাবে বেড়ে ওঠে এবং কাটার উপযুক্ত হয়, তখনই আকাশে দেখা যায় এই ‘কর্న్ মুন’। প্রকৃতির এই নিয়ম মেনেই আদিবাসী আমেরিকানরা এই চাঁদের নামকরণ করেন, যা তাদের জীবনযাত্রার অবিচ্ছেদ্য অংশ ছিল।
ঐতিহ্যগতভাবে, এই সময়ে উত্তর গোলার্ধে ফসল তোলার উৎসবের আয়োজন করা হয়।
কৃষকরা তাদের ফলানো শস্যের ভালো ফলনের জন্য কৃতজ্ঞতা জানায়।
পূর্ণিমার আলোয় রাতের বেলা কাজ করাও তাদের জন্য সহজ হয়, যা ফসল কাটার প্রক্রিয়াকে আরও দ্রুত করে তোলে।
তবে, সব সময় যে সেপ্টেম্বর মাসের পূর্ণিমাকে ‘কর্ನ್ মুন’ বলা হয়, তা কিন্তু নয়।
যদি এই পূর্ণিমা জলবিষুবের (autumnal equinox) কাছাকাছি সময়ে হয়, তাহলে এটিকে ‘হার্ভেস্ট মুন’ বা ‘ফসলপূর্ণিমা’ নামেও ডাকা হয়।
এই সময়টাতে শীতকালের আগমনী বার্তা পাওয়া যায়, যা শীতের প্রস্তুতি নেওয়ারও একটা ইঙ্গিত দেয়।
চীনের সংস্কৃতিতেও এই পূর্ণিমার একটি বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে।
এই সময়ে তারা ‘মুনকেক’ উৎসব পালন করে, যেখানে বন্ধু-বান্ধব ও পরিবারের সঙ্গে মিলিত হয়ে তারা চাঁদকে উৎসর্গীকৃত কেক খায় এবং চা পান করে।
যদিও ভুট্টা আমাদের দেশে প্রধান খাদ্যশস্য নয়, তবুও শস্যপূর্ণিমার ধারণাটি বাংলাদেশের মানুষের কাছেও খুব অপরিচিত নয়।
কারণ, আমাদের দেশেও ঋতু পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে কৃষিকাজের একটি সম্পর্ক রয়েছে।
বিশেষ করে, বর্ষার শেষে যখন শরৎকালের আগমন হয়, তখন আমন ধানের সোনালী রূপ আমাদের প্রকৃতিকে আরও সুন্দর করে তোলে।
নবান্ন উৎসবের মতো বিভিন্ন অনুষ্ঠানে কৃষকদের ফসলের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানানোর একটি ঐতিহ্য আমাদের মাঝেও বিদ্যমান।
তাহলে, এইবার যখন আকাশে পূর্ণিমার আলো দেখবেন, তখন মনে রাখবেন – এটি শুধু আলো ঝলমলে একটি রাত নয়, বরং প্রকৃতির এক বিশেষ মুহূর্ত, যা সময়ের পরিবর্তনের সঙ্গে আমাদের জীবনযাত্রাকে আরও গভীরভাবে যুক্ত করে।
তথ্য সূত্র: Travel and Leisure