কোভিড: ৫ বছর পরও কি ভোলেনি শোকের স্মৃতি?

শিরোনাম: কোভিড-১৯: শোক আর স্মৃতি, মহামারীর ক্ষত নিয়ে নতুন প্রামাণ্যচিত্র

কোভিড-১৯ অতিমারী বিশ্বজুড়ে কেড়ে নিয়েছে লক্ষ লক্ষ মানুষের জীবন। এই শোকের সময়ে, স্বজন হারানোর বেদনা আজও তাড়িয়ে ফেরে অনেককে।

সম্প্রতি বিবিসি-তে প্রচারিত একটি প্রামাণ্যচিত্র, “লাভ অ্যান্ড লস: দ্য প্যানডেমিক ৫ ইয়ার্স অন” (Love and Loss: The Pandemic 5 Years On) সেই শোকের গভীরতা এবং মহামারীর স্মৃতিগুলোকেই নতুন করে সামনে নিয়ে এসেছে। চলচ্চিত্রটি তৈরি করেছেন কেটি সেক্সটন, যিনি অতিমারীতে নিজের মা-কে হারিয়েছেন।

প্রামাণ্যচিত্রটি মূলত যুক্তরাজ্যে কোভিড-১৯ এর কারণে প্রিয়জন হারানো পরিবারগুলোর গল্প বলে। এতে উঠে এসেছে বিভিন্ন পেশার মানুষের কথা, যাদের মধ্যে ছিলেন নার্স, স্বাস্থ্যকর্মী, বাস চালক থেকে শুরু করে বৃদ্ধ ও তরুণ প্রজন্মের মানুষজন। এই ছবিতে তাদের শোক, হারানোর যন্ত্রণা এবং সেই সময়ের স্মৃতিগুলো তুলে ধরা হয়েছে। ছবিতে স্বজন হারানো মানুষগুলো তাদের প্রিয়জনদের সম্পর্কে কথা বলেছেন, তাদের ভালো লাগা, শখ এবং ব্যক্তিগত বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করেছেন।

সেক্সটনের এই কাজে, কোভিড-১৯ এর ভয়াবহতা এবং এর ফলে মানুষের জীবনে নেমে আসা কষ্টের চিত্রগুলো স্পষ্টভাবে ফুটে উঠেছে। হাসপাতালে জায়গা না পাওয়া, প্রিয়জনের শেষকৃত্যে অংশ নিতে না পারা, এমনকি মৃত্যুর সময় কাছে থাকতে না পারার মতো ঘটনাগুলো আজও অনেক পরিবারকে কষ্ট দেয়। অনেকে তাদের স্বজনদের হারানোর জন্য নিজেদের দায়ী মনে করেন, যা তাদের মানসিক শান্তির পথে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে।

এই প্রামাণ্যচিত্রে, ২১ বছর বয়সী ক্লোয়ের বাবা-মাকে প্যারামেডিকরা জানিয়েছিলেন যে, তরুণদের মধ্যে কোভিড-১৯ এর কারণে মৃত্যুর সম্ভাবনা খুবই কম। কিন্তু, সেদিনই ক্লোয়ের মৃত্যু হয়। তেমনিভাবে, ফেমি নামের এক ব্যক্তি, যিনি কোভিড-১৯ আক্রান্ত হওয়ার পর চিকিৎসকের পরামর্শে বাড়িতে ছিলেন, কিন্তু শেষ পর্যন্ত তিনি মারা যান। এই ধরনের ঘটনাগুলো সেই সময়কার চিকিৎসা ব্যবস্থা এবং সাধারণ মানুষের অসহায়ত্বের চিত্র তুলে ধরে।

“লাভ অ্যান্ড লস: দ্য প্যানডেমিক ৫ ইয়ার্স অন” কেবল শোকের গল্প নয়, বরং এটি ভবিষ্যতের জন্য একটি সতর্কবার্তা। পরিচালক মনে করেন, এই ধরনের প্রামাণ্যচিত্র তৈরি করার মূল উদ্দেশ্য হলো, যাতে কোভিড-১৯ এর কারণে যারা জীবন হারিয়েছেন, তাদের কথা মানুষ ভুলে না যায়।

এই ছবি, মহামারীর সময় সরকারের নেওয়া পদক্ষেপগুলো এবং ভবিষ্যতে এমন পরিস্থিতি মোকাবিলায় কি করা উচিত, সেই বিষয়গুলো নিয়েও আলোচনা করে।

বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে যদি আমরা বিষয়টি দেখি, তাহলে এই ছবিটির গুরুত্ব আরও বাড়ে। কারণ, কোভিড-১৯ আমাদের দেশেও অনেক মানুষের জীবন কেড়ে নিয়েছে। অনেক পরিবার তাদের স্বজনদের হারিয়েছে, এবং তাদের শোক আজও গভীর। এই প্রামাণ্যচিত্র, আমাদের সেই কষ্টগুলো অনুভব করতে এবং মহামারী থেকে শিক্ষা নিতে সাহায্য করে।

তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *