মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একটি আদালত প্রাক্তন ট্রাম্প প্রশাসনের বিতর্কিত অভিবাসন নীতিমালার বিরুদ্ধে একটি রায় বহাল রেখেছে। আদালতের এই আদেশের ফলে, অভিবাসন কর্মকর্তারা এখন দক্ষিণ ক্যালিফোর্নিয়ায় নির্বিচারে গ্রেপ্তার ও তল্লাশি করতে পারবেন না।
এই অঞ্চলের বৃহৎ অভিবাসী জনগোষ্ঠীর উপর এর প্রভাব ছিল সুদূরপ্রসারী। জানা গেছে, এই অঞ্চলে বসবাসকারী অনেক মানুষকে তাদের চামড়ার রঙ এবং জাতিগত বৈশিষ্ট্যের কারণে লক্ষ্যবস্তু করা হচ্ছিল।
মামলাটি মূলত দায়ের করেছিলেন অভিবাসন অধিকার বিষয়ক কর্মীরা। তাদের অভিযোগ ছিল, ট্রাম্প প্রশাসন অবৈধ অভিবাসন বন্ধের নামে একটি পদ্ধতিগত কার্যক্রম পরিচালনা করছে, যেখানে বাদামী চামড়ার মানুষদের বিশেষভাবে টার্গেট করা হচ্ছে।
তাদের দাবি ছিল, এই ধরনের পদক্ষেপ আমেরিকার সংবিধানের পরিপন্থী।
আদালতে শুনানিতে বিচারক ফ্রিম্পং প্রমাণ হিসেবে দেখিয়েছেন, কর্তৃপক্ষের হাতে এমন অনেক প্রমাণ রয়েছে যা প্রমাণ করে অভিবাসন কর্মকর্তাদের কার্যক্রম সংবিধান লঙ্ঘন করছে।
আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী, কোনো ব্যক্তির জাতিগত পরিচয়, ভাষার ব্যবহার (যেমন, স্প্যানিশ বা ইংরেজি বলার ধরন), কোনো নির্দিষ্ট স্থানে উপস্থিতি (যেমন, গাড়ির গ্যারেজ বা কার ওয়াশ) অথবা পেশা—এগুলো কোনো ব্যক্তিকে সন্দেহভাজন হিসেবে আটকের একমাত্র কারণ হতে পারে না।
লস অ্যাঞ্জেলেস অঞ্চলের একজন বাসিন্দা ব্রায়ান গ্যাভিদিয়ার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পরেছিল, যেখানে দেখা যায়, তাকে ফেডারেল এজেন্টরা আটক করছে। গ্যাভিদিয়া চিৎকার করে বলছিলেন, “আমি এখানেই, আমেরিকায় জন্মেছি!”
আবেদনকারী আইনজীবীরা আদালতের কাছে অভিযোগ করে বলেন, কর্তৃপক্ষ যথেষ্ট সময় পায়নি মামলার প্রমাণ সংগ্রহ ও উপস্থাপনের জন্য। তারা আরও দাবি করেন, নিম্ন আদালতের নির্দেশটি ছিল খুব ব্যাপক এবং অভিবাসন অধিকার কর্মীরা সরকারের বিরুদ্ধে এমন কোনো নীতি প্রমাণের জন্য যথেষ্ট তথ্য উপস্থাপন করতে পারেননি, যেখানে সন্দেহভাজন ব্যক্তিদের আটকের ক্ষেত্রে কোনো যুক্তিসঙ্গত কারণ ছিল না।
আদালতের শুনানিতে বিচারকরা সরকারের আইনজীবীদের বিভিন্ন যুক্তির বিষয়ে প্রশ্ন তোলেন। বিচারকদের একজন, যিনি বাইডেন কর্তৃক নিযুক্ত হয়েছিলেন, তিনি বলেন, লস অ্যাঞ্জেলেসের মতো একটি অঞ্চলে, যেখানে প্রায় অর্ধেক জনসংখ্যা লাতিনো, সেখানে শুধু এই বৈশিষ্ট্যগুলোর ভিত্তিতে কাউকে চিহ্নিত করা হলে, তা কোনোভাবেই অবৈধ অভিবাসী এবং বৈধ অভিবাসীদের মধ্যে পার্থক্য করতে পারে না।
এই মামলার রায় অভিবাসন নীতি এবং মানবাধিকারের প্রতি গভীর মনোযোগ আকর্ষণ করেছে। এটি প্রমাণ করে যে, কোনো দেশের সরকার তার নাগরিকদের মৌলিক অধিকার খর্ব করতে পারে না এবং আইনের চোখে সবাই সমান।
তথ্য সূত্র: সিএনএন