যুক্তরাষ্ট্রে গর্ভবতী নারীদের কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন নিয়ে নতুন নীতিমালা তৈরি হওয়ায় বিভ্রান্তি দেখা দিয়েছে। ফেডারেল স্বাস্থ্য কর্মকর্তাদের সুপারিশ পরিবর্তনের পর, এখন অনেকেই ভ্যাকসিন নিতে গিয়ে হয়রানির শিকার হচ্ছেন। এমন পরিস্থিতিতে দেশটির বেশ কয়েকটি স্বাস্থ্য বিষয়ক সংগঠন, গর্ভবতী নারীদের জন্য এই ভ্যাকসিনের সহজলভ্যতা এবং বীমার মাধ্যমে খরচ কমানোর দাবি জানিয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের স্বাস্থ্য ও মানব পরিষেবা বিভাগের সেক্রেটারি রবার্ট এফ কেনেডি জুনিয়র সম্প্রতি ঘোষণা করেন যে, গর্ভবতী নারীদের কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন আর সুপারিশ করা হবে না। যদিও এই ভ্যাকসিন গর্ভাবস্থায় নিরাপদ এবং কার্যকরী বলেই প্রমাণিত হয়েছে। এর পরেই, ভ্যাকসিন কারা নিতে পারবে, তা নিয়ে তৈরি হয়েছে ধোঁয়াশা। স্বাস্থ্য বিষয়ক বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই পরিবর্তনের ফলে ভ্যাকসিন পেতে সমস্যা হতে পারে, এমনকি বীমা কোম্পানিগুলোও তাদের খরচ দিতে অস্বীকার করতে পারে।
বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, অনেক স্থানেই গর্ভবতী নারীদের ভ্যাকসিন দিতে অস্বীকার করা হচ্ছে। সিয়াটলের হারবারভিউ মেডিকেল সেন্টারের একজন নার্স, ৩৩ বছর বয়সী লেই হ্যাল্ডেম্যান, যিনি বর্তমানে গর্ভবতী, তিনি জানান, গত সপ্তাহে ভ্যাকসিন নেওয়ার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছেন। তিনি বলেন, তার আগের গর্ভাবস্থায় কিছু জটিলতা দেখা গিয়েছিল, তাই এই ভ্যাকসিন নিলে তার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ ছিল। কিন্তু দুটি ভিন্ন ফার্মেসিতে তাকে জানানো হয়, নতুন নির্দেশিকা অনুযায়ী গর্ভবতী নারীদের এই ভ্যাকসিন দেওয়ার সুপারিশ করা হচ্ছে না।
অন্যদিকে, আমেরিকান কলেজ অফ অবস্টেট্রিশিয়ান্স অ্যান্ড গাইনোকোলজিস্টস (American College of Obstetricians and Gynecologists) জানিয়েছে, স্বাস্থ্য বিভাগের সুপারিশে পরিবর্তন এলেও, বিজ্ঞান এখনো একই কথা বলছে। তাদের মতে, গর্ভাবস্থায় কোভিড-১৯ সংক্রমণ খুবই ভয়াবহ হতে পারে এবং মা ও শিশু উভয়ের জন্যই মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করতে পারে। কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন গর্ভাবস্থায় নিরাপদ এবং এটি গ্রহণ করলে মায়েদের পাশাপাশি তাদের শিশুদেরও সুরক্ষা নিশ্চিত করা সম্ভব।
যুক্তরাষ্ট্রের খাদ্য ও ঔষধ প্রশাসন (Food and Drug Administration) কোভিড-১৯ ভ্যাকসিনের অনুমোদন প্রক্রিয়ায় একটি নতুন কাঠামো তৈরি করেছে, যা বয়স্ক আমেরিকান এবং গুরুতর কোভিড-১৯ সংক্রমণের ঝুঁকিতে থাকা ব্যক্তিদের জন্য ভ্যাকসিন সীমাবদ্ধ করতে পারে। এমন পরিস্থিতিতে, আমেরিকান ফার্মাসিস্টস অ্যাসোসিয়েশন (American Pharmacists Association) জানিয়েছে, তারা এরই মধ্যে রোগীদের ভ্যাকসিন দিতে অস্বীকার করার খবর পেয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই ধরনের নীতি পরিবর্তনের ফলে অনেক গর্ভবতী নারী ভ্যাকসিন নিতে দ্বিধা বোধ করতে পারেন। এর ফলে মা ও শিশু উভয়ের স্বাস্থ্যঝুঁকি আরও বাড়তে পারে। কোভিড-১৯ আক্রান্ত হলে গর্ভবতী মায়েদের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (ICU) ভর্তি হওয়া বা ভেন্টিলেটরের প্রয়োজন হতে পারে, এমনকি মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। এছাড়া, সিজারিয়ান অস্ত্রোপচার, প্রি-একলাম্পসিয়া বা একলাম্পসিয়া এবং রক্ত জমাট বাঁধার মতো জটিলতাও দেখা দিতে পারে।
গর্ভবতী মায়ের কোভিড-১৯ হলে শিশুদেরও নানা রকম স্বাস্থ্য সমস্যা হতে পারে। তাই, অনেক চিকিৎসক এখনো গর্ভাবস্থায় কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন নেওয়ার জোরালো পরামর্শ দিচ্ছেন। কারণ, মায়ের শরীরে অ্যান্টিবডি তৈরি হলে তা শিশুরোগ প্রতিরোধে সাহায্য করে।
এই পরিস্থিতিতে, ভ্যাকসিন সম্পর্কে সঠিক তথ্য জানা এবং চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নেওয়া খুবই জরুরি।
তথ্য সূত্র: সিএনএন