বাসযাত্রায় প্রেম, কাজ আর সংসার! ভাইরাল দম্পতির জীবনযাত্রা!

অসাধারণ জীবনযাত্রা: স্কুল বাসে দেশ ঘোরা আর ব্যবসার সফল রুপকথা।

আজ আমরা এমন এক যুগলের গল্প শোনাবো, যারা গত পাঁচ বছর ধরে প্রচলিত জীবন থেকে দূরে, আমেরিকার ৪৭টি অঙ্গরাজ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছেন।

তাদের ঘর একটি রূপান্তরিত স্কুল বাস, আর জীবন ধারণের উপায়? পুরোটাই ইন্টারনেট নির্ভর, অর্থাৎ, রিমোট ওয়ার্কিংয়ের মাধ্যমে উপার্জিত অর্থ।

শেই এডওয়ার্ডস (২৯) ও জেন মারফি (৩৫) নামের এই জুটি আমাদের ডিজিটাল দুনিয়ার নতুন দিগন্তের এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।

ফিলাডেলফিয়ার বাসিন্দা শেই, পাঁচ বছর আগে তার চাকরি হারানোর পরেই এই পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত নেন।

সঙ্গী ছিলেন জেন।

প্রথমে তাদের পরিকল্পনা ছিল, গাড়ি বিক্রি করে সেই অর্থে একটি ভ্যান কিনে দেশ ভ্রমণে বের হবেন এবং বিভিন্ন ক্যাম্পে কাজ করে কিছু অর্থ উপার্জন করবেন।

কিন্তু সেই পরিকল্পনা সফল হয়নি।

এরপর তারা ভিন্ন পথে হাঁটা শুরু করেন।

শেইয়ের মতে, “যদি আপনি একজনের সাথে ৪০ বর্গফুটের মতো জায়গায় থাকতে পারেন, তাহলে সবকিছুই সম্ভব।”

মূলত, ভার্চুয়াল অ্যাসিস্ট্যান্টের কাজ খুঁজে বের করার মাধ্যমে তাদের এই নতুন যাত্রা শুরু হয়।

বিভিন্ন ফেসবুক গ্রুপের মাধ্যমে তিনি রিমোট কাজের সন্ধান পান।

শুরুতে একটি রিয়েল এস্টেট কোম্পানি, একজন ভ্রমণ বিষয়ক প্রভাবশালী ব্যক্তি এবং একটি পোশাকের লাইনের হয়ে কাজ করেন।

একই সাথে তারা তাদের নিজস্ব সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্ট পরিচালনা করা শুরু করেন এবং বিভিন্ন ব্র্যান্ডের সাথে অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে কাজ করতে থাকেন।

দুই বছর অন্যদের হয়ে কাজ করার পর, শেই উপলব্ধি করেন যে, তিনি তার অর্জিত দক্ষতা কাজে লাগিয়ে নিজের ব্র্যান্ড তৈরি করতে পারেন।

সেই ভাবনা থেকেই @geneandshay নামের তাদের সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্টটি একটি ব্যবসায়িক রূপ নেয়।

বর্তমানে তারা ৪০০টির বেশি কোম্পানির সাথে যুক্ত হয়ে কাজ করছেন।

মূলত, যারা রাস্তায় বসবাস করে তাদের জন্য প্রয়োজনীয় পণ্য সরবরাহকারী ব্র্যান্ডগুলোর সঙ্গেই তাদের বেশি সহযোগিতা।

ভ্যান থেকে স্কুল বাসে তাদের বাসস্থান পরিবর্তনের সিদ্ধান্তটিও ছিল বেশ গুরুত্বপূর্ণ।

শেই জানান, “আলাদা একটি ডেস্কে বসে কাজ করার ব্যবস্থা করাটা জরুরি ছিল।”

আগে ভ্যানে বিছানায় বসে মিটিং করতেন, কিন্তু সেটা তার ভালো লাগত না।

তাই তারা তাদের সোফাকে এমনভাবে তৈরি করেছেন, যা ডাইনিং এরিয়া হিসেবে ব্যবহার করা যায় এবং সেখানে একটি ডেস্ক সেট আপ করা সম্ভব।

ইন্টারনেট সংযোগের জন্য তারা স্টারলিঙ্ক ব্যবহার করেন, যা তাদের প্রায় যেকোনো জায়গা থেকেই অনলাইনে যুক্ত থাকতে সাহায্য করে।

তবে শেইয়ের অভিজ্ঞতা বেশ মজার।

তিনি জানান, “৯০ ডিগ্রি তাপমাত্রায় ওয়ালমার্টের পার্কিং লটে বসেও মিটিং করতে হয়েছে।”

তাদের জীবনযাত্রার পুরোটাই সৌরবিদ্যুৎ নির্ভর।

মেঘলা আবহাওয়ার কারণে পর্যাপ্ত বিদ্যুৎ না পেলে এসি বা ফ্যান চালানোও সম্ভব হয় না।

ভ্রমণ আর কাজের পাশাপাশি, এই দম্পতি এখন বিয়ের প্রস্তুতি নিচ্ছেন।

গত বছর তাদের বাগদান সম্পন্ন হয়েছে।

বিয়ের পোশাক নির্বাচন তাদের জন্য একটি চ্যালেঞ্জ ছিল, কারণ তাদের ঠিকানা সবসময় পরিবর্তন হতে থাকে।

শেই জানান, “আমার বিয়ের পোশাকের জন্য ডালাসে যেতে হয়েছে, এরপর সেটি পাঠানো হয় ক্যালিফোর্নিয়ার স্যাক্রামেন্টোতে।

সেখান থেকে পোশাকের মাপ পরিবর্তনের জন্য যেতে হবে ওরেগনের পোর্টল্যান্ডে।

সবকিছু আগে থেকে পরিকল্পনা করে রাখতে হচ্ছে।”

বর্তমানে তারা তাদের গোপন বিয়ের স্থান নির্বাচন করছেন, যা সেপ্টেম্বরে অনুষ্ঠিত হবে।

হানিমুনের জন্য তারা বাজা, ক্যালিফোর্নিয়াতে যাওয়ার পরিকল্পনা করছেন।

এরপর তারা আবার পূর্ব উপকূলে ফিরে আসবেন এবং একটি বাড়ি কিনবেন।

শেই বলেন, “আমরা পাঁচ বছর পর একটি স্থায়ী ঠিকানা চাই।”

তবে তারা তাদের যাযাবর জীবন পুরোপুরি ত্যাগ করতে রাজি নন।

তাদের পরিকল্পনা, যতদিন সম্ভব, ততদিন তারা তাদের স্কুল বাসটি সাথে রাখবেন।

এমনকি ভবিষ্যতে তাদের সন্তান হলে, তাদের নিয়েও এই বাসে ভ্রমণের পরিকল্পনা রয়েছে।

তাদের মতে, “প্রতিদিন নতুন একটি উঠোন পাওয়া, ঘুরে বেড়ানো – এর থেকে আনন্দের আর কিছু নেই।

এই স্বাধীনতা তাদের জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে গেছে।”

তথ্য সূত্র: পিপল

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *